উপনিষদ ( মান্ডুক্যোপনিষদ 2) পর্ব 8

     অথর্ববেদের ঋষি জানালেন ওঁকার হল সৃষ্টির মূল । অ, উ এবং ম এই তিন ধ্বনি মিলিত 'ওম' এর vibration থেকেই জগতের সৃষ্টি বলে তিনি অনুধাবন করেছেন । ওম-ই পূর্ণ ব্রহ্ম । সর্বব্যাপী ব্রহ্ম ওম রূপে জীবাত্মার সাথে থেকে কিভাবে সকল কর্ম করছেন ও করাচ্ছেন ঋষি তা উপলব্ধি করে এই উপনিষদটিতে ব্যক্ত করেছেন ।
  'ওম..     সর্বম  ...ত্রিকালতীতং..... 1
   'সর্বম  ....ব্রহ্ম ....চতুষ্পদ   ।    2
   'জাগরিত  ....     প্রথম পাদঃ ।  3
  '  স্বপ্ন স্থানঃ  .... দ্বিতীয় পাদঃ । 4
  ' যত্র সুপ্তো .....  তৃতীয় পাদঃ । 5
 ' এষ সর্বেশ্বর .... ভূতানাম  । 6
    সবই 'ওম' অক্ষরাত্মক । ইন্দ্রিয় দ্বারা অনুভূত এবং ইন্দ্রিয়ের অগোচরে যে জগৎ সবই এর স্বরূপ । জগতের অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যত তিনটি কাল এবং এই ত্রিকালের বাইরের যে অনন্তকাল সবই ওঙ্কার । 'ওম' পরমাত্মা বা ব্রহ্মের প্রতীক ।
     এই ওম বা ব্রহ্ম সীমার মাঝেও আছেন, আবার আছেন অসীমেও। তিনিই আত্মা, তিনিই পরমাত্মা । তিনিই বিশ্বজুড়ে আছেন, আবার অন্তর্যামী আত্মা  রূপে জীবের ভেতরে অবস্থান করছেন ।
    এই আত্মা চারটি অংশে বিভক্ত হয়ে জীবদেহে থেকে তাকে পরিচালিত করছেন । এই চারটি অংশকে বলা হয় চতুষ্পাদ ।
   ব্রহ্ম অখন্ড হয়েও কিভাবে চার অংশে বিভক্ত হলেন তার ব্যাখ্যায় বলা যায় হস্ত, পদ, চক্ষু একই দেহের অঙ্গ। তাদের কর্ম পৃথক হলেও মূল শরীরেরই কর্ম সাধন করে । সেরূপ ব্রহ্ম জীবাত্মার মধ্যে চতুষ্পাদে বিভক্ত হয়ে কর্মরত ।
    আত্মা বা ব্রহ্ম জীবের চারটি অবস্থায় চার রকম ভাবে কর্মরত । জীবের চার অবস্থা হল জাগ্রত, স্বপ্ন, সুষুপ্তি এবং তুরীয় ।
   প্রথম পাদ হল জাগ্রত অবস্থা , যখন জীবের সকল ইন্দ্রিয় সজাগ । আত্মা বাইরের বিষয় জ্ঞানে মগ্ন । বিষয়াদি হল শব্দ - স্পর্শ - রূপ -রস - গন্ধ । এগুলি স্থুল বাহ্যিক বিষয়, জাগ্রত অবস্থায় জীবাত্মা তার সাত অঙ্গ ( 2 চক্ষু, 2 কর্ণ, জিহ্বা, নাসিকা ও ত্বক) উনিশটি মুখ ( 5 জ্ঞানেন্দ্রিয়, 5 কর্মেন্দ্রিয়, 5 প্রাণ বায়ু, মন,বুদ্ধি,  চিত্ত ও অহংকার) দিয়ে উপভোগ করছে । জীব যখন জাগ্রত থাকে তখন বাহ্যিক বিষয়ের জ্ঞান নিয়ে আত্মা হন বৈশ্বানর । ব্রহ্ম তথা পরমাত্মার অংশ হিসাবে এটি আত্মার প্রথম পাদ ।
  আত্মার দ্বিতীয় পাদ বা অবস্থা হল তৈজস । বাইরের জগৎ তখন তার পুষ্টি সাধন করে না, খোরাক যোগায় অন্তর্জগৎ। এই তৈজস আত্মাকে বলে প্রবিবিক্তভুক । অর্থাৎ সূক্ষ্ম বস্তুকে আশ্রয় করে আত্মা তখন অন্তরে থেকে অন্তরপ্রজ্ঞ হয়ে ওঠে । 'তেজ' থেকে 'তৈজস' কথাটি এসেছে । অন্তরের তেজ বা জ্যোতি তে সে জ্ঞানী । ঘুমের যে স্তরে স্বপ্নের বিস্তার হয় সে অবস্থায় নানা ঘটনা বা নির্দেশ সে লাভ করে থাকে অনেক সময় ।
    তৃতীয় পাদ বা অবস্থা সুষুপ্তি অবস্থার সাথে তুলনীয় যখন কামনা বাসনা নেই । সুষুপ্তি হল এমন গভীর ঘুমের অবস্থা যখন সে স্বপ্নও দেখে না । জ্ঞান ও আনন্দকে উপলব্ধি করে আত্মা এ অবস্থায় প্রাজ্ঞ হয়েছে ।
   সর্বশেষ চতুর্থটি হল আত্মার তুরীয় অবস্থা। এটাই চতুর্থ পাদ ।
ক্রমশঃ

Comments

Popular posts from this blog

কঠোপনিষদ ২০

উপনিষদ পর্ব 1

মহাভারত শ্লোক