কঠোপনিষদ 7

সূত্র  20 - 25
  যমদেব, গোপন সাধন পদ্ধতি লৌকিক ভাবেই, একজন গুরু যেমন শিষ্যকে শিক্ষা দেন সেভাবেই শেখালেন । শিষ্যের উৎকর্ষতা দেখে পার্থিব উপহারও দিলেন ।
  জানা গেল এই অগ্নিবিদ্যার চর্চায় শোক-তাপ-মৃত্যুভয় রহিত হওয়া যায় । স্বর্গলোকের বাসিন্দারা এসব চর্চা করেই জরা-ব্যাধিহীন আনন্দময় জীবন যাপন করেন। এই বিদ্যা এতোদিন গোপন ছিল । যমদেবের থেকে শিক্ষা নিয়ে নচিকেতা, এটি মানব গোষ্ঠীতে প্রচলন করবেন । 'নাচিকেত অগ্নিবিদ্যা' নামে এটি খ্যাত হবে।
   মনে রাখতে হবে শুধু বাহ্যিক উপাচার পালনে যজ্ঞ কার্য সম্পূর্ণ হয় না । ফলে আজকাল যজ্ঞাদি ক্রিয়াতে ফললাভ ও হয় না । মন্ত্রাদি, শ্বাস ক্রিয়া সঠিকভাবে পালনীয় ।
    কঠোপিষদ আলোচনায় সর্বত্র তৃতীয় বর অর্থাত্‌ আত্মতত্ত্ব নিয়েই আলোচনা হয়। কিন্তু দ্বিতীয় বরটিও যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ। যমদেব স্বীকার করেছেন এই অগ্নিবিদ্যা চর্চা করেই দেবতারা দেবতা হয়েছেন। এর প্রকৃত চর্চা বা সাধনার দ্বারাই চিত্ত-বৃত্তিতে control আসে। ষড় রিপু এবং অষ্টপাশ থেকে মুক্ত হবার উপায় আছে এই অগ্নি বিদ্যায়। এই উপাসনায় যিনি সাফল্য লাভ করেছেন তিনি আত্মতত্ত্ব জানবার অধিকারী।
   যাহোক, নচিকেতা স্বর্গলোকের গোপন অগ্নিবিদ্যা প্রাপ্ত হয়েও থামলেন না । তৃতীয় বর যা চাইলেন, তাতে যমরাজ বেশ বিব্রত হলেন ।
সূত্র  20 -25
  তৃতীয় বরে নচিকেতা জানতে চাইলেন, মৃত্যুর পর আত্মার অস্তিত্ব থাকে কিনা,  এই আত্মতত্ত্ব তাকে জানান হোক ।
  যমদেব বললেন ' দেবৈরত্রাপি বিচিকিৎসিতং পুরা '
অর্থাৎ পূর্বে এবিষয়ে দেবতাদেরও অনেক সংশয় ছিল । এটি অত্যন্ত সূক্ষ্ম বিষয়, মোটেই সহজবোধ্য নয় । নচিকেতা যেন অন্য বর প্রার্থনা করে ।
  তাহলে আমরা দেখতে পাচ্ছি দেবতারাও প্রথমে আত্ম বিদ্যা কিছু জানত না । ক্রমে এই বিদ্যা অর্জন করেছেন । ভগবান না ভেবে এক বিশেষ জনগোষ্ঠী জ্ঞান করলে দেবতাদের সম্পর্কে এই তথ্যটি বুঝতে সুবিধা হবে ।
    দেবগোষ্ঠিরা যে সংস্কৃতি গড়ে তুলেছিলেন, তা অনেকটা এরকম [ আর্য দিগন্তে...।]।
- প্রথম যিনি ঋক বেদোক্ত 'পরম ব্রহ্ম' বা 'ব্রহ্মণস্পতি' -কে জ্ঞাত হয়েছিলেন তিনি হলেন আদি পিতা 'ব্রহ্মা'।
- দেব-দৈত্য-দানব-মানব এই চার গোষ্ঠীর মাথা বলে, ব্রহ্মা 'চতুর্মুখ'।
- কাশ্মীর-হিমাচল-উত্তরাখন্ড এই অঞ্চল জুড়ে এই 'আদি আর্য সংস্কৃতি'-র উদ্ভব ও বিকাশ।
- এর নিম্নবর্তী অঞ্চলে বিস্তার লাভের জন্য বিভিন্ন মনু দ্বারা বসতি স্থাপন করা হয়েছিল।
-  সমতলে আদি অধিবাসীদের সাথে সংঘর্ষের কাহিনী ঋক বেদের পাতায় পাতায়।
- সপ্তম মনু বিবস্বান পুত্র 'বৈবস্বত'-র বংশধররা হলেন সূর্য বংশের রাজা। এদের মধ্যে বিখ্যাত কয়েকজন হলেন মান্ধাতা, হরিশচন্দ্র, রাম।
- এক দেবতা সোম এর বংশ হল চন্দ্র বংশ। বিখ্যাত হলেন যযাতি, কুরু-পান্ডব, যদুবংশ।
হিমালয়ের মূল কেন্দ্র হল ভৌম-স্বর্গ। এর দখল নিয়ে দেব-দৈত্য-দানবদের মধ্যে লড়াই। দেবতারা ক্রমেই এ অঞ্চলের দখন নিয়ে নেন।
-  সমতলে colony অঞ্চলে যুদ্ধ হলে সাহায্য করতেন প্রথমদিকে দেবরাজ ইন্দ্র।
- পরে সমতলে জনবিস্তার হলে দেবলোকে আসা-যাওয়া restricted হয়ে যায়।
- সে সময়ে মুনি-ঋষিদের মাধ্যমে যোগাযোগ বজায় রাখা হত।
- মুনি-ঋষি দের এবং দেবতাদের উদ্দোগে দেবলোক বা ভৌম-স্বর্গে নানা বিদ্যার (পরা ও অপরা) প্রবর্তন হয়।
- মর্ত্য বা সমতলবাসীরা নানা কারনে দেবতাদের আরাধনা করে এসব বিদ্যা অর্জন করতে চাইতেন। তুষ্ট দেবতারা  অনেককেই বর দান করতেন। অর্থাত্‌ ঈপ্সিত প্রার্থণা পূরন করতেন।
- শিব বা মহাদেবের পৃথক গণ ছিল। আর্য-অনার্য, দেব-অসুর নির্বিশেষে সকলেই কৃপা লাভ করত।
- ব্রহ্মা, ইন্দ্র, বিষ্ণু এই পদ্গুলিতে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন ব্যক্তি দায়িত্ব নিয়েছেন। সাধারনত যোগ্যতা বিচার করে দায়িত্ব দেয়া হত। কিছু অযোগ্য লোকের কারনে ইন্দ্রপদ অনেক বদনামের ভাগী হয়ে পরে।
- দেবলোকের বিদ্যাচর্চার লিখিত document আমাদের কাছে নেই বলে অনেককিছুই রহস্য রয়ে গেছে। যেমন, পাণিনি, কলাপ বা যাস্কের অনেক আগে 'ঐন্দ্র ব্যাকরণ'-এর নাম পাওয়া যায়। হয়ত কোন এক ইন্দ্র এর সংকলক।
     যাইহোক দেবলোকে এক উন্নত সংস্কৃতির বিকাশ ঘটেছিল, এ বিষয়ে সন্দেহ নেই।  আর অতোদিন আগে নানা বন্য মানুষদের থেকে রক্ষা করার জন্য border security হিসাবে যমদেবের বাহিনী ছিল এটা আমরা ধরে নিয়েছি। দলপতি যম একাধারে জ্ঞানী ও কালান্তক। যোগ্যের কাছে তিনি ধর্ম-স্বরূপ, আর দুষ্টের কাছে মৃত্য।
-ক্রমশঃ

Comments

Popular posts from this blog

কঠোপনিষদ ২০

উপনিষদ পর্ব 1

মহাভারত শ্লোক