সাংখ্য প্রবচন সূত্র 6
সাংখ্য আলোচনার এক বিসম্বাদ ঘটে পুরুষ ও প্রকৃতি নিয়ে আলোচনায়। সাধারণ অবস্থায় আমরা 'পুরুষ ' অর্থে ছেলে বা male ব্যক্তি ধরে নিই, আর 'প্রকৃতি ' বলতে মহিলা । এদিকে আবার 'ছেলে ' বলতে 'ব্যাটাছেলে' বুঝি। কিন্তু তা তো নয়। 'ছা' অর্থাৎ সন্তান । এর থেকে 'ছাওয়াল ', তার থেকে 'ছেলে'। ছেলে হল উভলিঙ্গ । এর দুইভাগ । ব্যাটাছেলে ও মেয়েছেলে । Faminist রা আবার আজকাল ছেলেবেলার বিপরীত 'মেয়েবেলা' শব্দটির আমদানি করেছেন ।
যাহোক সাংখ্য বা যেকোন আধ্যাত্ম শাস্ত্রে 'পুরুষ ' হল নারী-পুরুষ নির্বিশেষে জীবাত্মা । আর 'প্রকৃতি' হল Mother nature.
মনে প্রশ্ন আসতে পারে, তন্ত্র সাধনায় বা বাউল -বৈষ্ণব দের মধ্যে প্রকৃতি জ্ঞানে নারীকে সাধন সঙ্গিনী করা হচ্ছে । সেখানে তো প্রকৃতি মানে নারীই হল । এই জায়গাটা আমরা একটু বোঝার চেষ্টা করব ।
সাংখ্য হল ভারতের প্রাচীনতম দর্শন । সেখানে মূলতঃ চারটি বিষয় বা উপাদান এবং তাদের ক্রিয়া -বিক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া দিয়ে জগতকে অনুধাবন করতে চেষ্টা করা হয়েছে । সেগুলো হল-
- পুরুষ
-প্রকৃতি
-পঞ্চভূতাদি
-তন্মাত্র ।
- পঞ্চম বিষয়টি হল পরমাত্মা বা পরম ব্রহ্ম, যার উল্লেখ নেই । সেটি প্রথম চারটি উপাদানের সমাহার ।
পঞ্চভূতাদি হল ক্ষিতি (ভূমি ), অপ(জল), তেজ (আলো), মরুৎ (বাতাস ) এবং ব্যোম (আকাশ )। এই পঞ্চভূতের দ্বারা বস্তুজগৎ সৃষ্ট। সকল বস্তুতেই চেতন কণা (আমরা এখন জানি পরমাণু র ভেতরে electron ঘুরে চলেছে ) আছে, যাকে তন্মাত্র বলে।
আত্মার সাথে চেতন জগতের এবং পঞ্চভূতের সাথে প্রকৃতির সম্পর্ক। জীবাত্মা যখন শরীর ধারণ করে সে প্রকৃতির পঞ্চভূতাদির দ্বারাই সে দেহ সৃষ্ট হয়। জীবের মধ্যে তাই তন্মাত্র বা চেতন এবং পঞ্চভূতাদি বা প্রকৃতির প্রভাব থাকে । সকল মানুষের মধ্যেই তাই পুরুষ ও প্রকৃতির উপাদান থাকে । পুরুষ উপাদান বেশি থাকলে সে ছেলে এবং প্রকৃতির উপাদান বেশি থাকলে তাকে মেয়ে বলে সাধারণত ধরা হয়। প্রকৃতপক্ষে সম্পূর্ণ পুরুষ বা সম্পূর্ণ প্রকৃতি কেউই হয় না । মীরা তাই বলেছিলেন, শ্যাম (ভগবান কৃষ্ণ ) ছাড়া তিনি পুরুষ কাউকেই দেখতে পারছেন না ।
যাহোক, পুরুষ ও প্রকৃতি উভয় উপাদানই থাকে বলে বর্তমানে medical science এ sex-change করা সম্ভব হচ্ছে ।
পুরুষ বা জীবাত্মা চেতন শক্তির আধার বলে এর বিনাশ নেই । সে প্রকৃতপক্ষে মুক্ত । দেহ ধারণ করা মাত্র সে পঞ্চভূতাদির কারনে প্রকৃতির বন্ধন কে স্বীকার করে নিল । দেহ ধারণ করার প্রয়োজন (কর্মবন্ধন কাটানো ) মিটে যেতে থাকলেই সে এই বন্ধনে বিরক্ত হতে থাকে । তার আসে বৈরাগ্য । সে হয়ে পড়ে মুক্ত । বড় building বানাতে যে camp office খোলা হয়েছিল, building হওয়ার শেষে তার আর প্রয়োজন থাকে না । প্রকৃতি-ও আর পুরুষকে আটকে রাখে না । স্বাভাবিক evolution এ সকল মানুষেরই এমন হবে । তবে জ্ঞানী রা জানেন যোগ ইত্যাদির মাধ্যমে এই যাত্রা ত্বরান্বিত হয়।
তন্ত্র বা বাউল সাধনায় পুরুষ উপাদান প্রবণ মানুষটি পুরুষ জ্ঞানে এবং প্রকৃতি উপাদান প্রবণ মানুষটি নারী জ্ঞানে সাধনায় রত হন, উভয়েরই মুক্তির লক্ষ্যে ।
তাহলে, আর একটু বুঝে নিই । বিশ্ব জগতের দুটি ভাগ ।
- বস্তু জগৎ ও
- চেতন জগৎ ।
প্রশ্নোপনিষদ এই দুই সত্ত্বার নাম বলেছে, প্রাণ ও রয়ি(matter)।
বস্তূজগৎ পঞ্চভূতাদি দ্বারা সৃষ্ট । এর নিয়ন্ত্রক শক্তি হল প্রকৃতি । প্রকৃতি কে তাই শক্তি রূপে দেখা হয় ।
চেতন জগতের কার্যকর হল পুরুষ বা জীবাত্মা । এই জগতের নিয়ন্ত্রক হলেন পরমপুরুষ বা পরমব্রহ্ম ।
জীবাত্মা তার প্রারব্ধ কর্ম স্খালনের জন্য দেহ ধারণ করে । দেহ পঞ্চভূতাদি দ্বারা সৃষ্ট বলে প্রকৃতির নিয়ন্ত্রণ প্রাথমিক ভাবে থাকেই । আর পঞ্চভূতাদির মধ্যে থাকা তন্মাত্র এর মাধ্যমে চেতন জগতেও পুরুষ কার্যকরী থাকে । যে যত চেতন সম্পন্ন হতে থাকে সে ততই জ্ঞানী হয়ে পড়ে । সাংখ্য একে বিবেক জ্ঞান বা বিবেক সাক্ষাৎকার বলে। ক্রমশই অজ্ঞান বা অবিবেকি দুর হতে থাকে । প্রকৃতির প্রভাব দূর হয়ে পুরুষ আত্মজ্ঞান লাভ করতে থাকে । দেহগত বোধ, দেহগত সংস্কার সব ধীরে ধীরে চলে যেতে থাকে । যেমন আলো জ্বলে উঠলেই অন্ধকার বিদূরিত হয়।
না প্রকৃতি পুরুষকে বদ্ধ করে, না পুরুষ প্রকৃতি তে বদ্ধ হয়। জীবাত্মা তার কর্মবন্ধন মোচনে প্রকৃতির আশ্রয় নেয়। প্রকৃতি তাকে দিয়ে কাজ করিয়েও নেয়। ক্রমশই পুরুষ মুক্ত হতে থাকে । তখন প্রকৃতিই সহায়ক হয়।
সাধারণ অবস্থায় জীবাত্মা (যে পরমাত্মার অংশ মাত্র ) -র তুলনায় প্রকৃতি অনেক বেশি বলবান । তাই মুক্তি লাভের জন্য যোগাদি সাধনার কথা বলা হয়েছে । তন্ত্র এর মতন সাধনায় প্রকৃতিকে মাতৃজ্ঞানে পূজা করা হয়। সাধারণত নারীর মধ্যে প্রকৃতি উপাদান বেশি থাকায় নারীকেও মাতৃজ্ঞান করা হয়। ধরে নেওয়া হয় যে প্রকৃতির কৃপা বা সহায়তা হলে জীবাত্মা বা পুরুষ সহজে মুক্ত হবে । কুমারী পূজা একারণেই করা হয়।
পুরুষ উপাদান বেশি থাকে বলে ছেলেদের পুরুষ ধরা হয় (আসলে সকলের মধ্যেই কমবেশি পুরুষ -প্রকৃতি উভয়ই থাকে )। পুরুষ -প্রকৃতির মিলনে ( উপাদান) ভোগাদি সম্পন্ন (এই জন্যেই দেহধারণ ) হয় বলে তন্ত্র বা বাউল সাধকরা নারী -পুরুষ যৌথ সাধনায় যুক্ত হন।
জীবাত্মা একক ভাবে আত্মজ্ঞান লাভে সক্ষম । গভীরে গিয়ে দেখলে নারী-পুরুষে সামান্য কিছু biological factors ছাড়া ভেদ কিছুই নেই । প্রত্যেক নারী বা পুরুষ তার তার মতো কর্মচক্রে রত। জন্মান্তরে সংস্কার মতো নারী থেকে পুরুষ বা inter-change হতে পারে । যার যখন যেমন অনুরাগ বা attachment কমে যাবে সে তেমনই বৈরাগ্য বা detachment এর দিকে যাবে । মা যেমন সন্তানকে হাত ধরে হাঁটা শেখায়, শিখে গেলে মা ও সন্তান উভয়েই হাত ছেড়ে দেয়, প্রকৃতিও সক্ষম পুরুষকে মুক্ত করে দেয়।
যাহোক সাংখ্য বা যেকোন আধ্যাত্ম শাস্ত্রে 'পুরুষ ' হল নারী-পুরুষ নির্বিশেষে জীবাত্মা । আর 'প্রকৃতি' হল Mother nature.
মনে প্রশ্ন আসতে পারে, তন্ত্র সাধনায় বা বাউল -বৈষ্ণব দের মধ্যে প্রকৃতি জ্ঞানে নারীকে সাধন সঙ্গিনী করা হচ্ছে । সেখানে তো প্রকৃতি মানে নারীই হল । এই জায়গাটা আমরা একটু বোঝার চেষ্টা করব ।
সাংখ্য হল ভারতের প্রাচীনতম দর্শন । সেখানে মূলতঃ চারটি বিষয় বা উপাদান এবং তাদের ক্রিয়া -বিক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া দিয়ে জগতকে অনুধাবন করতে চেষ্টা করা হয়েছে । সেগুলো হল-
- পুরুষ
-প্রকৃতি
-পঞ্চভূতাদি
-তন্মাত্র ।
- পঞ্চম বিষয়টি হল পরমাত্মা বা পরম ব্রহ্ম, যার উল্লেখ নেই । সেটি প্রথম চারটি উপাদানের সমাহার ।
পঞ্চভূতাদি হল ক্ষিতি (ভূমি ), অপ(জল), তেজ (আলো), মরুৎ (বাতাস ) এবং ব্যোম (আকাশ )। এই পঞ্চভূতের দ্বারা বস্তুজগৎ সৃষ্ট। সকল বস্তুতেই চেতন কণা (আমরা এখন জানি পরমাণু র ভেতরে electron ঘুরে চলেছে ) আছে, যাকে তন্মাত্র বলে।
আত্মার সাথে চেতন জগতের এবং পঞ্চভূতের সাথে প্রকৃতির সম্পর্ক। জীবাত্মা যখন শরীর ধারণ করে সে প্রকৃতির পঞ্চভূতাদির দ্বারাই সে দেহ সৃষ্ট হয়। জীবের মধ্যে তাই তন্মাত্র বা চেতন এবং পঞ্চভূতাদি বা প্রকৃতির প্রভাব থাকে । সকল মানুষের মধ্যেই তাই পুরুষ ও প্রকৃতির উপাদান থাকে । পুরুষ উপাদান বেশি থাকলে সে ছেলে এবং প্রকৃতির উপাদান বেশি থাকলে তাকে মেয়ে বলে সাধারণত ধরা হয়। প্রকৃতপক্ষে সম্পূর্ণ পুরুষ বা সম্পূর্ণ প্রকৃতি কেউই হয় না । মীরা তাই বলেছিলেন, শ্যাম (ভগবান কৃষ্ণ ) ছাড়া তিনি পুরুষ কাউকেই দেখতে পারছেন না ।
যাহোক, পুরুষ ও প্রকৃতি উভয় উপাদানই থাকে বলে বর্তমানে medical science এ sex-change করা সম্ভব হচ্ছে ।
পুরুষ বা জীবাত্মা চেতন শক্তির আধার বলে এর বিনাশ নেই । সে প্রকৃতপক্ষে মুক্ত । দেহ ধারণ করা মাত্র সে পঞ্চভূতাদির কারনে প্রকৃতির বন্ধন কে স্বীকার করে নিল । দেহ ধারণ করার প্রয়োজন (কর্মবন্ধন কাটানো ) মিটে যেতে থাকলেই সে এই বন্ধনে বিরক্ত হতে থাকে । তার আসে বৈরাগ্য । সে হয়ে পড়ে মুক্ত । বড় building বানাতে যে camp office খোলা হয়েছিল, building হওয়ার শেষে তার আর প্রয়োজন থাকে না । প্রকৃতি-ও আর পুরুষকে আটকে রাখে না । স্বাভাবিক evolution এ সকল মানুষেরই এমন হবে । তবে জ্ঞানী রা জানেন যোগ ইত্যাদির মাধ্যমে এই যাত্রা ত্বরান্বিত হয়।
তন্ত্র বা বাউল সাধনায় পুরুষ উপাদান প্রবণ মানুষটি পুরুষ জ্ঞানে এবং প্রকৃতি উপাদান প্রবণ মানুষটি নারী জ্ঞানে সাধনায় রত হন, উভয়েরই মুক্তির লক্ষ্যে ।
তাহলে, আর একটু বুঝে নিই । বিশ্ব জগতের দুটি ভাগ ।
- বস্তু জগৎ ও
- চেতন জগৎ ।
প্রশ্নোপনিষদ এই দুই সত্ত্বার নাম বলেছে, প্রাণ ও রয়ি(matter)।
বস্তূজগৎ পঞ্চভূতাদি দ্বারা সৃষ্ট । এর নিয়ন্ত্রক শক্তি হল প্রকৃতি । প্রকৃতি কে তাই শক্তি রূপে দেখা হয় ।
চেতন জগতের কার্যকর হল পুরুষ বা জীবাত্মা । এই জগতের নিয়ন্ত্রক হলেন পরমপুরুষ বা পরমব্রহ্ম ।
জীবাত্মা তার প্রারব্ধ কর্ম স্খালনের জন্য দেহ ধারণ করে । দেহ পঞ্চভূতাদি দ্বারা সৃষ্ট বলে প্রকৃতির নিয়ন্ত্রণ প্রাথমিক ভাবে থাকেই । আর পঞ্চভূতাদির মধ্যে থাকা তন্মাত্র এর মাধ্যমে চেতন জগতেও পুরুষ কার্যকরী থাকে । যে যত চেতন সম্পন্ন হতে থাকে সে ততই জ্ঞানী হয়ে পড়ে । সাংখ্য একে বিবেক জ্ঞান বা বিবেক সাক্ষাৎকার বলে। ক্রমশই অজ্ঞান বা অবিবেকি দুর হতে থাকে । প্রকৃতির প্রভাব দূর হয়ে পুরুষ আত্মজ্ঞান লাভ করতে থাকে । দেহগত বোধ, দেহগত সংস্কার সব ধীরে ধীরে চলে যেতে থাকে । যেমন আলো জ্বলে উঠলেই অন্ধকার বিদূরিত হয়।
না প্রকৃতি পুরুষকে বদ্ধ করে, না পুরুষ প্রকৃতি তে বদ্ধ হয়। জীবাত্মা তার কর্মবন্ধন মোচনে প্রকৃতির আশ্রয় নেয়। প্রকৃতি তাকে দিয়ে কাজ করিয়েও নেয়। ক্রমশই পুরুষ মুক্ত হতে থাকে । তখন প্রকৃতিই সহায়ক হয়।
সাধারণ অবস্থায় জীবাত্মা (যে পরমাত্মার অংশ মাত্র ) -র তুলনায় প্রকৃতি অনেক বেশি বলবান । তাই মুক্তি লাভের জন্য যোগাদি সাধনার কথা বলা হয়েছে । তন্ত্র এর মতন সাধনায় প্রকৃতিকে মাতৃজ্ঞানে পূজা করা হয়। সাধারণত নারীর মধ্যে প্রকৃতি উপাদান বেশি থাকায় নারীকেও মাতৃজ্ঞান করা হয়। ধরে নেওয়া হয় যে প্রকৃতির কৃপা বা সহায়তা হলে জীবাত্মা বা পুরুষ সহজে মুক্ত হবে । কুমারী পূজা একারণেই করা হয়।
পুরুষ উপাদান বেশি থাকে বলে ছেলেদের পুরুষ ধরা হয় (আসলে সকলের মধ্যেই কমবেশি পুরুষ -প্রকৃতি উভয়ই থাকে )। পুরুষ -প্রকৃতির মিলনে ( উপাদান) ভোগাদি সম্পন্ন (এই জন্যেই দেহধারণ ) হয় বলে তন্ত্র বা বাউল সাধকরা নারী -পুরুষ যৌথ সাধনায় যুক্ত হন।
জীবাত্মা একক ভাবে আত্মজ্ঞান লাভে সক্ষম । গভীরে গিয়ে দেখলে নারী-পুরুষে সামান্য কিছু biological factors ছাড়া ভেদ কিছুই নেই । প্রত্যেক নারী বা পুরুষ তার তার মতো কর্মচক্রে রত। জন্মান্তরে সংস্কার মতো নারী থেকে পুরুষ বা inter-change হতে পারে । যার যখন যেমন অনুরাগ বা attachment কমে যাবে সে তেমনই বৈরাগ্য বা detachment এর দিকে যাবে । মা যেমন সন্তানকে হাত ধরে হাঁটা শেখায়, শিখে গেলে মা ও সন্তান উভয়েই হাত ছেড়ে দেয়, প্রকৃতিও সক্ষম পুরুষকে মুক্ত করে দেয়।
Comments
Post a Comment