কঠোপনিষদ ৯

প্রথম অধ্যায় - দ্বিতীয় বল্লী ।
   সূত্র - ১
     তৃতীয় বর তথা আত্মজ্ঞান প্রদানে উদ্দত যমদেব নচিকেতাকে বললেন,
পথ দুটি; শ্রেয়ঃ এবং প্রেয়ঃ। উভয় পথের ফল ভিন্ন। তবে উভয় পথই বন্ধনে আবদ্ধ করে। যে ব্যাক্তি শ্রেয়ঃ বা কল্যাণকর পথ গ্রহণ করে তার মঙ্গল হয়। যে প্রেয়ঃ বা প্রিয়জনক পথ গ্রহণ করে সে যথার্থ লাভ থেকে ভ্রষ্ট হয়।
    শত শত বছর ধরে বহু আলোচনা হয়েছে, এই উপনিষদের শ্রেয়ঃ এবং প্রেয়ঃ -কে নিয়ে। নানা পন্ডিত নানা দিক উল্লেখ করেছেন।
     আমরা সাধারন মানুষ সবসময় বুঝতে পারি না কিসে আমাদের মঙ্গল। যা আমাদের কাছে পছন্দের বা প্রিয়, তাকে প্রেয়ঃ বলে। আর যাতে আখেরে আমার মঙ্গল, সেটি হল শ্রেয়ঃ।
     বিশেষভাবে ধরে নেওয়া হয়েছে, যে পথ মুক্তির দিকে নিয়ে যায় সেটি হল শ্রেয়। আর যে পথ ইহলোকের ভোগের দিকে নিয়ে যায়, সেটি হল প্রেয় পথ।
    কেউ কেউ বলেছেন, সাধনার দুটি পথ। একটি পার্থিব যশ, ঐশর্যাদি লাভের। এটি প্রেয় পথ।
অপরটি মুক্তি বা মোক্ষের পথ।
   কিন্তু এই কথাটায় এসে দ্বন্দ্ব হচ্ছে, যে উভয় পথ-ই বন্ধনের কারন। উভয়ই যদি বন্ধনের কারন হয়ে থাকে, তাহলে শ্রেয়ঃ পথে মুক্তি কিভাবে সম্ভব ?
   এ প্রশ্নের যথাযথ উত্তর পাওয়া যায় নি। আমরা এরকমভাবে ভেবে নিতে পারি যে, কর্ম এবং তার ফল; এবং বাসনা হল আমাদের কর্ম-বন্ধনের কারন।  যে কর্ম-ফলগুলি আমরা এক জন্মে ভোগ করি, সেগুলি থেকে আমাদের মুক্তি ঘটে। যেগুলি ভোগ করা হয়ে ওঠে না, সেগুলি থেকে যায় সঞ্চিত কর্ম রূপে। পূর্ব-জন্মের সঞ্চিত কর্মের যে অংশটুকু এ জন্মে সামনে এসে পরে, সেটি হল প্রারব্ধ কর্ম। এই প্রারব্ধ কর্ম যেভাবে আমরা face করব, তার উপর নির্ভর করে, আমাদের সেই প্রারব্ধ থেকে মুক্তি হল, নাকি সেখান থেকে নতুন কর্ম-বন্ধন সৃষ্টি হল।
    এবার আমার সামনে যে কর্ম-বন্ধন জনিত কর্মগুলি প্রারব্ধ রূপে এসে উপস্থিত হল, আমি যদি শ্রেয় পথ গ্রহণ করি তাহলে মুক্তির পথে যেতে পারব, আর যদি প্রেয় পথ ধরি তাহলে নতুন কর্মবন্ধনে জরিয়ে পরব।
    তাহলে মূলত শ্রেয় এবং প্রেয়, এই দুই পথই আসলে কর্ম-বন্ধনের কারনে এসে উপস্থিত হয়েছে আমার সামনে। এখন আমাকেই ঠিক করতে হবে যে, আমি কর্ম-বন্ধন কাটাতে কাটাতে এগিয়ে যাব, নাকি এতে নিমজ্জিত হয়ে আরও বন্ধনে জরিয়ে পরব।
     শ্রেয় পথ মূলত একাকী চলার পথ, তাই এতে পারিপার্শ্বিক মানুষের জরিয়ে পরার সম্ভাবনা কম থাকে। যদিও বা দেখা যায় কাউকে, তাহলে বুঝে নিতে হবে সে তার কর্ম-বন্ধনের কারনে এসেছে। এপথে উভয়েরই বন্ধন কেটে যাবার জন্য এই মুলাকাত।
    প্রেয় পথে অন্য মানুষদের সাথে নানা বিচিত্র বন্ধনে জরিয়ে পরার সম্ভাবনা থেকে যায় ষোল-আনা।
  এখন মুশকিল হল নিকটস্থ ভোজ-সুখ ছেড়ে কজনই বা আর অনিশ্চিত কষ্টসাধ্য বিষয়ে প্রবৃত্ত হয়। তাই যম দেব শ্রেয় কর্মের পথ ধরতে বলেছেন ।
-ক্রমশ

Comments

Popular posts from this blog

কঠোপনিষদ ২০

উপনিষদ পর্ব 1

মহাভারত শ্লোক