কঠোপনিষদ ২০

তৃতীয় বল্লী
সূত্র ১৪ -১৭
 ১৪। 'উত্তিষ্ঠত জাগ্রত প্রাপ্য বরান নিবোধত
        ক্ষুরস্য ধারা নিশিতা  ...'
   স্বামী বিবেকানন্দ এই মন্ত্রটি এযুগে বিখ্যাত করেছেন। তিনি বললেন, যমদেব-এরই কথা, 'ওঠো, জাগো। বরনীয় জ্ঞানীদের কাছে গিয়ে জ্ঞানপ্রাপ্ত হও। এই পথ অতি দুর্গম, ক্ষুরের ধারের মতো তীক্ষ্ণ, দুরতিক্রম্য। জ্ঞানী গণ এমনই বলে থাকেন।
     উপনিষদের এই মন্ত্রটির যে অনুবাদ প্রচলিত আছে, সেটির সম্পর্কে একটু আলোচনা করে নিতে হবে।
বলা হল, ওঠো এবং জাগো।
এখন প্রশ্ন হল দুট,
  ১। কোথা থেকে উঠবে ? কোথা থেকে জাগবে ? এবং
  ২। আগে উঠবে, পরে জাগবে ? তা কি হয়  ?
  আমরা বলব,
  ১। অবিদ্যাতে সম্পৃক্ত জীবাত্মা যেন মোহনিদ্রায় আছে । সেখান থেকে উঠবে । অজ্ঞান নিদ্রা থেকে জাগ্রত হবে ।
  ২। নিদ্রা ভাঙ্গলেও কতক সময় ঘোর লেগে থাকে। অনেক সময় পুনরায় নিদ্রা এসে যায়। তাই যমরাজ বলছেন, ওঠো এবং সজাগ হও। আর যেন তন্দ্রাচ্ছন্ন হয়ো না।
      'বরান্‌' -এই শব্দটির অর্থ নিয়েও আমাদের কিছু কথা আছে। বলা হচ্ছে 'বরনীয় জ্ঞানীদের কাছে জ্ঞানপ্রাপ্ত হও'।
   আমরা বলতে চাই, 'নর' শব্দরূপেরর মতন 'বর' শব্দটির দ্বিতীয়ার বহুবচণ হল, 'বরান্‌'। অর্থ হল, 'বর-কে'। কর্ম-কারক। বর পাওয়া যায়, বা পাওয়া হয়েছে দেবতাদের থেকে। এই যে দেবতাদের থেকে মর্ত্য-বাসী মানবকুল (মনুর প্রজাগণ) যে সকল বরদান লাভ করেছে। যেমন এই যে নচিকেতা-কে যমরাজ, 'অগ্নিবিদ্যা' এবং 'আত্মজ্ঞান'' শিক্ষা দিলেন।
   তাহলে অর্থ কি দাড়াল ?
  'ওঠো, সজাগ বা সচেতন হও। দেবতাদের থেকে যে সকল বর লাভ করা গেছে, সে গুলিতে আত্মনিয়োগ কর'।
 
১৫। এর পরেই যমদেব বললেন, শব্দ-গন্ধ-রূপ-রস-স্পর্শের অতীত এই অনাদি অবিনাশী নিত্য ধ্রুব পরমাত্মাকে জেনে মৃত্যুমুখ থেকে মুক্ত হও।
১৬-১৭। উপনিষদের ঋষি জানাচ্ছেন, যম-নচিকেতার এই উপাখ্যান সনাতন কাহিনী।
  ---  আমরা মেনে নিতে পারি যে এই ঘটনাটি প্রকৃতপক্ষে ঘটেছিল।
--ক্রমশঃ

Comments

Popular posts from this blog

উপনিষদ পর্ব 1

মহাভারত শ্লোক