কঠোপনিষদ ১১

 সূত্র  ৫- ৮
 ৫। যমদেব বললেন, যারা অবিদ্যার মধ্যে অবস্থান করে নিজেকে ধীর বা বুদ্ধিমান মনে করে তারা হলেন মূঢ বা মূর্খ। এরা অন্ধের মতো সংসারে পরিভ্রমণ করে।
  ৬।  ধনাদি মোহে প্রমাদী বা অজ্ঞানী লোক মনে করে, 'অয়ং লোকো নাস্তি পর', এই জগতই সত্য, পরলোক বলে কিছু নেই। এরা বারবার জন্মমৃত্যুর বশে থাকে।
 --- অর্থাত্‌ আত্‌মজ্ঞান না হলে বারবার জন্ম-মৃত্যু চলতে থাকে। আত্‌মজ্ঞানী-ই কেবল এই জগতের বাইরে পরলোকের বিষয়ে অনুধাবন করতে পারে।
  ৭। এই আত্‌মজ্ঞান বহুজনের শোনার জন্য লভ্য নয়, শুনলেও বহুলোকের বোধগম্য নয়। কেবল কুশলী জ্ঞানীর কাছ থেকে কুশল ব্যাক্তিই একে লাভ করতে পারে।
  ---  এ তো আমরা জানি। সত্য বা জ্ঞান সকলের জন্য নয়। সকলে একে কানে তোলে না। যদি বা শুনতে পায়ও এর অর্থ অনুধাবন করতে পারে না। দ্রোণ সকলকেই অস্ত্রশিক্ষা দিলেও অর্জুন সবাই হয় না।
   এই আত্‌মজ্ঞান সকলে জানতে পারে না। জানতে পারলেও বুঝতে পারে না। জানতে-বুঝতে পারলেও সবাই এ জ্ঞান প্রকাশ করতে পারে না।
 ৮। 'অবরেণ নরেণ প্রোক্ত'।
      অযোগ্য/অল্পজ্ঞানী লোক দ্বারা বলা হলে এ বিদ্যা বোঝা সম্ভব নয়। প্রকৃত জ্ঞানীর থেকে না জানলে এই সূক্ষ বিষয়ে অগ্রসর হওয়া যায় না।
   'গতিরত্র নাস্ত্যণীয়ান্‌ ' = অণীয়ান্‌ অত্র গতি ন অস্তি = সূক্ষ বিষয়ে গতি পাবে না।
 --- 'অবরেণ' শব্দের একটি অর্থ হল হীন প্রাকৃত বুদ্ধি অর্থাত্‌ যার ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য প্রকৃতিতে বুদ্ধি নিবিষ্ট। প্রকৃতি-র অতীত তত্ত্বের জ্ঞান যার নেই তিনি প্রাকৃতবুদ্ধি। এরূপ ব্যিক্তি আত্‌মজ্ঞানী নন, তাই অন্যকে বলার যোগ্য-ই নয়। তাহলে এ প্রশ্ন আসবে যে, 'অবরেণ' ব্যক্তি আত্‌মজ্ঞান জানবে কি প্রকারে ? এমন হতেই পারে সে কোন প্রকৃত জ্ঞানীর কাছ থেকে জেনেছে, কিন্তু সম্যক অনুধাবন করে উঠতে পারে নি। এরূপ ব্যাক্তির থেকে জেনে কারোর পক্ষেই প্রকৃত জ্ঞানলাভ সম্ভব নয়।
  'অনন্য প্রোক্তে গতিরথ নাস্তি' -
  'অনন্য' বলতে যিনি আত্‌মাকে ব্রহ্মজ্ঞান করে ব্রহ্মজ্ঞানী হয়েছেন। অর্থাত্‌ তিনি ও ব্রহ্ম একাকার হয়েছেন। এরূপ একাত্ম ব্রহ্মজ্ঞানী যদি বলেন, তবেই হবে। এছাড়া পথ নেই।
-ক্রমশঃ 

Comments

Popular posts from this blog

কঠোপনিষদ ২০

উপনিষদ পর্ব 1

মহাভারত শ্লোক