সাংখ্য দর্শন 14

  যে উদ্দেশ্য নিয়ে diary লেখার মতো করে সাংখ্য ও অন্যান্য দর্শন নিয়ে social media তে আলোচনা শুরু করা হয়েছিল তা অনেকটাই সফল বলা যেতে পারে । শ্রমদপ্তরে পরিশ্রম ও পণ্ডশ্রম করার পরে যতটুকু আত্মজিজ্ঞাসা-র অবকাশ থাকে তা একাকী শাস্ত্র পাঠে তৃপ্ত না হওয়ার ফলে গুনী, জ্ঞানী ও আগ্রহী মানুষদের অংশগ্রহণে নিজেকে আরও উন্নত করা যায় কিনা এটি পরিক্ষনীয় ছিল । মূলতঃ ভাতৃপ্রতীম সমাজরক্ষক তাপসের সৌজন্যে সুখেনবাবু, দর্শনের অধ্যাপক সুকান্তবাবু এবং প্রণববাবুর মতন অনেকেই আমার কৃতজ্ঞতা ভাজন হয়েছেন। কেউ পথ দেখাচ্ছেন, কেউ বা ভুল সংশোধন করে দিচ্ছেন, কেউ বা উৎসাহ দিচ্ছেন, আবার শ্রাবণী বা কাবেরী দেবীর  মতো কারো কারো আগ্রহী প্রশ্নে ভাবনার নব দিগন্ত উন্মোচিত হচ্ছে ।  আরো অনেকেই পরোক্ষে উৎসাহ দিচ্ছেন নানাভাবে । এই  অবকাশে আমার এই soul searching যাত্রাপথে সকল সহযাত্রীকে কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ জানাই ।
   সাংখ্য দর্শন ঈশ্বর নিয়ে কিছু বলে না,  পরমাত্মা বা পরম পুরুষ নিয়েও কিছু বলে না । শুধু পুরুষ ও প্রকৃতি । এই দুই এর পারস্পরিক সম্পর্ক । একদিকে ভোগ ও অন্যদিকে মুক্তি । মাঝে দুএর সংযোগে ভোগ এবং ক্রমশই মুক্তির পথে চলা । উপনিষদের বাণী -
  "তেন ত্যক্তেন ভুঞ্জিথা "
- ত্যাগের মাধ্যমে ভোগ । বড়ই কঠিন ভাবনা । Implementation আরও কঠিন । পুরুষ যতক্ষণ ভোগে মত্ত, ত্যাগ তার ভাবনায় নেই। যে মুহূর্তে সে প্রকৃতির সাথে তার ভেদ উপলব্ধি করে তখন তার তত্ত্ব জ্ঞান হয় । সে তখন নির্বিকার দ্রষ্টা হয়ে ওঠে । সেই স্তর থেকে ভোগ সম্পাদনের মাধ্যমেই তার এক এক করে বন্ধন ত্যাগ হতে থাকে । কর্ম বন্ধন অবশিষ্ট থাকলে জীবন্মুক্ত হয়ে সেই পুরুষ বেঁচে থাকে ।
  পুরুষ এখানে নারী -পুরুষ নির্বিশেষে জীবদেহে অবস্থিত চেতন শক্তি, যাকে সহজভাবে জীবাত্মা বলে ধারণা করতে পারি । জড় বর্গের(দ্রব্য পদার্থ ) মূল কারণ হল প্রকৃতি । 'প্রকৃতি এবং তৎ-কার্যরূপ জড়বর্গ হতে পৃথক ভাবে পুরুষ বা আত্মাকে জানতে পারলে তবেই মুক্তি '। বাচস্পতি ব্যাখ্যা করে দেখিয়েছেন পুরুষ বা আত্মা অনেক (  সূত্র 18)। নানা পুরুষ বা জীবাত্মা গুণ ভেদে  (সত্ত্ব, রজঃ, তমঃ) সুখ-দুখাদি ভোগ করে । পঞ্চভূতাদি জড় পদার্থ কার্যকর হলেও এদের মূল কারণ হল প্রকৃতি । জড়তত্ত্ব থেকে পৃথক অবস্থায় যে আত্মা অবস্থিত, প্রকৃতির থেকে পৃথক জ্ঞান না হলে পুরুষ বা আত্মা তা বুঝতে পারে না । ত্রিগুণ(সত্ত্ব, রজঃ,তমঃ) রজ্জু বা দড়ির মতো পুরুষকে প্রকৃতিতে আবদ্ধ রেখেছে । এই ত্রিগুণের কারণেই সুখ-দুঃখ বোধ । পুরুষ এর উর্ধ্বে যেতে পারলেই তার ত্রিগুণাতীত অবস্থা। এই অবস্থায় প্রকৃতি-পুরুষ ভোগের উর্ধ্বে এক supreme চেতন স্তরে অবস্থান। এক তুরীয় মুক্ত অবস্থা।
    সাংখ্য মতে কেবল পুরুষ ও প্রকৃতি নিয়ে বলা থাকলেও যেমন oxygen, hydrogen  ইত্যাদি নানা gas নিয়ে বায়ুমণ্ডল, সেরকমই নানা পুরুষ সম্মিলিত ভাবে পরমপুরুষ বা সকল জীবাত্মার accumulated রূপে পরমাত্মার ধারণা আমরা করতেই পারি ।
- ক্রমশঃ

Comments

Popular posts from this blog

কঠোপনিষদ ২০

উপনিষদ পর্ব 1

মহাভারত শ্লোক