।। সাংখ্য 11 ।। অন্তিম পর্ব ।।
( সম্পূর্ণ নিজস্ব কারণে এই আলোচনার সূত্রপাত । দীর্ঘদিন পথপ্রদর্শক অন্বেষণে অকৃতকার্য হয়ে পূর্ণচন্দ্র মহাশয়ের পুস্তক হস্তগত হলে নিয়তি আদিষ্টবৎ একলব্যের ন্যায় কাল্পনিক গুরু ও সতীর্থ ধারণা করে social media তে যাত্রা শুরু করি । সমাপ্ত করে যেন নতুন করে আত্মদর্শন হল । এই দর্শন পরিক্রমায় যারা সহযাত্রী হলেন তাদের আন্তরিক কৃতজ্ঞতা জানাই ।)
সাংখ্য জানাচ্ছে -
'পুরুষস্য বিমোক্ষার্থং -' অর্থাৎ পুরুষকে মুক্ত করার জন্যই প্রকৃতি সৃষ্টি করেন । মুক্ত পুরুষের জন্য প্রকৃতি আর পুনঃ সৃষ্টি করেন না ।
বাস্তবে প্রকৃতি পুরুষার্থ সম্পাদনের নিমিত্ত ভাবাদি সৃষ্টি করে আপনাতে আপনি বদ্ধ করেন । উপযুক্ত পুরুষকে তত্ত্ব জ্ঞান প্রদান পূর্বক প্রকৃতি নিজেকে মুক্ত করেন ।
যেমন শিশুকে হাটা শেখাতে হাত ধরা হলেও সক্ষম হলে শিশু ও পিতা বাহুল্য জ্ঞানে হস্ত বন্ধন মুক্ত হয়ে অবস্থান করেন ।
তত্ত্ব সাক্ষাৎকার হলে প্রকৃতির আর কার্য থাকে না । এই অবস্থায় পুরুষ নির্মল ভাবে উদাসীনের ন্যায় প্রকৃতিকে দর্শন করেন ।
তত্ত্ব জ্ঞান লাভের পরেও প্রারব্ধ কর্ম বশত শরীর ধারণ করতে হতে পারে । কখনও পরেও জন্ম গ্রহণ করতে হয় প্রারব্ধ ক্ষালনের জন্য ।
'মা ভুক্তি ক্ষীয়তে কর্ম কল্পকোটি শতৈরপি '
- ভোগ ব্যতিরেকে কর্মের ক্ষয় কোন কালেই হয় না ।
'প্রারব্ধস্য ভোগাদেব ক্ষয় '
- তত্ত্ব জ্ঞানের দ্বারা প্রারব্ধের উচ্ছেদ হয় না । তখন তত্ত্ব জ্ঞানী জীবন্মুক্ত অবস্থায় থাকেন ।
মহামুনি কপিল, শিষ্য পরম্পরায় আসুরি, পঞ্চশিখ এবং সাংখ্য সংকলক ঈশ্বর কৃষ্ণ সকলকে প্রণাম জানিয়ে পাঠ সমাপ্ত করলাম ।
[ এই দর্শন পাঠে এই শিক্ষা লাভ হল যে, 'ঈশ্বর' বলে কেউ আছেন কিনা সাংখ্যবিদদের তা নিয়ে মাথা ব্যথা নেই। জগত্ সংসার এক system দ্বারা পরিচালিত। ঋক বেদে এই system কে 'ঋত' বলা হয়েছে। এই দর্শনে জীবাত্মা হল পুরুষ, আর তার বাইরের সমগ্র জগত্টাই হল প্রকৃতি। জীবাত্মা স্বাভাবিক বিবর্তনের প্রক্রিয়াতেই জগত্-সংসার থেকে মুক্ত হবার পথে অগ্রগামী। এই পথে জীবাত্মা, যে কিনা সর্ব কর্মের কর্তা নয়, নিজেকে কর্তা ভেবে ফেলেই জীবন-চক্রের আবর্তনে ঘুরপাক খেয়ে মরছে। জীবাত্মা যতক্ষণ জগত্-সংসারের বিষয় নিয়ে আসক্ত, প্রকৃতি ততক্ষণ সেসবের যোগানদার। শিশু যেমন খেলনা নিয়ে মত্ত, না পেলে কেঁদে কেটে একসা হয় এবং মা-বাবা সেসব খেলনা গুরুত্বহীণ জেনেও যোগান দিয়ে থাকে, সেরকমই প্রকৃতি জীবাত্মাকে বিষয়াদির যোগান দিয়ে থাকে। শিশু বড় হলে যেমন সেই খেলনার দিকে ফিরেও তাকায় না, জীবাত্মা-ও তেমনই কালের নিয়মে বিষয়াদি থেকে আকর্ষণ হারাতে থাকে।
খেলনা নিয়ে শৈশবকাল জীবাত্মার একাধিক জন্ম ধরে চলতে পারে। এই খেলায় যদি প্রারব্ধ সঞ্চয় করে তাহলে সেই প্রারব্ধ কাটাতে বহুবার জন্ম নিতে হয়। যে অবস্থায় জীবাত্মার বিষয়াদিতে আকর্ষণ চলে যেতে থাকে সেই অবস্থাকে বলে 'বিবেক খ্যাতি'।
শিশু বড় হতে থাকলে পিতা-মাতা আর খেলনার যোগান না দিয়ে তার স্বাবলম্বী হবার উপযোগী বিষয়ের যোগান দেয়, বা শিশু স্বাবলম্বী হলে মাতা-পিতা নিজেদেরকে গুটিয়ে নেন, সেরকমই প্রকৃতি ক্রমশই আত্ম-সংবরণ করতে থাকে। যেমন সকল পিতা-মাতাই চান তাদের সন্তান ক্রমে স্বাবলম্বী হয়ে উঠুক, সে রকম প্রকৃতিও চান আত্মা মুক্ত অবস্থায় আসুক। বয়স বৃদ্ধির সাথে সাথে শিশুর বিকাশ না হলে যেমন শিশু ও তার অভিভাবক উভয়েরই যন্ত্রণা, পুরুষ যদি কর্মবন্ধনে জড়িয়ে জন্ম-জন্মান্তরের চক্রে ঘুরতে থাকে তখন পুরুষ ও প্রকৃতি উভয়েরই যন্ত্রনার কারন ঘটে। অভিভাবক শিশুর বিকাশে যেরূপ শিক্ষক নিযোগ করেন, প্রকৃতিও সেরূপ মহামানবদের পাঠান জীবাত্মাদের শিক্ষাপ্রদানের জন্য।
যে জীবাত্মা আসক্তি বিহীন হয়ে মুক্তির পথে এগিয়ে যান, প্রকৃতি সে পুরুষকে হাসিমুখে মুক্ত করেন।
ভক্তিবাদের প্রবক্তারা বলেন মুক্তি-প্রয়াসী মানুষকে ঈশ্বর নানা পরীক্ষা নেন, পদে পদে বাধার সৃস্টি করেন।
এ বিষয়ে এই লেখক মনে করেন, ঈশ্বর বা প্রকৃতি, যেই নামেই তাকে ডাকা হোক না কেন, তিনি কখনই কোন বাধা সৃষ্টি করেন না। Drug Addict, Drug ছাড়তে গেলে যেমন withdrawal syndrome এর শিকার হন, এক্ষেত্রেও তেমনই হয়। প্রাথমিক কষ্ট কাটিয়ে উঠতে পারলে করুনাময়ের করুনাঘন রূপ নজরে আসে।}
।।সমাপ্ত ।।
( সম্পূর্ণ নিজস্ব কারণে এই আলোচনার সূত্রপাত । দীর্ঘদিন পথপ্রদর্শক অন্বেষণে অকৃতকার্য হয়ে পূর্ণচন্দ্র মহাশয়ের পুস্তক হস্তগত হলে নিয়তি আদিষ্টবৎ একলব্যের ন্যায় কাল্পনিক গুরু ও সতীর্থ ধারণা করে social media তে যাত্রা শুরু করি । সমাপ্ত করে যেন নতুন করে আত্মদর্শন হল । এই দর্শন পরিক্রমায় যারা সহযাত্রী হলেন তাদের আন্তরিক কৃতজ্ঞতা জানাই ।)
সাংখ্য জানাচ্ছে -
'পুরুষস্য বিমোক্ষার্থং -' অর্থাৎ পুরুষকে মুক্ত করার জন্যই প্রকৃতি সৃষ্টি করেন । মুক্ত পুরুষের জন্য প্রকৃতি আর পুনঃ সৃষ্টি করেন না ।
বাস্তবে প্রকৃতি পুরুষার্থ সম্পাদনের নিমিত্ত ভাবাদি সৃষ্টি করে আপনাতে আপনি বদ্ধ করেন । উপযুক্ত পুরুষকে তত্ত্ব জ্ঞান প্রদান পূর্বক প্রকৃতি নিজেকে মুক্ত করেন ।
যেমন শিশুকে হাটা শেখাতে হাত ধরা হলেও সক্ষম হলে শিশু ও পিতা বাহুল্য জ্ঞানে হস্ত বন্ধন মুক্ত হয়ে অবস্থান করেন ।
তত্ত্ব সাক্ষাৎকার হলে প্রকৃতির আর কার্য থাকে না । এই অবস্থায় পুরুষ নির্মল ভাবে উদাসীনের ন্যায় প্রকৃতিকে দর্শন করেন ।
তত্ত্ব জ্ঞান লাভের পরেও প্রারব্ধ কর্ম বশত শরীর ধারণ করতে হতে পারে । কখনও পরেও জন্ম গ্রহণ করতে হয় প্রারব্ধ ক্ষালনের জন্য ।
'মা ভুক্তি ক্ষীয়তে কর্ম কল্পকোটি শতৈরপি '
- ভোগ ব্যতিরেকে কর্মের ক্ষয় কোন কালেই হয় না ।
'প্রারব্ধস্য ভোগাদেব ক্ষয় '
- তত্ত্ব জ্ঞানের দ্বারা প্রারব্ধের উচ্ছেদ হয় না । তখন তত্ত্ব জ্ঞানী জীবন্মুক্ত অবস্থায় থাকেন ।
মহামুনি কপিল, শিষ্য পরম্পরায় আসুরি, পঞ্চশিখ এবং সাংখ্য সংকলক ঈশ্বর কৃষ্ণ সকলকে প্রণাম জানিয়ে পাঠ সমাপ্ত করলাম ।
[ এই দর্শন পাঠে এই শিক্ষা লাভ হল যে, 'ঈশ্বর' বলে কেউ আছেন কিনা সাংখ্যবিদদের তা নিয়ে মাথা ব্যথা নেই। জগত্ সংসার এক system দ্বারা পরিচালিত। ঋক বেদে এই system কে 'ঋত' বলা হয়েছে। এই দর্শনে জীবাত্মা হল পুরুষ, আর তার বাইরের সমগ্র জগত্টাই হল প্রকৃতি। জীবাত্মা স্বাভাবিক বিবর্তনের প্রক্রিয়াতেই জগত্-সংসার থেকে মুক্ত হবার পথে অগ্রগামী। এই পথে জীবাত্মা, যে কিনা সর্ব কর্মের কর্তা নয়, নিজেকে কর্তা ভেবে ফেলেই জীবন-চক্রের আবর্তনে ঘুরপাক খেয়ে মরছে। জীবাত্মা যতক্ষণ জগত্-সংসারের বিষয় নিয়ে আসক্ত, প্রকৃতি ততক্ষণ সেসবের যোগানদার। শিশু যেমন খেলনা নিয়ে মত্ত, না পেলে কেঁদে কেটে একসা হয় এবং মা-বাবা সেসব খেলনা গুরুত্বহীণ জেনেও যোগান দিয়ে থাকে, সেরকমই প্রকৃতি জীবাত্মাকে বিষয়াদির যোগান দিয়ে থাকে। শিশু বড় হলে যেমন সেই খেলনার দিকে ফিরেও তাকায় না, জীবাত্মা-ও তেমনই কালের নিয়মে বিষয়াদি থেকে আকর্ষণ হারাতে থাকে।
খেলনা নিয়ে শৈশবকাল জীবাত্মার একাধিক জন্ম ধরে চলতে পারে। এই খেলায় যদি প্রারব্ধ সঞ্চয় করে তাহলে সেই প্রারব্ধ কাটাতে বহুবার জন্ম নিতে হয়। যে অবস্থায় জীবাত্মার বিষয়াদিতে আকর্ষণ চলে যেতে থাকে সেই অবস্থাকে বলে 'বিবেক খ্যাতি'।
শিশু বড় হতে থাকলে পিতা-মাতা আর খেলনার যোগান না দিয়ে তার স্বাবলম্বী হবার উপযোগী বিষয়ের যোগান দেয়, বা শিশু স্বাবলম্বী হলে মাতা-পিতা নিজেদেরকে গুটিয়ে নেন, সেরকমই প্রকৃতি ক্রমশই আত্ম-সংবরণ করতে থাকে। যেমন সকল পিতা-মাতাই চান তাদের সন্তান ক্রমে স্বাবলম্বী হয়ে উঠুক, সে রকম প্রকৃতিও চান আত্মা মুক্ত অবস্থায় আসুক। বয়স বৃদ্ধির সাথে সাথে শিশুর বিকাশ না হলে যেমন শিশু ও তার অভিভাবক উভয়েরই যন্ত্রণা, পুরুষ যদি কর্মবন্ধনে জড়িয়ে জন্ম-জন্মান্তরের চক্রে ঘুরতে থাকে তখন পুরুষ ও প্রকৃতি উভয়েরই যন্ত্রনার কারন ঘটে। অভিভাবক শিশুর বিকাশে যেরূপ শিক্ষক নিযোগ করেন, প্রকৃতিও সেরূপ মহামানবদের পাঠান জীবাত্মাদের শিক্ষাপ্রদানের জন্য।
যে জীবাত্মা আসক্তি বিহীন হয়ে মুক্তির পথে এগিয়ে যান, প্রকৃতি সে পুরুষকে হাসিমুখে মুক্ত করেন।
ভক্তিবাদের প্রবক্তারা বলেন মুক্তি-প্রয়াসী মানুষকে ঈশ্বর নানা পরীক্ষা নেন, পদে পদে বাধার সৃস্টি করেন।
এ বিষয়ে এই লেখক মনে করেন, ঈশ্বর বা প্রকৃতি, যেই নামেই তাকে ডাকা হোক না কেন, তিনি কখনই কোন বাধা সৃষ্টি করেন না। Drug Addict, Drug ছাড়তে গেলে যেমন withdrawal syndrome এর শিকার হন, এক্ষেত্রেও তেমনই হয়। প্রাথমিক কষ্ট কাটিয়ে উঠতে পারলে করুনাময়ের করুনাঘন রূপ নজরে আসে।}
।।সমাপ্ত ।।
Comments
Post a Comment