উপনিষদ ( মান্ডুক্যোপনিষদ 4 ) পর্ব 10
দ্বিতীয়পাদ --
'স্বপ্ন স্থানঃ অন্তরপ্রজ্ঞ ....প্রবিবিক্তভুক তৈজসো '
- বহির্জগতের প্রতি মোহ সমাপ্তে আত্মার এখন স্বপ্নের মতো অবস্থা। কারণ জাগ্রত অবস্থায় যা কিছু দেখছি বা শুনছি সবকিছুই সত্য রূপে প্রতীয়মান হয় । আত্মার এই অবস্থায় সকলই যেন স্বপ্নবৎ। আমাদের ইন্দ্রিয়াদি ক্লান্ত হলে শরীর নিদ্রিত হয় । সেসময় স্বপ্ন আবির্ভাবের অনুকূল। সেরূপ সপ্ত- অঙ্গ ও উনিশটি মুখ তাদের বাহ্যিক ব্যবহারে ক্লান্ত হলে বহির্জগৎ আর আত্মার পুষ্টি বা খোরাক যোগায় না, তখনই শুরু হয় অন্তর্জগতের যাত্রা বা অন্বেষণ। স্বপ্ন যে দেখে সে ছাড়া যেমন অপর কেউ অনুধাবন করে না, সেরূপ দ্বিতীয় পাদে আত্মা সূক্ষ্ম জগতের যে সকল উপভোগ লাভ করে তা দ্বিতীয় কাউকে প্রমাণ করতে পারে না । এই অবস্থাতেও ভোগ আছে । তবে তা মনোগত, দেহগত নয়, মননের ।
'প্রবিবিক্তভুক ' কথাটির অর্থ হল ' সূক্ষ্ম জগতের ভোক্তা '। এই অবস্থায় আত্মা বাহ্যিক স্থুল বিষয়ের পরিবর্তে অন্তর্জগতের সূক্ষ্ম বিষয়কে উপভোগ করে আপন 'তেজস ' বা জ্যোতির দ্বারা ।
তৃতীয় পাদ --
'.....সুষুপ্তস্থান একীভূত প্রজ্ঞানঘন ...'
-- গভীর নিদ্রিত কালে মানুষ স্বপ্ন দেখে না । এ হল চরম প্রশান্ত সুষুপ্তি অবস্থা। তৃতীয় অবস্থায় আত্মা সকল জ্ঞান একসাথে নিয়ে আনন্দঘন হয়ে প্রাজ্ঞ হয়ে যায় । এই প্রাজ্ঞ অবস্থা হল তৃতীয় পাদ । এই প্রাজ্ঞ আত্মা প্রায় সর্বজ্ঞ ও অন্তর্যামী। এই অবস্থায় আত্মার ভোগসকল কামনাহীন ।
'এষ সর্বেশ্বর এষ সর্বজ্ঞ ... এষ যোনিঃ সর্বস্য...' - 6
-- স্থুল -সূক্ষ্ম - কারণ , এই তিন নিয়ে জগৎ। এই মন্ত্রে যে আত্মাকে 'যোনি সর্বস্য ' বলা হল এর একটু ব্যাখ্যা প্রয়োজন । 'যোনি ' কথাটির বৃহত্তর অর্থ হল কারণ । এই কারণ অর্থ cause নয় । তন্ত্র শাস্ত্রে আমরা 'কারণবারি ' জাতীয় শব্দ পাই যা ক্ষুদ্রার্থে 'মদ' বা alcohol কে বোঝালেও এর বৃহৎ অর্থ আছে । যোনি বা কারণ হল এমন স্থান বা অবস্থা যেখানে উৎপত্তি, স্থিতি ও লয় মিলেমিশে একাকার ।
মানুষ জাগ্রত অবস্থায় স্থূল বহির্জগতের সাথে যুক্ত হয়ে তাকে ভোগ করে । সুপ্ত অবস্থায় স্বপ্নে সূক্ষ্ম জগতকে অনুধাবন ও উপভোগ করে । অনেক কবি বা সুরকার স্বপ্নে কবিতা বা সুর সৃষ্টি করেন। এ লেখকেরও এ বিষয়ে প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা আছে । সুষুপ্তি অবস্থায় সে ব্রহ্ম যোনি বা কারণ -এ ডুবে যায় । আত্মা এভাবেই স্থূল -সূক্ষ্ম -কারণ, পরপর এই তিন পাদে উত্তীর্ণ হয় ।
এই তিন পাদকে অতিক্রম করে আত্মা এসে পৌছয় চতুর্থ পাদে । এ এক অদ্বৈত, বিশ্বসত্তা, ব্রহ্ম অবস্থা। এটি কারণের কারণ- পরম মূল । এখানেই আত্মা পরমাত্মার সাথে যুক্ত হয় । নদী সাগরে এসে মেশে । মোহনায় একাকার হয়ে যায় । এই হল আত্মার তুরীয় অবস্থা (Transcendent )।
--ক্রমশঃ
'স্বপ্ন স্থানঃ অন্তরপ্রজ্ঞ ....প্রবিবিক্তভুক তৈজসো '
- বহির্জগতের প্রতি মোহ সমাপ্তে আত্মার এখন স্বপ্নের মতো অবস্থা। কারণ জাগ্রত অবস্থায় যা কিছু দেখছি বা শুনছি সবকিছুই সত্য রূপে প্রতীয়মান হয় । আত্মার এই অবস্থায় সকলই যেন স্বপ্নবৎ। আমাদের ইন্দ্রিয়াদি ক্লান্ত হলে শরীর নিদ্রিত হয় । সেসময় স্বপ্ন আবির্ভাবের অনুকূল। সেরূপ সপ্ত- অঙ্গ ও উনিশটি মুখ তাদের বাহ্যিক ব্যবহারে ক্লান্ত হলে বহির্জগৎ আর আত্মার পুষ্টি বা খোরাক যোগায় না, তখনই শুরু হয় অন্তর্জগতের যাত্রা বা অন্বেষণ। স্বপ্ন যে দেখে সে ছাড়া যেমন অপর কেউ অনুধাবন করে না, সেরূপ দ্বিতীয় পাদে আত্মা সূক্ষ্ম জগতের যে সকল উপভোগ লাভ করে তা দ্বিতীয় কাউকে প্রমাণ করতে পারে না । এই অবস্থাতেও ভোগ আছে । তবে তা মনোগত, দেহগত নয়, মননের ।
'প্রবিবিক্তভুক ' কথাটির অর্থ হল ' সূক্ষ্ম জগতের ভোক্তা '। এই অবস্থায় আত্মা বাহ্যিক স্থুল বিষয়ের পরিবর্তে অন্তর্জগতের সূক্ষ্ম বিষয়কে উপভোগ করে আপন 'তেজস ' বা জ্যোতির দ্বারা ।
তৃতীয় পাদ --
'.....সুষুপ্তস্থান একীভূত প্রজ্ঞানঘন ...'
-- গভীর নিদ্রিত কালে মানুষ স্বপ্ন দেখে না । এ হল চরম প্রশান্ত সুষুপ্তি অবস্থা। তৃতীয় অবস্থায় আত্মা সকল জ্ঞান একসাথে নিয়ে আনন্দঘন হয়ে প্রাজ্ঞ হয়ে যায় । এই প্রাজ্ঞ অবস্থা হল তৃতীয় পাদ । এই প্রাজ্ঞ আত্মা প্রায় সর্বজ্ঞ ও অন্তর্যামী। এই অবস্থায় আত্মার ভোগসকল কামনাহীন ।
'এষ সর্বেশ্বর এষ সর্বজ্ঞ ... এষ যোনিঃ সর্বস্য...' - 6
-- স্থুল -সূক্ষ্ম - কারণ , এই তিন নিয়ে জগৎ। এই মন্ত্রে যে আত্মাকে 'যোনি সর্বস্য ' বলা হল এর একটু ব্যাখ্যা প্রয়োজন । 'যোনি ' কথাটির বৃহত্তর অর্থ হল কারণ । এই কারণ অর্থ cause নয় । তন্ত্র শাস্ত্রে আমরা 'কারণবারি ' জাতীয় শব্দ পাই যা ক্ষুদ্রার্থে 'মদ' বা alcohol কে বোঝালেও এর বৃহৎ অর্থ আছে । যোনি বা কারণ হল এমন স্থান বা অবস্থা যেখানে উৎপত্তি, স্থিতি ও লয় মিলেমিশে একাকার ।
মানুষ জাগ্রত অবস্থায় স্থূল বহির্জগতের সাথে যুক্ত হয়ে তাকে ভোগ করে । সুপ্ত অবস্থায় স্বপ্নে সূক্ষ্ম জগতকে অনুধাবন ও উপভোগ করে । অনেক কবি বা সুরকার স্বপ্নে কবিতা বা সুর সৃষ্টি করেন। এ লেখকেরও এ বিষয়ে প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা আছে । সুষুপ্তি অবস্থায় সে ব্রহ্ম যোনি বা কারণ -এ ডুবে যায় । আত্মা এভাবেই স্থূল -সূক্ষ্ম -কারণ, পরপর এই তিন পাদে উত্তীর্ণ হয় ।
এই তিন পাদকে অতিক্রম করে আত্মা এসে পৌছয় চতুর্থ পাদে । এ এক অদ্বৈত, বিশ্বসত্তা, ব্রহ্ম অবস্থা। এটি কারণের কারণ- পরম মূল । এখানেই আত্মা পরমাত্মার সাথে যুক্ত হয় । নদী সাগরে এসে মেশে । মোহনায় একাকার হয়ে যায় । এই হল আত্মার তুরীয় অবস্থা (Transcendent )।
--ক্রমশঃ
Comments
Post a Comment