উপনিষদ পর্ব। 14

  'বায়ুরনিলমভৃতমথেদ্দং ভস্মান্তর শরীরম্ ।
 ওঁ ক্রতো স্মরঃ, কতৃং স্মরঃ, কৃতং স্মরঃ ।'- ঈশ - 17
  উপনিষদের ঋষি বলছেন, প্রাণবায়ু মহাশূন্যে মহাবায়ুর সাথে মিলে যাবে। দেহ ছাই হবে । যজ্ঞ কে স্মরণ কর । স্মরণ কর কি করার ছিল এবং কি করেছ ।
    এই শ্লোকটির অন্যত্র একটু ভিন্ন version পেয়েছি । সেখানে দুবার 'কি করেছ' বলা আছে ।
  'ক্রতু' অর্থ যজ্ঞ । সব কাজ ফেলে যজ্ঞ করার কথা ভাববো কেন এটা একটু বুঝতে চেষ্টা করব । পুরাণাদি রামায়ণ,মহাভারত পড়লে মনে হয় সে সময়ে ক্ষত্রিয়-ব্রাহ্মণরা কথায় কথায় যজ্ঞ করতেন।  অশ্বমেধাদি নানা যজ্ঞ নিশ্চয়ই করা হত, কিন্তু 'যজ্ঞ' কথাটির অন্তর্নিহিত অর্থও আছে ।
   রাজা জনক চতুরাশ্রম কখন কিভাবে পালনীয় এ প্রশ্ন নিয়ে যাজ্ঞবল্কের কাছে আসেন। যা কথোপকথন হয় তা নিয়ে ' যাজ্ঞবল্ক উপনিষদ ' রচিত । ঋষি বলেন 'যজ্ঞোবপীত বা যজ্ঞসূত্র ' পরিত্যাগ করে সন্যাস নিতে হবে । সেখানে উপস্থিত অত্রিমুনি প্রশ্ন করেন, ব্রাহ্মণ কেন যজ্ঞোবপীত ত্যাগ করবে ? জবাবে যাজ্ঞবল্ক বলেন,
  "ইদং প্রণবম এবাস্য তদ যজ্ঞোবপীতং য আত্মা '।
 অর্থাৎ আত্মাকে জানাই হল যজ্ঞ । সংসারাশ্রমে বাহ্যিক যজ্ঞের মাধ্যমে আত্মাকে জানার চেষ্টা হয় । সেই কর্ম সম্পাদনে ব্রাহ্মণ উপবীত ধারণ করেন। সন্যাস গ্রহণের সময় ধরে নেওয়া হয় তিনি অনেকটাই আত্মজ্ঞানী । তার নিজের প্রয়োজনে বাহ্যিক যজ্ঞের আর আবশ্যকতা নেই । তাই উপবীত নিস্প্রয়োজন ।
 ( এর আগেই যাজ্ঞবল্ক বলেছেন যদি বৈরাগ্য আসে তবে চতুরাশ্রম পালনেরও প্রয়োজন নেই । সরাসরি সন্যাস নিতে পারে )।
  তাহলে আমরা দেখলাম ঈশোপনিষদ- এ ঋষি বলছেন, দিন শেষ হয়ে আসছে । যজ্ঞ তথা আত্মজ্ঞান লাভের চেষ্টা কর । ভাবো কি করার ছিল আর কি করেছ ।
  চাণক্য এমনটাই বলেছেন,
  'অনিত্যানি শরীরাণি বিভবো নৈব শাশ্বতঃ ।
  নিত্যং সন্নিহিত মৃত্যুঃ কর্তব্যো ধর্মসঞ্চয়ঃ ।'
   - শরীর, ধনাদি সকলই অনিত্য। প্রতিদিন মৃত্যুর দিকে চলেছি । ধর্ম সঞ্চয়ই একমাত্র কর্তব্য ।
   এখানে ধর্ম অর্থ religion নয় Spiritualism । আত্মকর্তব্য । নিজের প্রতি, পরিবারের প্রতি,  দেশ-সমাজ-জাতির প্রতি কর্তব্য পালন করাও ধর্ম । ন্যায়, সততা, স্বার্থহীনতাও মানব ধর্ম । চাণক্য তাই করেছেন । তাই তিনি প্রণম্য । এসব ধর্ম পালন করার পাশাপাশি চলবে আত্ম জিজ্ঞাসা । আত্মদর্শন । তবেই মুক্তি । তবেই কৈবল্য ।


Comments

Popular posts from this blog

কঠোপনিষদ ২০

উপনিষদ পর্ব 1

মহাভারত শ্লোক