সাংখ্য প্রবচন সূত্র 1

      সাংখ্য ভারতের অন্যতম প্রাচীন, মতান্তরে প্রাচীনতম দর্শন । তবে পন্ডিতরা বলেন আদি কপিল তার মা দেবাহুতি (ভাগবতে বর্ণিত )-কে যে দর্শন বুঝিয়েছিলেন তা পাওয়া যায় না। ঈশ্বর কৃষ্ণ কৃত 'সাংখ্য কারিকা '-কে প্রাচীনতম ধরা হয়। শঙ্করাচার্য একাধিক কপিল মুনি র অস্তিত্ব মেনে নিয়েছিলেন । যেমন পরম্পরাগতভাবে শঙ্করাচার্য আজও আছেন। এমনই কোনও এক বা একাধিক কপিল কর্তৃক রচিত হল 'সাংখ্য প্রবচন সূত্র '।
  'কারিকা'-র পরিপূরক বা ব্যাখ্যা হিসাবে এটি গ্রহণ করা যেতে পারে । তবে কোথাও বিরোধ হলে 'কারিকা'-কেই প্রামাণ্য ধরতে হবে ।

"অথ ত্রিবিধদুঃখাত্যন্তনিবৃত্তিরত্যন্তপুরুষার্থঃ । সূত্র  1
- 'অথ' শব্দের উচ্চারণ মঙ্গলজনক। বলা যায় এই শাস্ত্রের শুভ আরম্ভ হল।
  ত্রিবিধ দুঃখ ( আধ্যাত্মিক, আধিভৌতিক ও আধিদৈবিক ) -এর অন্ত হলে পরম পুরুষার্থ লাভ হবে । এখানে 'অত্যন্ত পুরুষার্থ ' -কে কেউ কেউ 'পরম পুরুষার্থ ' ধরেছেন । এই পরম পুরুষার্থ লাভ করাতেই মুক্তি বা মোক্ষ লাভ ধরা হয়েছে । এই পরম পুরুষকে কে কি আমরা পরমাত্মা জ্ঞান করতে পারি  ? উপনিষদে সমসাময়িক সময়ে কিন্তু এই ভাবনা এসে গিয়েছিল ।
  " না দৃষ্টা দৃষ্টাত্তং সিদ্ধি ...।  2
  - লোকবিদিত উপায়ে ( ধনাদি দ্বারা ) যে দুঃখ নিবৃত্তি হয় তা আত্যন্তিক নয়। এতে পরম বা উত্তম পুরুষ লাভ হয় না । আবার অনুরূপ অন্য দুঃখ আসে । দুঃখের মূলোচ্ছেদ হয় না । যজ্ঞাদি অন্য পদ্ধতিতে আধিদৈবিক ও আধিভৌতিক দুঃখ নিবৃত্তি হলেও মুক্তি হয় না । এমনকি গীতা( 8/16)- তে বলা হয়েছে ব্রহ্ম লোক প্রাপ্ত হলেও পুনরায় জন্ম হয়, যদি প্রবৃত্তি ও কর্মবন্ধন থাকে ।
   গীতা আরও বলেছে-
  "পুরুষ সঃ পরঃ পার্থ ভক্ত্যা লভ্যস্ত্বনন্যয়া । 8/22
  - পরঃ = পরম। সেই পরমপুরুষকে অনন্য ভক্তি দ্বারা লাভ করা সম্ভব । শঙ্করাচার্য ' অনন্য ভক্তি' অর্থে 'আত্ম জ্ঞান' ধরেছেন।
   অর্থাৎ অনন্য আত্মজ্ঞানের দ্বারা সেই পরমপুরুষ কে লাভ করা সম্ভব ।
- ক্রমশঃ

Comments

Popular posts from this blog

কঠোপনিষদ ২০

উপনিষদ পর্ব 1

মহাভারত শ্লোক