উপনিষদ (ঈশ 2) 3

                     'ঈশা বাস্যমিদং সর্বং ...তেন ত্যক্তেন ভুঞ্জিথা ....'- ঈশোপনিষদ (1)
- সমগ্র জগৎ ঈশ্বর দ্বারা ব্যপ্ত । ত্যাগের মাধ্যমে ভোগ করতে হবে, লোভ নয়, আসক্ত হয়ে নয় । কারণ ধন-সম্পদ চিরস্থায়ী নয় ।
   'ঈশ' শব্দের অর্থ ঈশ্বর । এই শব্দ দ্বারা শুরু হয় বলে এর নাম ঈশোপনিষদ ।
                 'গচ্ছতি গচ্ছতি ইতি জগৎ '
  গতিশীল বা চলমান বলেই বিশ্বের অপর নাম জগৎ । চঞ্চল, অস্থির এই জগতে স্থির সত্তা হল ঈশ্বর । কারণ তিনি সর্ব ব্যপ্ত ।
   ত্যাগের মাধ্যমে ভোগ করতে হবে এবং বিষয়াদিতে আসক্ত হলে চলবে না।  গীতাতে এ বিষয়ে বলেছে,
                 'রাগদ্বেষবিযুর্ক্তেস্তূ বিষয়ানিন্দ্রিয়ৈশ্চয়ন
                  আত্মবশৈর্বিধেয়াত্মা প্রসাদমধিগচ্ছতি'  -  ২/৬৪
       -  রাগ-দ্বেষ বর্জন করে আত্মবশীভূত হয়ে বিষয়াদি উপভোগ করলে প্রসাদ তথা শান্তি লাভ হবে।
গীতাতে আরও বলা হয়েছে -
               'যজ্ঞার্থাং কর্মণোহন্যত্র লোকহয়ং কর্মবন্ধনঃ
               তদর্থং কর্ম কৌন্তেয় মুক্তসঙ্গ সমাচরঃ'     - ৩/৯
     - যজ্ঞই কর্ম, অন্যকর্মে বন্ধন হয়। তাই মুক্তসঙ্গ অর্থাৎ নিস্কাম হয়ে কর্ম করতে হয়।
  এখানে 'যজ্ঞ' অর্থে কেবলমাত্র যাগ-যজ্ঞ অনুষ্ঠান নয়। ত্যাগমূলক কর্মকে বোঝায়। Monnier-Williams  এর  Sanskrit-English Dictionary থেকে আমরা 'যজ্ঞ' শব্দের অর্থ পাচ্ছি ' work of sacrifice'। পরবর্তীকালে এই 'sacrifice' শব্দটির অর্থ হয়ে দাঁড়ায় যজ্ঞে বলিদান। বলিদান মানে যে প্রবৃত্তিকে বলি দেওয়া সেটি আমরা ক্রমশঃই বিস্মৃত হয়েছি।

                        'কুর্বনেবেহ কর্মানি ......। - ঈশপোনিষদ (২)
 - এখানেও বলা হচ্ছে, কর্ম কর। শতবর্ষ জীবিত থেকে কর্ম কর। আসক্ত বা লিপ্ত হয়ো না। এ ভিন্ন আর পথ নেই।
   গীতা আবার বলছে,
         'ব্রহ্মন্যধায় কর্মানি সঙ্গং ত্যক্তা করোতি যঃ
         লপ্যতে ন য পাপেন পদ্মপত্রমিবাম্ভসা ' -  ৫/১০
  -  ব্রহ্ম বা ঈশ্বরে সমর্পন করে কর্ম করলে পদ্মপাতায় জলের মতন কর্মবন্ধন মুক্ত অবস্থায় থাকা যায়।
            'কর্ম-সন্যাস' বলে একটি কথা পাওয়া যায়। সংসারে কর্ম না করে মুক্তি নেই। এড়িয়ে গিয়ে কর্ম-বন্ধন থেকে নিস্কৃতি নেই। আবার আসক্ত হয়ে কর্ম করলে বন্ধন বৃদ্ধি হয়। তাই নিরাসক্ত কর্মই একমাত্র পথ। এভাবেই বন্ধন থেকে হয় মুক্তি।
    বৌদ্ধ দর্শন পাঠ করতে গিয়ে দেখেছিলাম, বুদ্ধও কর্ম ত্যাগ করার কথা বলেননি। নিরাসক্ত কর্ম সাধারন মানুষের বোধের সহায়ক নয় বলে তিনি শুধু কিছু আচরনবিধি পালনের কথা বলেছিলেন জনসাধারনকে। শ্রমণদের জন্য অবশ্য আরও কিছু অতিরিক্ত কথা ছিল। তিনি কর্মবন্ধন না বলে দুঃখ ও দুঃখের নিবৃত্তির কথা বলেছিলেন। গভীরভাবে অনুধাবন করলে দেখা যাবে এই দুই দর্শনে বিশেষ অন্তর নেই।
- ক্রমশঃ

Comments

Popular posts from this blog

কঠোপনিষদ ২০

উপনিষদ পর্ব 1

মহাভারত শ্লোক