উপনিষদ ( ঈশ + মুন্ডক ) পর্ব ১৫
' তেন ত্যক্তেন ভুঞ্জিথা"
-- তাকে ( ঈশ ) সংগে নিয়ে ত্যাগের মাধ্যমে ভোগ কর।
ঈশোপনিষদের এই প্রথম শ্লোকটির বহু আলোচনা এবং বহু ব্যাখ্যা হয়েছে। এটি নিয়ে একটু বিস্তারিত আলোচনার প্রয়োজন।
যে জ্ঞান লাভ হলে সকল জ্ঞান বা সকল বিদ্যা লাভ হয় তাকে 'ব্রহ্মবিদ্যা' বলে। যিনি প্রথম এই বিদ্যা লাভ করেছিলেন তাকে 'ব্রহ্মা' নাম দিয়ে দেবতার আসনে বসানো হয় ( Deity, not God) । মুন্ডকোপনিষদ -এ প্রথম খন্ডের ৯ টি শ্লোকে বলা আছে, ব্রহ্মার পুত্র অথর্বা, অঙ্গিরা, সত্যবহ এবং শৌণক হয়ে ব্রহ্মবিদ্যার কথা প্রচারিত হয়। শৌণকের প্রশ্নের উত্তরে ঋষি অঙ্গিরা জানান, ব্রহ্মবিদ্যা পরা এবং অপরা এই দুই ভাগে বিভক্ত।
পরা বিদ্যা - যার দ্বারা পরমাত্মার জ্ঞানলাভ হয় ।
অপরা বিদ্যা - যার দ্বারা ইহলৌকিক ও পারলৌকিক ভোগাদির জ্ঞান লাভ হয়।
ঈশোপনিষদের প্রথম শ্লোকে বলা হচ্ছে,
' ঈশা বাস্যমিদং সর্বং যত্ কিঞ্চ জগত্যাং জগত্।
তেন ত্যাক্তেন ভুঞ্জিথা মা গৃধঃ কস্য স্বিদ্ধনম ।।'
- 'ঈশ' কথাটির অর্থ 'ঈশ্বর"ধরা হলেও এর ব্যাকরণগত অর্থ ' যিনি শাসন করেন'। যিনি ব্রহ্মান্ডের শাসক তিনিই 'ঈশ"। ভক্তের চোখে তিনি ভগবান।
এই 'ঈশ সমগ্র জগত্ ব্যাপ্ত হয়ে আছে। তিনি আমাদের বাইরেও আছেন, আবার আমাদের মধ্যেও আছেন। এখানে প্রশ্ন হতে পারে আমাদের মধ্যেও যদি সেই 'ঈশ' থাকে তাহলে তার প্রকাশ সাধারণ অবস্থায় নেই কেন ?
এর উত্তরে শঙ্করাচার্য বলছেন, চন্দন কাঠে সুগন্ধ জন্মগতভাবেই আছে। কিন্তু চন্দন কাঠ দীর্ঘদিন জলে চুবিয়ে রাখলে তার থেকে দুর্গন্ধ বের হয়। আবার বেশ কিছুক্ষণ ঘষলে তার দুর্গন্ধ দূর হয়ে আভ্যন্তরীন সুগধ বেরিয়ে আসে। সেরকমই মানুষ সাধারণ অবস্থায় সংসারের বন্ধনে থেকে নিজেকে দুর্গন্ধময় করে রেখেছে। আত্মচর্চারূপ ঘর্ষনে সেই দুর্গন্ধ দূর হয়ে পরমাত্মার সংযোগ লাভ করলে ব্রহ্মবিদ্যার সুগন্ধ বেরিয়ে আসে আপনাআপনি।
ভোগ দু প্রকার। সুখ ভোগ ও দুঃখ ভোগ। কর্মবন্ধনে যুক্ত মানুষ উভয় ভোগ করতে বাধ্য হয়। এই কর্মবন্ধনজনিত ভোগ এড়িয়ে যাবার কোন পথ নেই। ভোগ করার মাধ্যমেই এই বন্ধনের স্খালন হয়। তাই যেটা যেটা ভোগ হতে থাকবে সেটা সেটাই ভোগের তালিকা থেকে বাদ পরবে, অর্থাত্ ত্যাগ হবে।
'মা গৃধঃ' মানে হল 'লোভ করো না'। শুধু 'তেন' অর্থাত্ তার দ্বারা বা তাকে সঙ্গে নিয়ে ত্যাগের কথা মাথায় রেখেই ভোগ কর। লোভ করো না। এর পরের শ্লোকেই বলা হচ্ছে
'ন কর্ম লিপ্যতি নরে'।
- অর্থাত্ কর্ম করতে হবে, কিন্তু লিপ্ত না হয়ে। আসক্তিশূণ্য হয়ে।
সব মিলিয়ে দাড়াল এই,
কর্মফল ভোগের মাধ্যমেই মানুষের মুক্তি। তাই আসক্তিবিহীন হয়ে কর্ম তথা ফলভোগ করতে হবে। ক্রমশঃই কর্মফল ত্যাগ হতে থাকবে। আসক্তি নিয়ে কর্ম করলে কর্মফল বৃদ্ধি হবে। তাই ত্যাগের কথা মাথায় রেখেই ভোগ করতে হবে।
-- তাকে ( ঈশ ) সংগে নিয়ে ত্যাগের মাধ্যমে ভোগ কর।
ঈশোপনিষদের এই প্রথম শ্লোকটির বহু আলোচনা এবং বহু ব্যাখ্যা হয়েছে। এটি নিয়ে একটু বিস্তারিত আলোচনার প্রয়োজন।
যে জ্ঞান লাভ হলে সকল জ্ঞান বা সকল বিদ্যা লাভ হয় তাকে 'ব্রহ্মবিদ্যা' বলে। যিনি প্রথম এই বিদ্যা লাভ করেছিলেন তাকে 'ব্রহ্মা' নাম দিয়ে দেবতার আসনে বসানো হয় ( Deity, not God) । মুন্ডকোপনিষদ -এ প্রথম খন্ডের ৯ টি শ্লোকে বলা আছে, ব্রহ্মার পুত্র অথর্বা, অঙ্গিরা, সত্যবহ এবং শৌণক হয়ে ব্রহ্মবিদ্যার কথা প্রচারিত হয়। শৌণকের প্রশ্নের উত্তরে ঋষি অঙ্গিরা জানান, ব্রহ্মবিদ্যা পরা এবং অপরা এই দুই ভাগে বিভক্ত।
পরা বিদ্যা - যার দ্বারা পরমাত্মার জ্ঞানলাভ হয় ।
অপরা বিদ্যা - যার দ্বারা ইহলৌকিক ও পারলৌকিক ভোগাদির জ্ঞান লাভ হয়।
ঈশোপনিষদের প্রথম শ্লোকে বলা হচ্ছে,
' ঈশা বাস্যমিদং সর্বং যত্ কিঞ্চ জগত্যাং জগত্।
তেন ত্যাক্তেন ভুঞ্জিথা মা গৃধঃ কস্য স্বিদ্ধনম ।।'
- 'ঈশ' কথাটির অর্থ 'ঈশ্বর"ধরা হলেও এর ব্যাকরণগত অর্থ ' যিনি শাসন করেন'। যিনি ব্রহ্মান্ডের শাসক তিনিই 'ঈশ"। ভক্তের চোখে তিনি ভগবান।
এই 'ঈশ সমগ্র জগত্ ব্যাপ্ত হয়ে আছে। তিনি আমাদের বাইরেও আছেন, আবার আমাদের মধ্যেও আছেন। এখানে প্রশ্ন হতে পারে আমাদের মধ্যেও যদি সেই 'ঈশ' থাকে তাহলে তার প্রকাশ সাধারণ অবস্থায় নেই কেন ?
এর উত্তরে শঙ্করাচার্য বলছেন, চন্দন কাঠে সুগন্ধ জন্মগতভাবেই আছে। কিন্তু চন্দন কাঠ দীর্ঘদিন জলে চুবিয়ে রাখলে তার থেকে দুর্গন্ধ বের হয়। আবার বেশ কিছুক্ষণ ঘষলে তার দুর্গন্ধ দূর হয়ে আভ্যন্তরীন সুগধ বেরিয়ে আসে। সেরকমই মানুষ সাধারণ অবস্থায় সংসারের বন্ধনে থেকে নিজেকে দুর্গন্ধময় করে রেখেছে। আত্মচর্চারূপ ঘর্ষনে সেই দুর্গন্ধ দূর হয়ে পরমাত্মার সংযোগ লাভ করলে ব্রহ্মবিদ্যার সুগন্ধ বেরিয়ে আসে আপনাআপনি।
ভোগ দু প্রকার। সুখ ভোগ ও দুঃখ ভোগ। কর্মবন্ধনে যুক্ত মানুষ উভয় ভোগ করতে বাধ্য হয়। এই কর্মবন্ধনজনিত ভোগ এড়িয়ে যাবার কোন পথ নেই। ভোগ করার মাধ্যমেই এই বন্ধনের স্খালন হয়। তাই যেটা যেটা ভোগ হতে থাকবে সেটা সেটাই ভোগের তালিকা থেকে বাদ পরবে, অর্থাত্ ত্যাগ হবে।
'মা গৃধঃ' মানে হল 'লোভ করো না'। শুধু 'তেন' অর্থাত্ তার দ্বারা বা তাকে সঙ্গে নিয়ে ত্যাগের কথা মাথায় রেখেই ভোগ কর। লোভ করো না। এর পরের শ্লোকেই বলা হচ্ছে
'ন কর্ম লিপ্যতি নরে'।
- অর্থাত্ কর্ম করতে হবে, কিন্তু লিপ্ত না হয়ে। আসক্তিশূণ্য হয়ে।
সব মিলিয়ে দাড়াল এই,
কর্মফল ভোগের মাধ্যমেই মানুষের মুক্তি। তাই আসক্তিবিহীন হয়ে কর্ম তথা ফলভোগ করতে হবে। ক্রমশঃই কর্মফল ত্যাগ হতে থাকবে। আসক্তি নিয়ে কর্ম করলে কর্মফল বৃদ্ধি হবে। তাই ত্যাগের কথা মাথায় রেখেই ভোগ করতে হবে।
Comments
Post a Comment