Posts

Showing posts from May, 2017

সাংখ্য প্রবচন সূত্র 6

 সাংখ্য আলোচনার এক বিসম্বাদ ঘটে পুরুষ ও প্রকৃতি নিয়ে আলোচনায়। সাধারণ অবস্থায় আমরা 'পুরুষ ' অর্থে ছেলে বা male ব্যক্তি ধরে নিই, আর 'প্রকৃতি ' বলতে মহিলা । এদিকে আবার 'ছেলে ' বলতে 'ব্যাটাছেলে' বুঝি। কিন্তু তা তো নয়। 'ছা' অর্থাৎ সন্তান । এর থেকে 'ছাওয়াল ', তার থেকে 'ছেলে'। ছেলে হল উভলিঙ্গ । এর দুইভাগ । ব্যাটাছেলে ও মেয়েছেলে । Faminist রা আবার আজকাল ছেলেবেলার বিপরীত 'মেয়েবেলা' শব্দটির আমদানি করেছেন ।   যাহোক সাংখ্য বা যেকোন আধ্যাত্ম শাস্ত্রে 'পুরুষ ' হল নারী-পুরুষ নির্বিশেষে জীবাত্মা । আর 'প্রকৃতি' হল Mother nature.     মনে প্রশ্ন আসতে পারে, তন্ত্র সাধনায় বা বাউল -বৈষ্ণব দের মধ্যে প্রকৃতি জ্ঞানে নারীকে সাধন সঙ্গিনী করা হচ্ছে । সেখানে তো প্রকৃতি মানে নারীই হল । এই জায়গাটা আমরা একটু বোঝার চেষ্টা করব ।    সাংখ্য হল ভারতের প্রাচীনতম দর্শন । সেখানে মূলতঃ চারটি বিষয় বা উপাদান  এবং তাদের ক্রিয়া -বিক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া দিয়ে জগতকে অনুধাবন করতে চেষ্টা করা হয়েছে । সেগুলো হল- - পুরুষ -প্রকৃতি -পঞ্চভূতাদি -তন্মাত্র ।...

সাংখ্য প্রবচন সূত্র 5

  কর্মফল বিষয়টি পরিপাক যন্ত্রের যে উদাহরণ দিয়ে আমরা বুঝতে চাইলাম,সেটি অতি সরলীকরণ করা  হয়েছে । ঐ কর্মফলটি শরীর কেন্দ্রিক । ফল তাই শরীর ভোগ করে । শরীর পঞ্চভূতাদি ও চেতন শক্তি দিয়ে সৃষ্ট । জীবিত অবস্থায় জীব শরীর ও মন দুভাবেই এর ফল ভোগ করে ।     এর বাইরে এমন অনেক কাজ আমরা করি যার প্রভাব আমাদের শরীর ছাড়িয়ে পারিপার্শ্বিক অন্য প্রাণ তথা চেতন সত্ত্বার  ওপর পরে । আমার কারনে ঘটা অন্যের সুখ-দুঃখের ফল আমাদের ভুগতে হয় । যা এখন ভুগে নিলাম তো মিটেই গেল, আর যা রয়ে গেল তা হল সঞ্চিত কর্মফল । যদি এ জন্মে ভোগ হল তো ভাল কথা, না হলে জমল পরের জন্মে প্রারব্ধ হয়ে ।   " ত্রিতাপ  জ্বালা " -  সাংখ্য কারিকা-র সূত্র শুরুর আগে "লোহিত-শুক্ল-কৃষ্ণ" এই তিন বর্ণের রজঃ-সত্ত্ব-তমঃ এই ত্রিগুণের আধার প্রকৃতিকে প্রণাম করা হয়েছে । ত্রিগুণের আলোচনা আগের দিন আমরা করেছি।     এর পরই দুঃখ তিন প্রকার বলা হয়েছে । প্রবচন সূত্র শুরুই হচ্ছে "ত্রিবিধ দুঃখ নিবৃত্তিরর্থ পুরুষানাম্"  এই ত্রিবিধ দুঃখকেই ত্রিতাপ জ্বালা বলে । এদের নাম - 1। আধিদৈবিক 2। আধিভৌতিক  ও 3। আধ্যাত্...

সাংখ্য প্রবচন সূত্র 4

  আমার senior, একজন সম্মানিত ব্যক্তি ন্যয্যতঃ  বলেছেন যে বেশ কিছু শব্দের ব্যবহার করা হচ্ছে,  যাদের সম্পর্কে একটু বিস্তারিত বলে নিলে আলোচনাতে অধিক আগ্রহ হতে পারে । তার আদেশ শিরোধার্য করলাম । ক্ষুদ্র সামর্থ্য মতো চেষ্টা করা হল এখানে । শব্দগুলি হল -   - ত্রিকাল   - ত্রিতাপ   - ত্রিগুণ   - প্রারব্ধ  ইত্যাদি ।    সাধারণ বুদ্ধিতে আমরা জানি অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যত এই হল তিন কাল। আজ যে সময়ে আছি সেটি বর্তমান, যে সময় চলে গিয়েছে সেটি অতীত এবং যে সময় আসবে সেটি হল ভবিষ্যত কাল। যিনি এই তিন কাল-কে জানেন তাকে ত্রিকালজ্ঞ বলে।     এইখানে এসে সমস্যা শুরু হল। চেষ্টা করলে অতীত কালকে জানা গেলেও ভবিষ্যত কালকে কিভাবে জানা সম্ভব ? আমাদের প্রাচীন মুনি-ঋষিরা তাদের নানা শাস্ত্র আলোচনায় বলেছেন যে জানা  সম্ভব । আসলে সময়কে আমরা যেভাবে অনুভব করি সেভাবে সম্ভব নয়। যেমন পৃথিবীতে বসে সেটি সূর্যের চারদিকে ঘুরছে অনুভব করা সম্ভব নয় । এটি অনুধাবন করতে বিশেষ জ্ঞান ও প্রজ্ঞার প্রয়োজন । তেমনই সময়কে অনুধাবনে জন্য বিশেষ প্রজ্ঞাবান হতে হবে । আসলে সময় নাকি গতিশী...

সাংখ্য প্রবচন সুত্র ৩

    সাংখ্য আলোচনা চলতে চলতে মাঝপথে থেমে কৃষ্ণ - অর্জুন সংবাদ , এমনকি প্রেম-ভক্তির পদাবলী ও চলে এলো । এরকম কেন হয় ? একটি serious ধর্মী শুষ্ক তত্ত্ব আলোচনার মাঝে কি করে অন্য বিষয় আসতে পারে ?        আসলে এটাই হয়। এমনটাই হয়। আমাদের সকলেরই হয়। যা যা প্রবৃত্তি বা চিন্তন এতোদিন ধরে জড়িয়ে রয়েছে, তা শুধুমাত্র মুখে বললেই শেষ হয়ে যায় না। আমরা জানি আমাদের সকলের ভেতরেই এই প্রবৃত্তির তাপ-দাহ বর্তমান।  তাকে জ্ঞান-বুদ্ধি দিয়ে অস্বীকার করার চেষ্টা করতেই পারি, কিন্তু তার থেকে সহজ হল তাকে ভোগের মাধ্যমে নিবৃত করা। যা সব ছিল মনের গভীরে এই অবসরে তা নির্গত হল। ' তেন ত্যাক্তেন ভুঞ্জিথা ' ।   ত্যাগ করতে করতে ভোগ বা ভোগ করতে করতে ত্যাগ হল।       আমরা বলছিলাম, সাংখ্য দর্শন প্রাচীণ হলেও এর সকল রচনা প্রাচীণ নয়। এর আগে আমরা দেখেছিলাম, 'সাংখ্য কারিকা'-তে শ্রূতি বা অনান্য শাস্ত্রের উল্লেখ নেই। কিন্তু প্রবচণ সূত্রে এ কথা বলা থাকায়, এটির প্রাচীণত্ব নিয়ে সংশয় আছে।      আবার প্রথম অধ্যায়ের ২৮ তম সূত্রে ' পাটলিপুত্র' -এর নাম  থাকায় বোঝা যায় এটি...

অর্জুন - কৃষ্ণ সংবাদ 3

   অর্জুন আর কৃষ্ণ দুজনেই সমবয়সী । একই বছরে জন্ম। দুজনেই রাজবংশের সন্তান । অথচ জন্ম হল রাজধানী থেকে দূরে । একজন উত্তরাখণ্ডের বনবাসে এবং অন্যজন গোয়ালাদের মাঝে। ক্ষত্রিয় কর্ম-প্রারব্ধ তাদের দুই শ্রেষ্ঠ ন্যায়নিষ্ঠ বীর হিসাবে মনে রেখেছে হাজার হাজার বছর ধরে ।   বীর তো দুর্যোধনও ছিলেন, কর্ণও ছিলেন। ভীষ্ম, দ্রোণ আর ভীম, অশ্বথ্বামাও মহান বীর ছিলেন । তাহলে অর্জুন-কৃষ্ণ কোথায় special  ?   জীবনের অন্তে সর্গারোহণ পথে অর্জুন যখন মৃত হলেন, যুধিষ্ঠীর বলেছিলেন, অর্জুন পরিহাসছলেও কখনও মিথ্যা কথা বলেননি । কে বলছেন ? যাকে সবাই 'সত্যবাদী যুধিষ্ঠির' বলে এবং যিনি দ্রোণকে পরাস্ত করতে মিথ্যার আশ্রয় নিয়েছিলেন ।   ভাইদের দেওয়া কথা  (দ্রৌপদী issue তে, মনে রাখতে হবে দ্রৌপদীকে তিনি সয়ম্বরে একা লড়ে অর্জন করেছিলেন ) এক ব্রাহ্মণের স্বার্থরক্ষায় ভঙ্গ করে 12 বছর একাকী চলে গেলেন। ফিরলেন পাশুপত অস্ত্র এবং স্বর্গে দেবতাদের হয়ে যুদ্ধ করে নিবাত-কবচ , কালকেয়দের পরাস্ত করে অনেক অস্ত্র-শস্ত্র নিয়ে । সত্য রক্ষা করলেন এবং negative situation কে positively gain করে ফিরে এলেন ।   কৃষ্ণ ...

অর্জুন - কৃষ্ণ সংবাদ ২

      দ্রৌপদীর স্বয়ংবর সভা শেষে ৫ ছদ্মবেশী ব্রাহ্মণকে অনুসরণ করে কৃষ্ণ তার পিসতুতো ভাই পান্ডবদের দেখা পেলেন। এর আগে বারনাবতের জতুগৃহ থেকে এদের খোঁজ করছিলেন। পান্ডবরা এ পর্যন্ত বিশেষ কিছু করে উঠতে না পারলেও কৃষ্ণ কংসকে বধ করে যদুবংশে আবার গণতন্ত্র ( নামমাত্র উগ্রসেন রাজা) স্থাপন করেছেন। বিনিময়ে জরাসন্ধ ২১ বার মথুরা আক্রমণ করায় ( প্রতিবার কুরুক্ষেত্র যুদ্ধের মোট সৈন্যের থেকে বেশী সৈন্য নিয়ে)। ফলতঃ দ্বারকাতে নতুন করে বসতি স্থাপন করতে হয়েছে। সবই কৃষ্ণের নেতৃত্বে।      ইন্দ্রপ্রস্থ স্থাপন করতে কৃষ্ণ যখন হস্তিনাপুরে তখন পার্শ্ববর্তী অসুর রাজা দ্বারকা তছনছ করে দিয়ে গেছে। ফিরে এসে সেই লড়াই নিয়ে এতো ব্যস্ত হয়ে পড়লেন যে পাশাখেলার সময় থাকতে পারলেন না। দ্রৌপদীর গঞ্জনাও শুনতে হল এর দরুন। এছাড়াও নরকাসুর, মুচকুন্দ ইত্যাদি কতোজনের সাথে যে কৃষ্ণকে লড়াই করতে হল ( রুক্মিনী কে বিবাহ জনিত লড়াই, সমন্তক মণি নিয়ে লড়াই - এসব ছোটখাটো লড়াই বাদ-ই দিলাম) তার বিবরণ ভাগবতে বা হরিবংশে পাওয়া যায়।      কই, কোনও লড়াইতে তো পান্ডবদের কৃষ্ণের পাশে দেখা গেল না। বলা যেতে পারে পা...

অর্জুন - কৃষ্ণ সংবাদ 1

  কুরুক্ষেত্রে স্বজন পরিবৃত অর্জুন বললেন, " এতান্ন হন্তুমিচ্ছামি ...কিং নু মহীকৃতে । 1/34 - যদি এরা আমায় মেরেও ফেলে তবুও স্বর্গ রাজ্য পেলেও এদের হত্যা করতে চাই না ।    এসব বলে তিনি ধনুর্বাণ ত্যাগ করে বিষন্ন মনে রথের উপর বসে পড়লেন(1/46) ।     এরপর কৃষ্ণ সাংখ্য থেকে শুরু করে 17 অধ্যায় ধরে নানান উপদেশ দিয়ে শেষ করলেন এই বলে যে,  "যদহঙ্কারমাশ্রিত্য.....প্রকৃতিস্ত্বাং নিযোক্ষ্যতি । 18/59  - তুমি অহঙ্কার কে আশ্রয় করে 'যুদ্ধ করব না' মনে করছ, এ ভাবনা মিথ্যা। তোমার প্রকৃতিই তোমাকে যুদ্ধে নিযুক্ত করবে ।  এবং   "স্বভাবজেন কৌন্তেয় ...করিষ্যবশোপি তৎ । 18/60 - মোহবশত যা করতে চাইছ না, তোমার স্বভাবজাত কর্ম প্রবৃত্তি দ্বারা সেটাই তুমি করবে ।     এটাই যুদ্ধের আগে কৃষ্ণের শেষ কথা । কারণ এর পরে আর কথা কিছু নেই । কৃষ্ণ বলছেন, সব ছেড়ে তাকে শরণ নিতে । অর্থাৎ তিনি যা বলছেন তা-ই শুনতে । তিনি রক্ষা করবেন ।   যদি প্রবৃত্তি দ্বারা আমরা পরিচালিত হই তাহলে 18 অধ্যায়ের ধরে এতো তত্ত্ব কথা বলার কি প্রয়োজন ছিল । অর্থাৎ বোঝা গেল হাজার উপদেশেও কিছু হয় না...

সাংখ্য প্রবচন সূত্র 2

 " প্রাত্যহিক ক্ষুৎপ্রতিকার....। 3 " সর্ব্বাসম্ভবাৎ সম্ভবে..... । 4 " উৎকর্ষাদপি মোক্ষস্য .... । 5   যেমন ভোজনে ক্ষুধা নিবৃত হয়, তেমনই ধনাদির দ্বারা স্থুল দুঃখ নিবৃত হয়। কিন্তু সে নিবৃত্তি পরম নয়। কারণ নানা ভাবে পুনরায় নানারকম দুঃখের সৃষ্টি হয়।   তাই প্রমাণজ্ঞ, কুশলী ও বিবেকী মানুষ  লৌকিক উপায় ত্যাগ করে শাস্ত্রীয় উপায় অবলম্বন করেন ।   ভগবৎ গীতার 18 অধ্যায়ের 2-11 শ্লোকে ত্যাগের মাধ্যমে মোক্ষের বর্ণনা আছে ।   কাম্যকর্মের ত্যাগকে সন্ন্যাস বলে। মোহ বশতঃ নিত্য কর্মত্যাগকে তামস ত্যাগ, কর্তব্য কর্ম কষ্টকর মনে করে ত্যাগকে রাজস ত্যাগ এবং কর্তৃত্বাভিমান ও ফলাকাঙ্খা ত্যাগ করে কর্তব্য কর্ম করাকে সাত্বিক ত্যাগ বলে।  "যস্তু কর্মফলত্যাগী স ত্যাগীত্যভিধীয়তে"  -  যিনি  কর্ম করেও কর্মফল ত্যাগ করেছেন তিনিই প্রকৃত ত্যাগী বলে অভিহিত হন।    সাংখ্য 5 নং সূত্রে বলা হচ্ছে, মোক্ষ লাভ যে রাজ্যধনাদি লাভের থেকে উৎকৃষ্ট তা শ্রুতিতে বলা আছে ।    এখানে বলা যেতে পারে এই যে শ্রুতি-র কথা বলা হল, এতে বোঝা গেল 'সাংখ্য প্রবচন সূত্র ' প্রাচীন রচ...

সাংখ্য প্রবচন সূত্র 1

      সাংখ্য ভারতের অন্যতম প্রাচীন, মতান্তরে প্রাচীনতম দর্শন । তবে পন্ডিতরা বলেন আদি কপিল তার মা দেবাহুতি (ভাগবতে বর্ণিত )-কে যে দর্শন বুঝিয়েছিলেন তা পাওয়া যায় না। ঈশ্বর কৃষ্ণ কৃত 'সাংখ্য কারিকা '-কে প্রাচীনতম ধরা হয়। শঙ্করাচার্য একাধিক কপিল মুনি র অস্তিত্ব মেনে নিয়েছিলেন । যেমন পরম্পরাগতভাবে শঙ্করাচার্য আজও আছেন। এমনই কোনও এক বা একাধিক কপিল কর্তৃক রচিত হল 'সাংখ্য প্রবচন সূত্র '।   'কারিকা'-র পরিপূরক বা ব্যাখ্যা হিসাবে এটি গ্রহণ করা যেতে পারে । তবে কোথাও বিরোধ হলে 'কারিকা'-কেই প্রামাণ্য ধরতে হবে । "অথ ত্রিবিধদুঃখাত্যন্তনিবৃত্তিরত্যন্তপুরুষার্থঃ । সূত্র  1 - 'অথ' শব্দের উচ্চারণ মঙ্গলজনক। বলা যায় এই শাস্ত্রের শুভ আরম্ভ হল।   ত্রিবিধ দুঃখ ( আধ্যাত্মিক, আধিভৌতিক ও আধিদৈবিক ) -এর অন্ত হলে পরম পুরুষার্থ লাভ হবে । এখানে 'অত্যন্ত পুরুষার্থ ' -কে কেউ কেউ 'পরম পুরুষার্থ ' ধরেছেন । এই পরম পুরুষার্থ লাভ করাতেই মুক্তি বা মোক্ষ লাভ ধরা হয়েছে । এই পরম পুরুষকে কে কি আমরা পরমাত্মা জ্ঞান করতে পারি  ? উপনিষদে সমসাময়িক সময়ে কিন্তু এই ভাবন...

সাংখ্য দর্শন 14

  যে উদ্দেশ্য নিয়ে diary লেখার মতো করে সাংখ্য ও অন্যান্য দর্শন নিয়ে social media তে আলোচনা শুরু করা হয়েছিল তা অনেকটাই সফল বলা যেতে পারে । শ্রমদপ্তরে পরিশ্রম ও পণ্ডশ্রম করার পরে যতটুকু আত্মজিজ্ঞাসা-র অবকাশ থাকে তা একাকী শাস্ত্র পাঠে তৃপ্ত না হওয়ার ফলে গুনী, জ্ঞানী ও আগ্রহী মানুষদের অংশগ্রহণে নিজেকে আরও উন্নত করা যায় কিনা এটি পরিক্ষনীয় ছিল । মূলতঃ ভাতৃপ্রতীম সমাজরক্ষক তাপসের সৌজন্যে সুখেনবাবু, দর্শনের অধ্যাপক সুকান্তবাবু এবং প্রণববাবুর মতন অনেকেই আমার কৃতজ্ঞতা ভাজন হয়েছেন। কেউ পথ দেখাচ্ছেন, কেউ বা ভুল সংশোধন করে দিচ্ছেন, কেউ বা উৎসাহ দিচ্ছেন, আবার শ্রাবণী বা কাবেরী দেবীর  মতো কারো কারো আগ্রহী প্রশ্নে ভাবনার নব দিগন্ত উন্মোচিত হচ্ছে ।  আরো অনেকেই পরোক্ষে উৎসাহ দিচ্ছেন নানাভাবে । এই  অবকাশে আমার এই soul searching যাত্রাপথে সকল সহযাত্রীকে কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ জানাই ।    সাংখ্য দর্শন ঈশ্বর নিয়ে কিছু বলে না,  পরমাত্মা বা পরম পুরুষ নিয়েও কিছু বলে না । শুধু পুরুষ ও প্রকৃতি । এই দুই এর পারস্পরিক সম্পর্ক । একদিকে ভোগ ও অন্যদিকে মুক্তি । মাঝে দুএর সংযোগে ভোগ এবং ক...

সাংখ্য দর্শন 13 এবং বৌদ্ধ দুঃখ - নিবৃত্তি

 ( সাংখ্য কারিকা ই সাংখ্যের মূল গ্রন্থ । কপিল প্রণীত মূল সূত্র পাওয়া যায় না । তত্ত্ব সমাস নামক কিছু সূত্র আছে যা পরবর্তীতে রচিত । কপিল শিষ্য অসুর, তার শিষ্য পঞ্চশিখ, এবং তার শিষ্য ঈশ্বর কৃষ্ণ । ঈশ্বর কৃষ্ণ কারিকা -র রচয়িতা । বাচস্পতি মিশ্র পরবর্তী কালে এর টীকাকার। আমরা তার টীকাকে প্রামাণ্য ধরে আলোচনা করছি । এর বঙ্গানুবাদ পূর্ণচন্দ্র বেদান্তচুঞ্চু সাংখ্য ভূষণ সাহিত্যাচার্য মহাশয়ের । যেমন বোধ হচ্ছে তেমনই আলোচনা চলছে । ব্যাখ্যার কোথাও ভ্রান্তি থাকলে দায় সম্পূর্ণ আমার ।)    সাংখ্য ও বৌদ্ধ দর্শন কোথাও ই ঈশ্বর নিয়ে আলোচনা করা হয় নি । এর অর্থ এ নয় যে চার্বাকের মতন ঈশ্বর এ অবিশ্বাস রয়েছে । আসলে উভয় ক্ষেত্রেই তারা 'ঋত' বা system কে ধরার চেষ্টা করেছে । কি ভাবে system operate করে বুঝতে চেয়েছে এবং তাদের মতন উত্তর পেয়ে অন্য জিজ্ঞাসুদের জানিয়েছে ।    যদি এভাবে বোঝার চেষ্টা করি, এই যে Samsung mobile set এ Android প্রযুক্তির সাহায্যে সময় পেলেই এটা ওটা লিখছি, ছবি  post করছি, আবার phone করছি বা  mail করছি, সবগুলোই করছি এই system কে  operate করতে জেনে । আবার কতো...

সাংখ্য দর্শন 12

যদি জীবাত্মা বা পুরুষ  = নদী;  পরমাত্মা বা পরম পুরুষ = সমুদ্র  এবং  প্রকৃতি = আবহাওয়া,  ভূমন্ডল ধরে নিই তবে আমরা দেখব যে -   সমুদ্রের জলকণার থেকে মেঘ,  বৃষ্টি হয়ে নদীর জন্ম । নদী ক্রমশই সমুদ্র অভিমুখে যেতে থাকে । যে নদী ভূমন্ডলে নিজেকে হারিয়ে ফেলে তার সমুদ্রের সাথে মিলন হয় না । তারা জলকণা নানা চক্র পথে ঘুরতে থাকে । যে নদীর সামর্থ্য থাকে ভূমন্ডল তাকে সমুদ্রে মিলিত হতে বাধা দেয় না।  সমর্থ নদী হয় একা না হয় অন্য বড় নদীর সাথে(গুরু ) মিলিত হয়ে সমুদ্রে এসে পড়ে । তখন নদীর বুকে জোয়ার -ভাঁটা হয় । সপ্ত সমুদ্রে তার তখন অবাধ যাতায়াত ।   জীবাত্মা বা পুরুষ তেমনি প্রকৃতিতে লিপ্ত থাকলে সমুদ্র তথা পরমাত্মাকে ভুলে থাকে । জন্ম জন্মান্তরের চক্রে আবর্তিত হয় । যে   পুরুষ পরমাত্মার দিকে এগোতে থাকে প্রকৃতি তখন আর বাধা দেয় না।
।। অমৃত বাণী ।। 3 ।। সর্বে ক্ষয়ান্তা নিচয়াঃ পতনান্তাঃ সমুচ্ছ্রয়াঃ । সংযোগা বিপ্রয়োগান্তা মরণান্তং চ জীবিতম্ ।। -- স্ত্রী পর্ব, মহাভারত ।। -- সব সঞ্চয়ই শেষে ক্ষয় হয় । উন্নতির শেষে হয় পতন । মিলনের শেষে বিচ্ছেদ, যেমন জীবনের অন্তে মরণ ।। -- তাই সঞ্চয় ও উন্নতিতে আত্মহারা হওয়া বর্জনীয় । ।। অমৃত বাণী ।। 4 ।। উৎসবে ব্যসনে চৈব দুর্ভিক্ষে শত্রু নিগ্রহে। রাজদ্বারে শ্মশানে চ যস্তিষ্ঠতি স বান্ধবঃ ।। -- উৎসবে, বিপদে, দুর্ভিক্ষে, যুদ্ধে, রাজদ্বারে, শ্মশানে যে সঙ্গ দেয় সেই প্রকৃত বন্ধু । শ্রূয়তাং ধর্মসর্বস্বং শ্রুত্বা চ হৃদি ধার্য্যতাম । -- সকল ধর্মের কথা শুনে সার হৃদয়ে ধারণ করা উচিত । আত্মনঃ প্রতিকূলানি পরেষাং ন সমাচরেৎ । -- অন্যের যে আচরণে দুঃখ হয়, সেই আচরণ অন্যের প্রতি করা অনুচিৎ।
।। সাংখ্য দর্শন ।। 1।। প্রায় দশ বছর যাবত এই দর্শন অনুধাবনে প্রচেষ্টার পর social media তে কিছু আলোচনায় প্রবেশ করছি । সম্প্রতি Facebook এ প্রাপ্ত, একজন পরিচিত মানুষের post এর সৌজন্যে, পরোক্ষে এ বিষয়ে পুনরায় আগ্রহী হই। (life is extremely interesting. Mother nature always sends signals through various ways ) । Social media তে এ আলোচনার উদ্দেশ্য কখন কার মাধ্যমে কি দরজা খুলে যায় । হালকা বা personified comment দেবেন না এই আশা রাখব । আগ্রহীজনের আলোচনা আমার পাথেয় । বলা হয় ভারতের প্রাচীনতম দর্শন হল সাংখ্য । এতে সৃষ্টি কর্তা ঈশ্বরের অঙ্গীকার নেই । প্রকৃতি ও পুরুষ (আত্মা ) এই দুই অনাদিতত্ব। জীবাত্মা এখানে পুরুষ নামে উল্লিখিত। তার বাইরের জগত্‌-সংসার হল প্রকৃতি। সমগ্রটা হল 'প্রকৃতি (mother nature)', আর নারী-পুরুষ নির্বিশেষে ব্যক্তি হল 'পুরুষ'। জীবাত্মা তপস্যাবলে অণিমাদি ঐশ্বর্যশালী হয় । কপিল মুনি এই দর্শনের প্রবক্তা । শুরুতেই চমক । কপিলায় মহামুনয়ে শিষ্যায় তস্য চাসুরয়ে । পঞ্চশিখায় তথেশ্বর কৃষ্ণয়ৈতৈ নমস্যাম ।। কপিল, তার শিষ্য আসুরি/অসুর, কৃষ্ণ এনাদের প্রণাম । ভাগবত পাঠে...
।। সাংখ্য ২।। পতঞ্জলী ও সাংখ্য দর্শণ পরস্পর পরিপূরক। বিস্তারিত আলোচনার জন্য শ্রীমদ হরিহরানন্দ আরণ্য এবং পূর্ণচন্দ্র বেদান্তচুঞ্চু সাংখ্যভূষণ মহাশয়দের আলোচনা বিবেচ্য । দুঃখত্রয়াভিঘাতাজ জিজ্ঞাসা তদপঘাতক হেতৌ ...।। -- দুঃখ তিন প্রকার। আধিভৌতিক, আধিদৈবিক ও আধ্যাত্মিক। আধিভৌতিক - সাংসারিক দুঃখ। আধিদৈবিক - ঝড়-ঝঞ্জা ইত্যাদি প্রাকৃতিক বিপর্যয়, যা মানুষের নিয়ন্ত্রনে নয়। আধ্যাত্মিক - পারমাত্মিক যন্ত্রনা। দুঃখ অনিষ্টকর সকলেই জ্ঞাত। তাই দুঃখনাশের উপায় জানা আবশ্যক ।। দুঃখত্রয় নিবৃত হলেও পুনরায় সৃষ্ট হতে পারে। তাই দুঃখত্রয় বিনষ্ট হয় ও পুনরায় জন্মিতে না পারে এরূপ চেষ্টা করা উচিত।   উপনিষদ আলোচনার ক্ষেত্রে আমরা দেখব প্রায় সকল উপনিষদের আলোচনার প্রারম্ভে  শান্তি শ্লোক দেওয়া আছে।  সেই শ্লোকের শেষে তিন বার 'শান্তি' বলা হয়। তিন প্রকার দুঃখকে 'ত্রিতাপ জ্বালা' বলা হয়  লৌকিকভাবে। এই ত্রিতাপের উদ্দেশ্যে তিন বার শান্তি বলা হয়। ক্রমশঃ
।। সাংখ্য 2/2 ।। চাণক্য বললেন, অনিত্যানি শরীরাণি বিভবো নৈব শাশ্বতঃ । নিত্যং সন্নিহিত মৃত্যু কর্তব্য ধর্ম সঞ্চয়ঃ ।। -- শরীর, সম্পদ সবই অনিত্য । রোজই মৃত্যু নিকটবর্তী । তাই ধর্ম সঞ্চয়ই কাম্য । এদিকে বুদ্ধ বললেন, সর্বম অনিত্যম্ সর্বম অনাত্মম্ নির্বাণং শান্তম্ । - সকলই অনিত্য। তাই নির্বাণ লাভই পথ । এবার সমস্যা হল ধর্ম সঞ্চয়ই হোক বা নির্বাণ লাভের প্রচেষ্টা, কর্ম ছাড়া সম্ভব কি? আর কর্ম কি ? আর আমরা সাধারণ মানুষ করবই বা কি ? -- ক্রমশঃ
।। সাংখ্য । 3 ।। দৃষ্ট বদানুশ্রবিক .....2। মূল-প্রকৃতিরবিকৃতি ....3। দৃষ্টমনুমানমাপ্ত ..........4। প্রতিবিষয়াধ্যবসায়ো ....5। এই 4 সূত্রে আমরা দেখছি বেদোক্ত যাগযজ্ঞ পূর্বোক্ত 3 প্রকার দুঃখকে জয় করতে অসমর্থ। কারন যজ্ঞাদি পার্থিব সুখ দিতে পারে, কিন্তু সুখলাভের পথে যে পার্থিব দোষে আমরা দুষ্ট হই, তা থেকে মুক্ত করতে পারে না । জড় জগতের আদি কারণ প্রকৃতি কারণ মাত্র, কার্য নয় । আর পুরুষ ( আত্মা, male gender নয়) কার্য, কারণ কিছুই নয় । প্রত্যক্ষ প্রমাণের বাইরে ও অনুমান ও আগম প্রমাণ কে স্বীকার করা হয়েছে । ইন্দ্রিয় সহযোগে প্রকৃতি থেকে প্রাপ্ত জ্ঞানকে প্রত্যক্ষ প্রমাণ বলে । অপ্রত্যক্ষ প্রমাণ যোগ নির্ভর । জীবাত্মা - পরমাত্মা, পুরুষ -প্রকৃতি র সংযোগ কেই যোগ বলে । আজ মহা শিবরাত্রি । বিশ্ব জগতের যোগের প্রবক্তা দেবাদিদেব মহাদেবকে প্রণাম জানাই । --- ক্রমশঃ
।। ধর্মান্ধতার যুগে দুএকটি ব্যক্তিগত কথা ।। জলপাইগুড়ি posted থাকাকালীন সিন্ধু লিপির উপর লেখা বই প্রকাশিত হল 2010 সালে । অনেক colleague ও বন্ধু সে বই পড়লেন ও তার প্রচারে আন্তরিকভাবে সহায়তা করলেন । 12 সালে কলকাতায় posted হয়ে সহকর্মী আধিকারিক হিসাবে পেলাম নজরুল ইসলাম মশাই কে । উনি লেখক ও কবিও বটে । প্রাচীন ভারতের ইতিহাস নিয়ে আমার কিছু পান্ডুলিপি দেখে উনি উদ্যোগ নিলেন ছাপানোর । নিজেই নিয়ে গেলেন এক publisher এর কাছে । নিজেই DTP করানোর দায়িত্ব নিলেন, ছাপার ব্যয় কমাতে । ইতিমধ্য ে retire করায় এবং অসুস্থ হয়ে পড়ায় কাজ হল না । সে বই পরে ' আর্য দিগন্তে সিন্ধু সভ্যতা ' নামে তুহিনা প্রকাশনী থেকে বের হল, যা বর্তমানে flipkart ও আমাজন এ প্রাপ্য । নজরুল সাহেবের আন্তরিক প্রচেষ্টা আমার মনে এক উদার মানুষের ছবি হয়ে রয়ে গেছে । ইতিমধ্যে অনেক colleague ওই বইটি নিয়েছেন । সম্প্রতি স. ইসলাম নামক এক colleague বই চাইলেন । প্রথমে কাটাতে চাইলাম এই ভেবে যে অনেকেই খেজুরে করেন DLC পদমর্যাদার কারণে । কয়েক বার বলাতে বললাম দাম দিতে হবে । তাতেও রাজি হওয়াতে এনে দিত হল। ভাবলাম পরে ভদ্রলোক আফসোস করবেন কারন সে বইত...
।। সাংখ্য 4 ।।      যোগ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা পাতঞ্জল দর্শন এ পাওয়া যাবে। এদিকে পাতঞ্জল বুঝতে গেলে সাংখ্য আগে অনুধাবন করার প্রয়োজন ।       আমরা কিছুই প্রমাণ ছাড়া গ্রহণ করব না । এবার প্রমাণ সাংখ্য মতে প্রত্যক্ষ ও অনুমান। চার্বাক প্রত্যক্ষ প্রমাণ ছাড়া কিছুই গ্রহণ করেন নি । বর্তমানে আমরা প্রায় সবাই চার্বাক পন্থী ।     নৈয়ায়িকেরা 3, 4 এমনকি 8 প্রকার প্রমাণের কথা বলেন। সেসব তত্ত্বের কচাকচি ।     আমরা সাংখ্য মত এবং বৌদ্ধ মতকেই গ্রহণ করতে পারি । যেখানে প্রত্যক্ষ ছাড়া বাকিদের দ্বিতীয় গোত্রে রাখা হয়েছে ।     সাংখ্য বলছে অপ্রত্যক্ষ প্রমাণ অধিকারী ব্যক্তিই কেবল অনুধাবন করেন । ' ' সদপি নাভিহিতং অনধিকারাৎ' ।।      সাংখ্যে শব্দ বা আপ্তবাক্য বলে এক পরোক্ষ প্রমাণ এর কথা বলা আছে  ।     যিনি রাগ-দ্বেষ ইত্যাদি দোষ্মুক্ত সেই ব্যক্তিকে 'আপ্ত' ব্যক্তি বলা হয়। এই ব্যক্তি মহ মুক্ত অবস্থায় জগত্‌ সংসারকে দেখতে পান বলে তিনি সত্যকে দর্শন করেন। এই ব্যক্তি যে বাক্য বলেন তা সত্য-উপলব্ধ বাক্য বলে সেই বাক্যকে 'আপ্ত-বাক্য' ...
।। সাংখ্য 5 ।। ।। সূত্র 6 -10 ।। দুঃখ, দুঃখের কারণ, ও দুঃখ হতে নিবৃত্তির কথা বৌদ্ধ দর্শনের অনেক আগেই সাংখ্য বিস্তারিত ব্যাখ্যা করেছে । বস্তু বর্তমান থাকা সত্ত্বেও অতিদূরতা , অতিনৈকট্য , সূক্ষ্মতা, মতিভ্রম ইত্যাদি নানা কারণে প্রত্যক্ষ গোচর হয় না ।   অতিদুরতা - ভৌগলিক দুরত্বের কারণে দুরের বস্তু চোখে দেখা যায় না।   অতিনৈকট্য - কোন বস্তু যদি চোখের Focal Length এর মধ্যে চলে আসে, তাহলে তা নজরে আসে না।   সূক্ষতা - আনবিক বা পারমানবিক বস্তুকণা; germ, bacteria ইত্যাদি আমাদের দৃষ্টি গোচর নয়।    মতিভ্রম - এটি হলে সবই গন্ডগোল। আবার অতীন্দ্রিয় পদার্থের জ্ঞান অনুমান ও আগম নির্ভর । জড় তত্ত্ব থেকে পৃথক করে আত্মা তথা পুরুষকে উপলব্ধি করাই সমস্ত আধ্যাত্ম শাস্ত্রের চরম উদ্দেশ্য । দুঃখ হতে মুক্তির একমাত্র জ্ঞান হল আত্মজ্ঞান ।   প্রায় সমস্ত উপনিষদ-এ আত্মজ্ঞানের কথা বলা আছে। পতঞ্জলি বলছেন, 'তদা দ্রুষ্ট স্বরূপে অবস্থানম্' দ্রষ্টার স্বরূপে চিত্ত বৃত্তির নিরোধ হল যোগ । সে অবস্থায় পুরুষের সাথে তার স্বরূপের মিলন হয় । চিত্ত নিরুদ্ধ অবস্থা হল কৈবল্য । আর কৈবল্য হল মুক্তি । এবার...
।। সাংখ্য 6 ।। সূত্র 11 - সুখ, দুঃখ ও মোহ এই তিন মিলে ত্রিগুণ । বিষয়াদি ব্যক্ত বা অব্যক্ত যাই হোক পুরুষ (আত্মা ) তাকে ভোগ করেন । 12 - সাধারণত সত্ত্ব, তমো ও রজ এই তিন ভাগে ত্রিগুণ কে ভাগ করা হয় । 13 -16 - ' পরিণামতঃ সলিল ' একই জল গ্রহণ করে নারকেল, তাল, আম কড়লা ফল ভেদে ভিন্ন স্বাদ প্রদান করে । প্রধান গুণ (পরমাত্মা ) একই হওয়া সত্বেও জীবের গুণ ভেদে সত্ত্ব, তমোগুণ ও রজগুণের প্রকাশ হয় । 17 - 20 - পুরুষ আসলে ত্রিগুণের সাক্ষী মাত্র । সে উদাসীন ও দ্রষ্টা । 'আমি করছি ' এটি আত্মার ভ্রম । 'এটি করতে হবে ' এই ইচ্ছাকে চিকীর্ষা বলে । চিকীর্ষার পরে আসে প্রবৃত্তি । প্রবৃত্তি থেকে বন্ধন, আর বন্ধন হল দুঃখের উৎস । দুঃখের বিনাশকেই বলা হয় মুক্তি । 21 - 23 - পুরুষ(আত্মা ) প্রকৃতির কার্যাবলীর দ্রষ্টা । প্রকৃতির সাথে সংযুক্ত হয়ে পুরুষ বদ্ধ হয় । প্রকৃতি সংযোগে 11 ইন্দ্রিয় (5 কর্মেন্দ্রিয়, 5 জ্ঞানেন্দ্রিয় ও মন ) ক্রিয়াশীল । জপ ,তপ ,পূজা সকল কাজেরই মূখ্য উদ্দেশ্য চিত্তের উৎকর্ষ সাধন তথা চিত্ত বৃত্তি নিরোধ তথা পুরুষকে প্রকৃতির সংযুক্ত অবস্থা থেকে মুক্ত করে দ্রষ্টার আসনে স্থাপন করা। -- ক...
।। সাংখ্য 7 ।। সূত্র 24 -30 ।। চক্ষু, কর্ণ, নাসিকা, জিহ্বা ও ত্বক এই পাঁচ sense organ হল জ্ঞানেন্দ্রিয় । বাক, হস্ত, পদ, পায়ু ও উপস্থ হল কর্মেন্দ্রিয় । মন হল একাদশতম ইন্দ্রিয় । এটি কর্মেন্দ্রিয় ও জ্ঞানেন্দ্রিয় উভয়ই । আমি বা আমার এমন অভিমান-বিশিষ্ট অন্তঃকরণকে অহঙ্কার বলে । মন বা চিত্তে ত্রিগুণের অবস্থান। ' চলং হি গুণ বৃত্তং' গুণত্রয়ের স্বভাব চঞ্চলতা । চিত্ত তাই সর্বদাই চঞ্চল । এদিকে যে বিষয়ে সন্দেহ নেই তাকে প্রমাণ বলে। প্রমাণের ফলস্বরূপ পুরুষ লাভ করে বোধ । একে বলা হয় প্রমা । রাগ-দ্বেষাদি দোষ রহিত ব্যক্তি হলেন আপ্ত । তার বাক্য হল আপ্ত বাক্য । একেই আবার আগম প্রমাণ হিসাবে ধরা হয় । শাস্ত্রে শিল্পশাস্ত্রাদি বিষয় বুদ্ধিকে বিজ্ঞান বলে আর মুক্তির উপায় বুদ্ধিকে বলে জ্ঞান । বিরাগ শব্দের অর্থ হল অনুরাগের অভাব। বৈরাগ্য হল detachment । ভোগ বিষয়ে অনুরাগ থাকলে ইন্দ্রিয়সকল বিষয় লাভে ব্যগ্র হয় । এতে চিত্ত নিয়ত চঞ্চল হয় । এই হল চিত্ত বৃত্তি। এই চিত্ত বৃত্তি দূর হলেই আসে বৈরাগ্য তথা মোক্ষ তথা মুক্তি । প্রকৃতিগত ত্রিগুণের কর্তা পুরুষ নয়, সে দ্রষ্টা মাত্র । অহঙ্কার বশতঃ ত্রিগুণের সাথে যুক্ত হল...
।।সাংখ্য 8 ।। সূত্র 31 - 42 ।।     আমরা দেখলাম সচেতন পুরুষ কর্তা নন । কেবল অচেতন পুরুষই 'এতৎ করোমি ' বা আমি করছি এই জ্ঞানে নিজেকে কর্তা মনে করে । আসলে পুরুষ কখনই কর্তা নন। সচেতন পুরুষের সেই বোধ থাকে বলে সে নিজেকে কর্তা মনে করে না। 'পুরুষস্য দর্শনার্থং কৈবল্যর্থং তথা প্রধানস্য '     পুরুষ দর্শকের ভূমিকায় প্রকৃতি বা তার কার্যাবলীরকে দর্শন করবে । এতেই তার কৈবল্য তথা মুক্তি । প্রকৃতি পুরুষের প্রারব্ধ অনুযায়ী কর্ম করিয়ে নেবে। সচেতন পুরুষ শারীরিকভাবে সেই কর্ম করলেও, নিজেকে যেহেতু কর্তা মনে করেন না, তাই সে প্রকৃতি নির্দিষ্ট কর্মকে দর্শকের ভূমিকায় দেখবে। কর্ম করবে শারীরিকভাবে, কিন্তু মনে মনে সে থাকবে দর্শক হয়ে। এভাবে কর্ম করলেই তার ক্রমশই কর্ম-বন্ধন হ্রাস হবে। ধীরে ধীরে সে মুক্তির পথে অগ্রসর হবে।     যে পুরুষ নিজেকে ভ্রমবশতঃ কর্তা মনে করে কর্ম সম্পাদন করবে, সে যেহেতু আসক্তি সহযোগে কর্ম করবে, তার কর্ম-বন্ধন হ্রাস না হয়ে বৃদ্ধি ঘটবে।    কর্তা যার দ্বারা কর্ম করেন তাকে করণ কারক বলে । এই করণ আবার দু প্রকার ।  অন্তঃকরণ ও বহিঃকরণ । অন্তকরণ আমরা সাধা...
।। সাংখ্য 10 ।। (প্রাক-শেষ পর্ব ) যার দ্বারা অর্থের (meaning ) বোধ হয় তাকে প্রত্যয় বলে। এর বিপরীত অবস্থা হল বিপর্য্যয় । বিপর্যয় আবার পাঁচ প্রকার - অবিদ্যা(ভ্রমসংস্কার, একটি বিষয়কে অন্য একটি বলে জানা), অস্মিতা(অহংভাব), রাগ (attachment), দ্বেষ ও অভিনিবেশ। সকল অনর্থের মূলভিত্তি হল বিপর্য্যয় । সাংখ্য ঈশ্বর বিষয়ে কথা না বললেও দেবতাদের কথা জানিয়েছে । বলেছে দেবতারা অষ্টবিধ ( অণিমা, লঘিমা ইত্যাদি ) ঐশ্বর্য লাভ করে 'অমরত্ব লাভ করেছি' এই মোহে আবদ্ধ হয়েছিল । অথচ তারা কেউ অ মর নয় । ( এ কারণে ইন্দ্র, বরুণ, বিবস্বান, ত্বষ্টা ইত্যাদি দেবতারা বর্তমানে গল্প কথায় পর্যবসিত )। সাংখ্য এও মনে করে দেবগণ মনুষ্য অপেক্ষা উন্নত জীব। তারা অমর নন । কর্ম দ্বারা মনুষ্যও দেবত্ব লাভ করতে পারে । [   দেব-মানব-অসুর, এনারা যে প্রাচীন ভারতের মানুষেরই বিভিন্ন সম্প্রদায় একথা 'আর্য দিগন্তে সিন্ধু সভ্যতা' পুস্তকে বিস্তারিত  বর্ণনা করা হয়েছে।] সাংখ্য চতুর্বর্ণ কে জন্মগত বলে স্বীকার করে না । 'গুণ কর্ম বিভাগশঃ ' ত্রিগুণের ভেদেই বর্ণ বিভাগ হয়েছে । সত্ত্ব গুণের আধিক্যে ব্রাহ্মণ, রজোগুণে ক্ষত্রিয় ইত্য...
।। সাংখ্য 11 ।। অন্তিম পর্ব ।।    ( সম্পূর্ণ নিজস্ব কারণে এই আলোচনার সূত্রপাত । দীর্ঘদিন পথপ্রদর্শক অন্বেষণে অকৃতকার্য হয়ে পূর্ণচন্দ্র মহাশয়ের পুস্তক হস্তগত হলে নিয়তি আদিষ্টবৎ একলব্যের ন্যায় কাল্পনিক গুরু ও সতীর্থ ধারণা করে social media তে যাত্রা শুরু করি । সমাপ্ত করে যেন নতুন করে আত্মদর্শন হল । এই দর্শন পরিক্রমায় যারা সহযাত্রী হলেন তাদের আন্তরিক কৃতজ্ঞতা জানাই ।)     সাংখ্য জানাচ্ছে - 'পুরুষস্য বিমোক্ষার্থং -' অর্থাৎ পুরুষকে মুক্ত করার জন্যই প্রকৃতি সৃষ্টি করেন । মুক্ত পুরু ষের জন্য প্রকৃতি আর পুনঃ সৃষ্টি করেন না ।     বাস্তবে প্রকৃতি পুরুষার্থ সম্পাদনের নিমিত্ত ভাবাদি সৃষ্টি করে আপনাতে আপনি বদ্ধ করেন । উপযুক্ত পুরুষকে তত্ত্ব জ্ঞান প্রদান পূর্বক প্রকৃতি নিজেকে মুক্ত করেন ।    যেমন শিশুকে হাটা শেখাতে হাত ধরা হলেও সক্ষম হলে শিশু ও পিতা বাহুল্য জ্ঞানে হস্ত বন্ধন মুক্ত হয়ে অবস্থান করেন ।     তত্ত্ব সাক্ষাৎকার হলে প্রকৃতির আর কার্য থাকে না । এই অবস্থায় পুরুষ নির্মল ভাবে উদাসীনের ন্যায় প্রকৃতিকে দর্শন করেন ।     তত্ত্ব জ্ঞান লাভ...
।। সাংখ্য ৯ ।। সূত্র ৪২ - ৪৪ ।। বন্ধন তিন প্রকার -     প্রাকৃতিক - প্রকৃতিকে সর্বস্ব জেনে প্রকৃতিকেই উপাসনা বা অনুরাগ জনিত বন্ধন। বস্তুগত ভোগ, বিলাসিতার কারনে এ ধরনের বন্ধন হয়।     বৈকারিক - ইন্দ্রিয়, অহঙ্কার, বুদ্ধিকে উপাসনা জনিত বন্ধ্‌ন। এ ধরনের বন্ধনের কারন মনোজগত্‌।      দাক্ষ্ণিক - যাগ-যজ্ঞ, জনকল্যানমূলক সত্‌কার্যকে ইষ্টজ্ঞানে যে বন্ধন। অর্থাত্‌ দেখা যাচ্ছে মহত্‌ কার্য করতে গিয়েও আসক্তি বা অনুরাগ জনিত বন্ধন হয়।    সুখ ও দুঃখের অনুভবকে ভোগ বলে। ভোগ বুদ্ধিতে অবস্থান করে। বুদ্ধি পুরুষকে(আত্মা) উপভোগ করায়। 'উপভোগ যোগ্য বিশেষ '     যেটি আমাদের উপভোগের যোগ্য তাকে বিশেষ বলে। বাকিগুলো অবিশেষ। ক্ষিতি, অপ,তেজ, বায়ু, ব্যোম এই পাঁচটি পঞ্চভূত হল অবিশেষ। অবিশেষ দ্বারা প্রাণধারন হয়। বিশেষ তিন প্রকার - সূক্ষ্মশরীর, স্থুলশরীর ও মহাভূত। মহাভূত পঞ্চভূতেরই চেতন রূপ।     স্থুলশরীর প্রকাশ্য হলেও সূক্ষ্মশরীর অপ্রকাশ্য। এটি আগে আলোচিত অনুমান যোগ্য প্রমাণ।     যেমন দেয়ালে ছায়া বা চিত্র প্রকাশ হয় বা আয়নায় প্রতিবিম্ব সৃস্টি হয়, ত...