সাংখ্য প্রবচন সূত্র 2

 " প্রাত্যহিক ক্ষুৎপ্রতিকার....। 3
" সর্ব্বাসম্ভবাৎ সম্ভবে..... । 4
" উৎকর্ষাদপি মোক্ষস্য .... । 5
  যেমন ভোজনে ক্ষুধা নিবৃত হয়, তেমনই ধনাদির দ্বারা স্থুল দুঃখ নিবৃত হয়। কিন্তু সে নিবৃত্তি পরম নয়। কারণ নানা ভাবে পুনরায় নানারকম দুঃখের সৃষ্টি হয়।
  তাই প্রমাণজ্ঞ, কুশলী ও বিবেকী মানুষ  লৌকিক উপায় ত্যাগ করে শাস্ত্রীয় উপায় অবলম্বন করেন ।
  ভগবৎ গীতার 18 অধ্যায়ের 2-11 শ্লোকে ত্যাগের মাধ্যমে মোক্ষের বর্ণনা আছে ।
  কাম্যকর্মের ত্যাগকে সন্ন্যাস বলে। মোহ বশতঃ নিত্য কর্মত্যাগকে তামস ত্যাগ, কর্তব্য কর্ম কষ্টকর মনে করে ত্যাগকে রাজস ত্যাগ এবং কর্তৃত্বাভিমান ও ফলাকাঙ্খা ত্যাগ করে কর্তব্য কর্ম করাকে সাত্বিক ত্যাগ বলে।
 "যস্তু কর্মফলত্যাগী স ত্যাগীত্যভিধীয়তে"
 -  যিনি  কর্ম করেও কর্মফল ত্যাগ করেছেন তিনিই প্রকৃত ত্যাগী বলে অভিহিত হন।
   সাংখ্য 5 নং সূত্রে বলা হচ্ছে, মোক্ষ লাভ যে রাজ্যধনাদি লাভের থেকে উৎকৃষ্ট তা শ্রুতিতে বলা আছে ।
   এখানে বলা যেতে পারে এই যে শ্রুতি-র কথা বলা হল, এতে বোঝা গেল 'সাংখ্য প্রবচন সূত্র ' প্রাচীন রচনা নয় । সাংখ্য কারিকা -তে এ ধরনের reference দেওয়া নেই ।
  যাহোক, এদিকে গীতা বলছে  (4/18),
  - যিনি কর্মে অকর্ম এবং অকর্মে কর্ম দেখেন তিনিই মানুষের মধ্যে বুদ্ধিমান এবং তিনিই সকল কর্মকারী এবং যুক্ত আছেন ।
   'স যুক্ত কৃৎস্নকর্মকৃত' ।
 কোথাও কোথাও এমন ব্যাখ্যা আছে যে তিনিই যোগী এবং সর্বকর্মকর্তা। যুক্ত আছেন বলা হয়েছে, প্রকৃত যোগী যুক্ত থাকেন আবার কর্মবন্ধন ক্রমশই কাটাতে পারলেও যুক্ত হওয়া যায়।
   যিনি কর্মে অকর্ম এবং অকর্মে কর্ম দেখেন, এই কথাটির ব্যাপ্তিও বিশাল । মানুষ গোষ্ঠীবদ্ধ হয়ে বসবাস করার জন্য সমাজ এবং সমাজকে ধারণ করার জন্য সামাজিক নিয়ম চালু করেছে । সে নিয়ম মেনে কর্ম করলে সমাজের মঙ্গল । কিন্তু জীবাত্মার কিসে মঙ্গল তা সামাজিক নিয়ম মেনে কর্ম করে সবসময় বোঝা যায় না । তাই কি কর্ম এবং কি অকর্ম তা কেবল জ্ঞানী ও বুদ্ধিমান মানুষের পক্ষেই জানা সম্ভব।
      এখানে যে প্রশ্ন মনে আসা উচিত তা হল,  জ্ঞানলাভ হলেই যদি মুক্তি তাহলে মানুষ কাজ করবে কেন ?
   এই প্রশ্নই গীতার তৃতীয় অধ্যায়ে অর্জুন করছেন । কৃষ্ণ জানালেন, জগতে দুটি পথ -
  " জ্ঞানযোগেন সাংখ্যনাং কর্মযোগেন যোগিনাম্"।
একদিকে সাংখ্য,  অন্যদিকে কর্মযোগ ।
কৃষ্ণ আবার বলছেন (3/4), কর্মানুষ্ঠান না করে কেউ কর্মবন্ধন বা দায়িত্ব হতে মুক্ত হয়ে আত্মস্বরূপে প্রতিষ্ঠিত হতে পারে না ।
   কৃষ্ণ এও বলেছেন(3/5), কর্ম না করে কেউ ক্ষণকালও থাকতে পারে না। কিন্ত  (3/7),  যিনি মন দ্বারা চক্ষুকর্ণাদি ইন্দ্রিয় সংযত করে অনাসক্ত ভাবে কর্ম করেন তিনিই শ্রেষ্ঠ ।
   কৃষ্ণ এও বলেছেন  (3/9), যজ্ঞ  ( আমরা যাজ্ঞবল্ক উপনিষদ এ দেখেছি আত্মজ্ঞান হল প্রকৃত যজ্ঞ) ছাড়া অন্য কর্ম বন্ধনের কারণ ।
    পঞ্চম অধ্যায়ে কৃষ্ণ আবার বলেছেন কর্ম সন্যাস অপেক্ষা কর্ম-যোগই শ্রেয় । তবে সাংখ্য ও নিষ্কাম কর্ম একই ফল দেয়  (5/5)।
    সাংখ্য সূত্র তাই জানাচ্ছে,  কুশলী ও বিবেকী মানুষ লৌকিক উপায় ত্যাগ করে শাস্ত্রীয় উপায় অবলম্বন করেন । তাই এমন কর্ম করতে হবে এবং এমনভাবে কর্ম করতে হবে যেন ক্রমেই কর্ম-বন্ধন থেকে মুক্তি মেলে । তবেই মোক্ষ ।
   তাহলে দাড়াল কি ?
   প্রবৃত্তি ও কর্মবন্ধন -এর কারণে জন্ম হয়। জন্ম মানুষকে নানা দুঃখের মধ্যে ফেলে । দুঃখ নিবৃত্তির পার্থিব উপাদানগুলি সাময়িক ফল দিলেও সেসব স্থায়ী নয়। আত্মজ্ঞান লাভই হল দুঃখ -যন্ত্রণা থেকে মুক্তির পথ । কারণ মোক্ষ লাভ হল সর্বোচ্চ লাভ । এ লাভের পূর্বে মানুষকে কর্ম করতেই হয় । নিরাসক্ত ভাবে কর্তব্য কর্ম করলেই প্রারব্ধ তথা কর্মবন্ধন ক্ষয় হয় । নাহলে কর্মবন্ধন বৃদ্ধি হয় এবং ফলস্বরূপ জন্ম -জন্মান্তরের চক্র তথা দুঃখ-যন্ত্রনা চলতে থাকে ।
  তা বললেই তো আর নিরাসক্ত ভারে কর্ম করা যায় না । পুরুষ বা জীবাত্মা প্রকৃতিগতভাবে ত্রিগুণের অধীন। সাংখ্য তাই বলছে তত্ত্ব জ্ঞান বা তত্ত্ব সাক্ষাৎকার যার হবে তিনি ই পারবেন । কেউ জন্ম-জন্মান্তর ভোগের পথ পেরিয়ে ক্লান্ত হয়ে নিবৃত্তির পথে যাবে, আবার কুশলী, প্রমাণজ্ঞ ও বিবেকী বুদ্ধিমান মানুষ যোগাদি অভ্যাসের মাধ্যমে তার মুক্তির পথ ত্বরান্বিত করবে।
-ক্রমশঃ

Comments

Popular posts from this blog

কঠোপনিষদ ২০

উপনিষদ পর্ব 1

মহাভারত শ্লোক