উপনিষদ পর্ব ( মান্ডুক্যোপনিষদ 1 ) 7

    দেড়/দু’মাস আগে এক বন্ধু মান্ডুক্যোপনিষদ এর প্রসঙ্গ তুলে জানালেন জনক রাজার কাহিনী । রাজা সারারাত স্বপ্নে এক জগতে বিচরণ করে প্রভাতে জাগ্রত হয়ে দেখলেন পরিস্থিতি বিপরীত । ভাবতে বসলেন কোন জগতটি সত্যি । সারারাত যে জগতে বিচরণ করলেন, নাকি সারাদিন যে জগতে কাটান । কোন জগতটি ভ্রম। নাকি সবটাই ভ্রম ।
    জনক একটি রাজ বংশের নাম । সেই বংশের সকলেই জনক । সীতার পিতা 26 তম জনক । মূল নাম সীরধ্বজ । জনক রাজবংশের রাজারা পন্ডিত, জ্ঞানী। কেউ কেউ ব্রহ্মজ্ঞ । এক জনক রাজসভাতেই গার্গী- যাজ্ঞবল্কের সুবিখ্যাত তর্কযুদ্ধ হয়, যেখানে যাজ্ঞবল্ক গার্গীকে পরাস্ত না করতে পেরে হুমকি দিয়ে থামিয়ে দেন । জনক রাজাদের রাজর্ষি  ( যিনি রাজা তিনিই ঋষি ) বলা হত ।
   যাহোক এই জনক রাজা এক বিশেষ প্রশ্ন তুলে দিলেন মানবজাতির সামনে । অনেক পরে আদি শঙ্করাচার্য জানালেন,  ' ব্রহ্ম সত্য,  জগৎ মিথ্যা '। এ নিয়ে চর্চা কম হয়নি । এই ক্ষুদ্র লেখক অবশ্য মনে করে ' এ ভি সাচ্, ও ভি সাচ্। সত্য একমাত্রিক নয় । multidimensional । যে যেভাবে দেখছে তার দৃষ্টিতে সেটাই সত্য মনে হচ্ছে,  বাকি সব মনে হচ্ছে ভ্রমাত্মক ।
জগৎ মিথ্যা হতে পারে না । মনে হয় হাজার বছর বাদে শঙ্করাচার্যের কথার অর্থ সঙ্কুচিত হয়েছে । যেমন অভিভাবক শিশুকে বলেন, সারাদিন কি সব TV তে cartoon দেখিস । ওসব মিথ্যে । মন দিয়ে পড়াশোনা কর ।
   আহা cartoon বা রূপকথা শিশুকে কি পরিমান আনন্দ দেয়, তা আপামর শিশুর এসবে involvement দেখলেই অনুধাবন করা যায় । শিশুর অনুভূতিগুলি কি মিথ্যা হতে পারে ? এই শিশু বড় হলে এসবে ফিরেও দেখবে না,  এটাও আবার সত্য । আগেরটিও সত্যিই ছিল । অভিভাবক পূর্ণবয়স্ক হয়ে তার দৃষ্টিতে পূর্বেরটিকে গুরুত্বহীন বলেছেন । তেমনই  বলা হয়েছে  'ব্রহ্ম সত্য,  জগৎ মিথ্যা '। আসলে সবই সত্যি । স্তরের পার্থক্য । আমি পরীক্ষার পড়া করছি এটা সত্যি, আবার গান শুনছি, বই পড়ছি, ছবি আঁকছি বা খেলাধুলা করছি এও সত্যি । তবে বয়স যেমন বাড়ে, কি করছি তার বিবর্তন হয় । যার যা খোঁজ থাকে সে তার অন্বেষণে ব্যাপিত হয় ।
     এই উপনিষদটি অথর্ববেদের অন্তর্গত । এর শান্তি পাঠে বলা হল -
   " ওঁ ভদ্রং কর্ণেভিঃ শৃণুয়াং দেবাঃ ভদ্রং পশ্যেম  অক্ষভির্যজত্রা"
 - আমরা যেন কান দিয়ে ভদ্র কথা শুনি,  আর চোখ দিয়ে ভদ্র বিষয়ই দেখি ।
  " ওঁ শান্তি শান্তি শান্তি "
  - তিনবার শান্তি বলার অর্থ আমাদের আধ্যাত্মিক,  আধিভৌতিক  ( সাংসারিক ) ও আধিদৈবিক  ( ঝড়, জল, বজ্রপাত ইত্যাদি প্রাকৃতিক বিপর্যয়। আধিদৈবিক,  কারন মানুষের নিয়ন্ত্রণে নয়) এই তিন বিষয়ে শান্তি প্রতিষ্ঠা হোক ।
  -  ক্রমশঃ

Comments

Popular posts from this blog

কঠোপনিষদ ২০

উপনিষদ পর্ব 1

মহাভারত শ্লোক