সাংখ্য প্রবচন সূত্র 5

  কর্মফল বিষয়টি পরিপাক যন্ত্রের যে উদাহরণ দিয়ে আমরা বুঝতে চাইলাম,সেটি অতি সরলীকরণ করা  হয়েছে । ঐ কর্মফলটি শরীর কেন্দ্রিক । ফল তাই শরীর ভোগ করে । শরীর পঞ্চভূতাদি ও চেতন শক্তি দিয়ে সৃষ্ট । জীবিত অবস্থায় জীব শরীর ও মন দুভাবেই এর ফল ভোগ করে ।
    এর বাইরে এমন অনেক কাজ আমরা করি যার প্রভাব আমাদের শরীর ছাড়িয়ে পারিপার্শ্বিক অন্য প্রাণ তথা চেতন সত্ত্বার  ওপর পরে । আমার কারনে ঘটা অন্যের সুখ-দুঃখের ফল আমাদের ভুগতে হয় । যা এখন ভুগে নিলাম তো মিটেই গেল, আর যা রয়ে গেল তা হল সঞ্চিত কর্মফল । যদি এ জন্মে ভোগ হল তো ভাল কথা, না হলে জমল পরের জন্মে প্রারব্ধ হয়ে ।
  " ত্রিতাপ  জ্বালা " -
 সাংখ্য কারিকা-র সূত্র শুরুর আগে "লোহিত-শুক্ল-কৃষ্ণ" এই তিন বর্ণের রজঃ-সত্ত্ব-তমঃ এই ত্রিগুণের আধার প্রকৃতিকে প্রণাম করা হয়েছে । ত্রিগুণের আলোচনা আগের দিন আমরা করেছি।
    এর পরই দুঃখ তিন প্রকার বলা হয়েছে । প্রবচন সূত্র শুরুই হচ্ছে
"ত্রিবিধ দুঃখ নিবৃত্তিরর্থ পুরুষানাম্"
 এই ত্রিবিধ দুঃখকেই ত্রিতাপ জ্বালা বলে । এদের নাম -
1। আধিদৈবিক
2। আধিভৌতিক  ও
3। আধ্যাত্মিক ।
   আগে দেখে নিই 'আধি' মানে কি ?
আমরা শুনেছি "আধি-ব্যাধি"
ব্যাধি = শরীরের ভোগ বা যন্ত্রণা ।
আধি = মনের ভোগ বা যন্ত্রণা ।
   তাহলে মানে দাড়াল,
1। আধিদৈবিক = দৈব বা প্রাকৃতিক ঝড়-বন্যা ইত্যাদি যা মানুষের নিয়ন্ত্রণে নেই তার কারনে যে যন্ত্রণা ।
2। আধিভৌতিক = মাটি,জল ইত্যাদি পঞ্চভূতের কারণে যে যন্ত্রণা ।
3। আধ্যাত্মিক = আত্ম বা আত্মিক যে যন্ত্রণা ।
   এই তিন প্রকার যন্ত্রণা হল ত্রিতাপ জ্বালা । পুরুষ বা জীবাত্মা এই তিন প্রকার জ্বালা ভোগ করে  এবং এর থেকে মুক্তি পেতে পারে ।
  সাংখ্য প্রবচনের প্রথম অধ্যায়ে (86, 162) বলা হয়েছে পুরুষ বা জীবাত্মা আসলে মুক্ত । সমস্ত প্রাকৃতিক উপাদানগুলি সংহত হয়েছে পুরুষের জন্য । পুরুষ হয় ভোগ করবে অথবা ত্যাগ করবে।
   প্রবচনের দ্বিতীয় অধ্যায়ের শুরুতেই বলা হচ্ছে,
 " বিরক্তস্য তৎসিদ্ধে " 2/1
  বারবার জন্ম মৃত্যু, রোগ -ব্যাধি যন্ত্রণা ভোগ করতে করতে যখন পুরুষ বা জীবাত্মার বিরক্তি বা বৈরাগ্য জন্মাবে তখনই সে সিদ্ধ হবে,  বা মুক্ত হবে ।
  " না শ্রবণমাত্রাতৎসিদ্ধি"
  - শাস্ত্র জ্ঞান কেবলমাত্র শ্রবণে সিদ্ধি লাভ হয় না । মুমুক্ষু হতে হবে । বিরক্তি আসতে হবে ।
- ক্রমশঃ
    

Comments

Popular posts from this blog

কঠোপনিষদ ২০

উপনিষদ পর্ব 1

মহাভারত শ্লোক