উপনিষদ ( মান্ডুক্যোপনিষদ 5 ) পর্ব 11
বন্ধু কয়েকটি মূল্যবান প্রশ্ন করেছেন । জনসমক্ষেই তা নিয়ে আলোচনা করার উদ্দেশ্য, তাহলে অন্যরাও অংশগ্রহণ করতে পারবেন এবং আমার ভ্রান্তি হলে আলোকপাত করতে পারবেন ।
1। আত্মার পরমাত্মার প্রতি যাত্রা যদি প্রকৃতির স্বাভাবিক বিবর্তন হয় তাহলে তা ত্বরান্বিত করা সম্ভব কিরূপে ?
জীবাত্মার মনুষ্য জন্ম ধারণের পূর্ব পর্যন্ত যে যে জন্ম পেরিয়ে আসে তা প্রাকৃতিক বিবর্তনের মাধ্যমে । মানুষ জন্মে তার বুদ্ধি - মেধার বিকাশ ঘটায় সে তার পারিপার্শ্বিক জগতকে অনুধাবন, বিচার ও নিয়ন্ত্রণ করতে থাকে । ক্রমশই সে প্রকৃতির স্বাভাবিক সৃষ্টি -স্থিতি -লয় এর ছন্দের বাইরে এসে নিজস্ব বিদ্যা -বুদ্ধি ও জ্ঞান অর্জন করে এবং নিজস্ব এক ভিন্ন জগৎ গড়ে তোলে। আত্মা পরমাত্মার অংশ হওয়ার ফলে পরমব্রহ্মের সৃষ্টি-স্থিতি-লয়ের আংশিক ক্ষমতা তার ভেতরেই থাকে। এতে মানব সভ্যতার অগ্রগতি হয় বটে, তবে ক্রমশই সে বিশ্বপ্রকৃতির বিবর্তনের স্বাভাবিক গতিপথ থেকে চ্যুত হয়ে পড়ে । চ্যুত হয়ে মানুষ জন্ম-জন্মান্তরের আবর্তে পরে। আবার মানুষেরই রয়েছে সেই ক্ষমতা যাতে সে প্রকৃতির গতিপথে ফিরে আসতে পারে এবং প্রকৃতির গতিকে ত্বরান্বিত করতে পারে ।
মানুষ জৈবিক প্রয়োজনের অতিরিক্তভাবে ইন্দ্রিয়াদিকে বিনোদনের উপায় হিসাবে গ্রহন করলে rule of nature থেকে সে deviate করে এবং তার বিবর্তন মন্দীভূত হয় । প্রাচীন ঋষিরা প্রকৃতির এই বিবর্তনের পথ ( Journey of soul ) কে ত্বরান্বিত করার জন্য যোগাদি নানা পথের সন্ধান দিয়েছেন । যোগ অভ্যাসের ফলে ইন্দ্রিয়াদি ক্রমশই অন্তর্মুখী হতে থাকে এবং আত্মার যাত্রা accelerated হয় ।
2। দ্বিতীয় প্রশ্ন হল, তৃতীয় পাদে এসে আত্মা যদি বিশ্বযোনিতে প্রবেশ করে তাহলে চতুর্থ পাদে কি তফাৎ হয় ? পরমাত্মায় লীন হবার পর আত্মা পৃথক ভাবে তুরীয় অবস্থা অনুভব করে কি প্রকারে ?
যেকোন নদী মোহনা আমাদের বুঝতে সহায়ক হবে । এলাহাবাদ বা প্রয়োগের গঙ্গা - যমুনা বা রুদ্রপ্রয়াগে অলকানন্দা-ভাগিরথী সঙ্গমে গেলে আমরা দেখতে পাব মিলিত হবার পরও কিছুদূর অবধি যে এসে মিলিত হল তার মিলিত ধারায় এক যুক্ত অথচ পৃথক অস্তিত্ব বজায় থাকে। প্রথম মিলনের উচ্ছাসে সে মাতোয়ারা । এটাই তার তুরীয় অবস্থা। বেশ কিছুদূর যাত্রার পর দুই মিলেমিশে একাকার । তৃতীয় পাদ হল মোহনা দশা ।
'নান্তঃপ্রজ্ঞম ....... । 7
ঋষি বলছেন চতুর্থ পাদ হল তুরীয় অবস্থা। এই অবস্থাতেই ক্রমে আত্মা পরমাত্মায় লীন । এসময়ে সে পূর্ববর্তী তিন দশার ( বহিপ্রজ্ঞ, অন্তঃপ্রজ্ঞ, উভয়প্রজ্ঞ ) কোনওটাই আর নয় । এই অবস্থায় আমি ই সে (সোঅহম), সে-ই আমি। আত্মা -পরমাত্মা একাকার ।
এই স্তর ঋষির ভাষায় ' শান্ত-শিব-অদ্বৈত ' অবস্থা।
ভারতে ধর্মালোচনায় যে নান্দনিক বাণীটি প্রচলিত তা হল ' সত্যম-শিবম-সুন্দরম'। এটি মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথের আজ্ঞায় জ্যোতিরিন্দ্রনাথ রূপ দেন। ফরাসি দার্শনিক Cousin Victor (1792-1867) বলেছিলেন Le Vai ( truth), Le beau (beautiful ), Le bon ( good) । এই ভাবধারায় অনুপ্রাণিত মহর্ষি তার পুত্রকে এর ভারতীয় রূপ দিতে বলেন ।
'সত্যম-শিবম-সুন্দরম ' অতি নান্দনিক কথা হলেও সত্যদ্রষ্টা ঋষির বাণী হল 'শান্তম-শিবম-অদ্বৈতম '। এর মধ্যেও এক উত্তরণের কথা বলা আছে । জীবাত্মা প্রথমে প্রবৃত্তির অস্থিরতাকে অতিক্রম করে শান্ত হবে। ক্রমশই সে শিবত্বে উপনীত হবে । সর্বশেষে তার অদ্বৈত অবস্থা। সেখানে আত্মা পরমাত্মা একাকার । দ্বিতীয় কিছু নেই । শঙ্করাচার্যের অদ্বৈতবাদ এই স্তরের । কিন্তু এ তত্ত্ব এ স্তরে না পৌছে সম্যক অনুধাবন সম্ভব নয় ।
- ক্রমশঃ
1। আত্মার পরমাত্মার প্রতি যাত্রা যদি প্রকৃতির স্বাভাবিক বিবর্তন হয় তাহলে তা ত্বরান্বিত করা সম্ভব কিরূপে ?
জীবাত্মার মনুষ্য জন্ম ধারণের পূর্ব পর্যন্ত যে যে জন্ম পেরিয়ে আসে তা প্রাকৃতিক বিবর্তনের মাধ্যমে । মানুষ জন্মে তার বুদ্ধি - মেধার বিকাশ ঘটায় সে তার পারিপার্শ্বিক জগতকে অনুধাবন, বিচার ও নিয়ন্ত্রণ করতে থাকে । ক্রমশই সে প্রকৃতির স্বাভাবিক সৃষ্টি -স্থিতি -লয় এর ছন্দের বাইরে এসে নিজস্ব বিদ্যা -বুদ্ধি ও জ্ঞান অর্জন করে এবং নিজস্ব এক ভিন্ন জগৎ গড়ে তোলে। আত্মা পরমাত্মার অংশ হওয়ার ফলে পরমব্রহ্মের সৃষ্টি-স্থিতি-লয়ের আংশিক ক্ষমতা তার ভেতরেই থাকে। এতে মানব সভ্যতার অগ্রগতি হয় বটে, তবে ক্রমশই সে বিশ্বপ্রকৃতির বিবর্তনের স্বাভাবিক গতিপথ থেকে চ্যুত হয়ে পড়ে । চ্যুত হয়ে মানুষ জন্ম-জন্মান্তরের আবর্তে পরে। আবার মানুষেরই রয়েছে সেই ক্ষমতা যাতে সে প্রকৃতির গতিপথে ফিরে আসতে পারে এবং প্রকৃতির গতিকে ত্বরান্বিত করতে পারে ।
মানুষ জৈবিক প্রয়োজনের অতিরিক্তভাবে ইন্দ্রিয়াদিকে বিনোদনের উপায় হিসাবে গ্রহন করলে rule of nature থেকে সে deviate করে এবং তার বিবর্তন মন্দীভূত হয় । প্রাচীন ঋষিরা প্রকৃতির এই বিবর্তনের পথ ( Journey of soul ) কে ত্বরান্বিত করার জন্য যোগাদি নানা পথের সন্ধান দিয়েছেন । যোগ অভ্যাসের ফলে ইন্দ্রিয়াদি ক্রমশই অন্তর্মুখী হতে থাকে এবং আত্মার যাত্রা accelerated হয় ।
2। দ্বিতীয় প্রশ্ন হল, তৃতীয় পাদে এসে আত্মা যদি বিশ্বযোনিতে প্রবেশ করে তাহলে চতুর্থ পাদে কি তফাৎ হয় ? পরমাত্মায় লীন হবার পর আত্মা পৃথক ভাবে তুরীয় অবস্থা অনুভব করে কি প্রকারে ?
যেকোন নদী মোহনা আমাদের বুঝতে সহায়ক হবে । এলাহাবাদ বা প্রয়োগের গঙ্গা - যমুনা বা রুদ্রপ্রয়াগে অলকানন্দা-ভাগিরথী সঙ্গমে গেলে আমরা দেখতে পাব মিলিত হবার পরও কিছুদূর অবধি যে এসে মিলিত হল তার মিলিত ধারায় এক যুক্ত অথচ পৃথক অস্তিত্ব বজায় থাকে। প্রথম মিলনের উচ্ছাসে সে মাতোয়ারা । এটাই তার তুরীয় অবস্থা। বেশ কিছুদূর যাত্রার পর দুই মিলেমিশে একাকার । তৃতীয় পাদ হল মোহনা দশা ।
'নান্তঃপ্রজ্ঞম ....... । 7
ঋষি বলছেন চতুর্থ পাদ হল তুরীয় অবস্থা। এই অবস্থাতেই ক্রমে আত্মা পরমাত্মায় লীন । এসময়ে সে পূর্ববর্তী তিন দশার ( বহিপ্রজ্ঞ, অন্তঃপ্রজ্ঞ, উভয়প্রজ্ঞ ) কোনওটাই আর নয় । এই অবস্থায় আমি ই সে (সোঅহম), সে-ই আমি। আত্মা -পরমাত্মা একাকার ।
এই স্তর ঋষির ভাষায় ' শান্ত-শিব-অদ্বৈত ' অবস্থা।
ভারতে ধর্মালোচনায় যে নান্দনিক বাণীটি প্রচলিত তা হল ' সত্যম-শিবম-সুন্দরম'। এটি মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথের আজ্ঞায় জ্যোতিরিন্দ্রনাথ রূপ দেন। ফরাসি দার্শনিক Cousin Victor (1792-1867) বলেছিলেন Le Vai ( truth), Le beau (beautiful ), Le bon ( good) । এই ভাবধারায় অনুপ্রাণিত মহর্ষি তার পুত্রকে এর ভারতীয় রূপ দিতে বলেন ।
'সত্যম-শিবম-সুন্দরম ' অতি নান্দনিক কথা হলেও সত্যদ্রষ্টা ঋষির বাণী হল 'শান্তম-শিবম-অদ্বৈতম '। এর মধ্যেও এক উত্তরণের কথা বলা আছে । জীবাত্মা প্রথমে প্রবৃত্তির অস্থিরতাকে অতিক্রম করে শান্ত হবে। ক্রমশই সে শিবত্বে উপনীত হবে । সর্বশেষে তার অদ্বৈত অবস্থা। সেখানে আত্মা পরমাত্মা একাকার । দ্বিতীয় কিছু নেই । শঙ্করাচার্যের অদ্বৈতবাদ এই স্তরের । কিন্তু এ তত্ত্ব এ স্তরে না পৌছে সম্যক অনুধাবন সম্ভব নয় ।
- ক্রমশঃ
Comments
Post a Comment