সাংখ্য প্রবচন সুত্র ৩

    সাংখ্য আলোচনা চলতে চলতে মাঝপথে থেমে কৃষ্ণ - অর্জুন সংবাদ , এমনকি প্রেম-ভক্তির পদাবলী ও চলে এলো । এরকম কেন হয় ? একটি serious ধর্মী শুষ্ক তত্ত্ব আলোচনার মাঝে কি করে অন্য বিষয় আসতে পারে ?
       আসলে এটাই হয়। এমনটাই হয়। আমাদের সকলেরই হয়। যা যা প্রবৃত্তি বা চিন্তন এতোদিন ধরে জড়িয়ে রয়েছে, তা শুধুমাত্র মুখে বললেই শেষ হয়ে যায় না। আমরা জানি আমাদের সকলের ভেতরেই এই প্রবৃত্তির তাপ-দাহ বর্তমান।  তাকে জ্ঞান-বুদ্ধি দিয়ে অস্বীকার করার চেষ্টা করতেই পারি, কিন্তু তার থেকে সহজ হল তাকে ভোগের মাধ্যমে নিবৃত করা। যা সব ছিল মনের গভীরে এই অবসরে তা নির্গত হল। 'তেন ত্যাক্তেন ভুঞ্জিথা ' ।  ত্যাগ করতে করতে ভোগ বা ভোগ করতে করতে ত্যাগ হল।
      আমরা বলছিলাম, সাংখ্য দর্শন প্রাচীণ হলেও এর সকল রচনা প্রাচীণ নয়। এর আগে আমরা দেখেছিলাম, 'সাংখ্য কারিকা'-তে শ্রূতি বা অনান্য শাস্ত্রের উল্লেখ নেই। কিন্তু প্রবচণ সূত্রে এ কথা বলা থাকায়, এটির প্রাচীণত্ব নিয়ে সংশয় আছে।
     আবার প্রথম অধ্যায়ের ২৮ তম সূত্রে 'পাটলিপুত্র'-এর নাম  থাকায় বোঝা যায় এটি মহাভারত যুগের অনেক পরে সংকলিত।
     আবার, আমরা আলোচনা করছিলাম যে, সাংখ্য দর্শনে পুরুষ-প্রকৃতি-র কথা বলা আছে। পরম ব্রহ্ম বা ঈশ্বর নিয়ে কিছু বলা নেই।  প্রথম অধ্যায়ে 'ঈশ্বরাসিদ্ধে' অর্থাৎ [ঈশ্বর + অসিদ্ধ] বলা থাকায় মনে হতে পারে যে সাংখ্য দর্শন ঈশ্বরকে অস্বীকার করেছে।
    কিন্তু, তৃতীয় অধ্যায়ে আমরা পেলাম,
    'স হি সর্ববিদ সর্ব্বকর্তা' [ সে-ই হল সর্বজ্ঞ এবং সর্বকর্তা] । ৫৫ ।।  এবং
   ' ঈদৃশেশ্বরসিদ্ধিঃ সিদ্ধা ' [ এ ভাবেই ঈশ্বর সিদ্ধি হয়] । ৫৬ ।।
   তাহলে আমরা বলতে পারি ঈশ্বর বিষয়ক ভাবনা সাংখ্য সর্শনে অবশ্যই ছিল। তবে সাংখ্য তত্ত্ব আলোচনায় ঈশ্বর নিয়ে আলোচনার প্রয়োজন নেই।
     আমরা পূর্বের আলোচনায় দেখেছিলাম, পুরুষ বা জীবাত্মা প্রকৃতির সাথে যুক্ত অবস্থায় ভোগী [ কারন, পুরুষ কার্য করে, প্রকৃতি তার কারণ স্বরূপ]।
   'অসঙ্গোহ্যয়ং পুরুষঃ ' [১৫] । আসলে পুরুষের সঙ্গ বা ইচ্ছা কিছু নাই।  সে পদ্মপত্রে জলের মতন। ত্রিগুণের কারনে পুরুষ যুক্ত হয়ে ভোগে লিপ্ত আছেন।
  'বিচিত্র ভোগে অনুপপত্তি ' [১৭] ।  নানা বিচিত্র ভোগের পথ পেরিয়ে তার ভোগে ইচ্ছা শেষ হয়। এ-ই তার মুক্তির পথ।
    সূত্র ১৮ বলছে যে, প্রকৃতি আছে কেবল এই কারনেই পুরুষ বদ্ধ হয় না। প্রকৃতি-ও কোনও কিছুর [সংযোগের মাধ্যম] অধীন না হয়ে পুরুষকে বদ্ধ করতে পারে না। অর্থাৎ ত্রিগুণের কোনও একটা active না হলে প্রকৃতি ও পুরুষের যোগাযোগ তৈরী হয় না।
-  ক্রমশঃ

Comments

Popular posts from this blog

কঠোপনিষদ ২০

উপনিষদ পর্ব 1

মহাভারত শ্লোক