উপনিষদ পর্ব ( ঈশ) 2
"...তেন ত্যক্তেন ভুঞ্জিথা ..."
- তাকে সঙ্গে নিয়ে ত্যাগের মধ্যে দিয়ে ভোগ করতে হবে ।
উপনিষদের এও আর এক riddle বা puzzle । তাকে সঙ্গে নিতে হবে, ভোগ করতে হবে, তাও ত্যাগের মাধ্যমে ।
এর আগে সাংখ্য বা বৌদ্ধ দর্শন পাঠ করতে গিয়ে আমরা দেখেছিলাম ঈশ্বর নিয়ে আলোচনা নেই । এর অর্থ এমন ধরে নেওয়া অনুচিত যে ওই মতাবলম্বীরা নিরীশ্বরবাদী । বুদ্ধকে ঈশ্বর সম্পর্কে প্রশ্ন করলে উনি নীরব থেকেছেন । বিষয়টি খানিক এমন যে ঈশ্বর থাকলে আছেন, আমরা আমাদের কাজ করব । শ্রীরামকৃষ্ণের মতে ' আম খেলেই হল, কি গাছ কোথায় গাছ, এতো জেনে কি হবে' ।
সাংখ্য প্রকৃতি ও পুরুষের (আত্মা ) সম্পর্কের বিবর্তন এর দশা বর্ণনা করেছে । তার সাথে পাতঞ্জল যোগ দর্শন যুক্ত করলে ওই দর্শন সম্পুর্ণ হয় । বুদ্ধ নির্বাণ লাভের কথা বললেন । কিন্তু সর্বজনপূজ্য রামকৃষ্ণের বক্তব্যকে বিরোধিতা করেই বলতে হয় সার্বিক না হলেও কিছু মানুষের জ্ঞান তৃষ্ণা নিত্য নতুন জানার দিকে চিরকাল ছিল,আছে এবং থাকবেও ।
এই জ্ঞান তৃষার কারণে প্রাচীন ভারতীয় ঋষিরা সমগ্র বিদ্যাকে চার ভাগে বিভক্ত করেছিলেন ।
'আন্বীক্ষিকী-ত্রয়ী-বার্তা দন্ডনীতিশ্চেতিবিদ্যা'
1। আন্বীক্ষিকী- যুক্তি-বিচারাত্মক তর্কবিদ্যা।
2। ত্রয়ী - অথর্ববেদ বাদ দিয়ে তিন বেদ ।
3। বার্তা - কৃষি, বানিজ্য শিল্প ইত্যাদি।
4। দন্ডনীতি - শাসন ও বিচার ব্যবস্থা ।
এই চার বিদ্যার মধ্যে ত্রয়ী বা বেদমূলক অধ্যাত্ম বিদ্যাকে পরম বা চরম বিদ্যা বলে ।
'য এতদবিদুরমৃতান্তে ভবতি ' - যারা একে জানে তারাই অমৃত হয় । ঈশ বা ঈশ্বর এখানে omnipresent, omnipotent ।
শ্রুতি আবার বলছে -
'ইহ চেৎ অবেদীদথ সত্যমস্তি
ন চেৎ ইহাবেদীন্মহতী বিনষ্টিঃ' ।
- এখানে থেকে এ জীবনে তাকে জানতে পারলে জীবন সত্য, না হলে মহান মানব জনম নষ্ট ।
ব্রহ্ম বা সর্বব্যাপী ঈশ্বরকে জানা যায় যে বিদ্যায় তাকে পরাবিদ্যা বলে । বাকি সকল বিদ্যা হল অবিদ্যা বা অপরাবিদ্যা।
ঋষিরা অবিদ্যা বা অপরাবিদ্যাকে তুচ্ছ জ্ঞানে বর্জনীয় বলেন নি । বলেছেন -
'অবিদ্যায়া মৃত্যুং তীর্ত্বা বিদ্যয়াহমৃতমশ্নুতে '
- অর্থাৎ অপরাবিদ্যার যথার্থ অনুশীলনের মাধ্যমে মৃত্যুর কারণস্যরূপ কর্মকে অতিক্রম করে অমর্ত হওয়া যায় । আরও বিস্তারিত বললে বলা যেতে পারে, অপরাবিদ্যার মাধ্যমে অবিদ্যারূপ কর্ম সাধন করতে হবে, নিজে অধঃপতিত না হয়ে ইহলৌকিক ও পারলৌকিক অভ্যুদয় ঘটাতে হবে এবং এর পরে পরাবিদ্যার মাধ্যমে অমৃতত্ব লাভ করতে হবে ।
সোজা কথায় আমার দায়িত্ব-কর্ম ভালো লাগছে না বলে সব ছেড়ে গাছতলায় ধ্যানে বসে গেলাম , এমন কথা বৈদিক ঋষিরা বলেননি ।
দলে দলে ঘর ছেড়ে সন্ন্যাসী হওয়ার কথা বুদ্ধ বা শঙ্করাচার্যের আগে ভারতে ছিল না । কেউ কেউ তীব্র বৈরাগ্যবশতঃ ঘর ছাড়লেও তা ছিল বিচ্ছিন্ন ঘটনা । সংসার বিমুখ কর্তব্যত্যাগী মানুষকে কোনোভাবেই উৎসাহ দেওয়া হত না। এভাবেই চতুরাশ্রমের উদ্ভব । সেখানে ব্রহ্মচর্য, গার্হস্থ্য, বানপ্রস্থের পর তাই সন্ন্যাস -এর স্থান ।
তাই বলা হল, ভোগ (সুভোগ দুর্ভোগ দুইই) করতে করতে ত্যাগ কর বা ত্যাগ করতে করতে ভোগ কর ।
বেদকে বলা হল অধ্যাত্ম মন্দিরে প্রবেশের প্রবেশ দ্বার ।
' প্রত্যক্ষেনানুমিত্যা বা যস্তু পারো না বুধ্যতে
এবং বিন্দন্তি বেদেন তস্মাৎ বেদস্য বেদতা '।
- প্রত্যক্ষ অনুমানাদি কোন উপায়েই যে তত্বকে বুদ্ধিগম্য করা যায় না, এমন অব্যক্ত তত্বের সংবাদ বেদের দ্বারা জানা যায় । এটাই বেদের বেদত্ব ।
বেদের দুটি কান্ড । কর্ম কান্ড ও জ্ঞান কান্ড । সংহিতা, ব্রাহ্মণ, আরণ্যক হল কর্ম কান্ড । উপনিষদ হল জ্ঞান কান্ড ।
' উপসমীপেনিষীদত্যনয়েত্যুপনিষদ '
- যা আত্মজিজ্ঞাসু বা মুমুক্ষু মানুষকে তার (ঈশ্বর ) সমীপে উপনীত করায় তাই হল উপনিষদ । এটি বেদের অন্ত ।
- ক্রমশঃ
- তাকে সঙ্গে নিয়ে ত্যাগের মধ্যে দিয়ে ভোগ করতে হবে ।
উপনিষদের এও আর এক riddle বা puzzle । তাকে সঙ্গে নিতে হবে, ভোগ করতে হবে, তাও ত্যাগের মাধ্যমে ।
এর আগে সাংখ্য বা বৌদ্ধ দর্শন পাঠ করতে গিয়ে আমরা দেখেছিলাম ঈশ্বর নিয়ে আলোচনা নেই । এর অর্থ এমন ধরে নেওয়া অনুচিত যে ওই মতাবলম্বীরা নিরীশ্বরবাদী । বুদ্ধকে ঈশ্বর সম্পর্কে প্রশ্ন করলে উনি নীরব থেকেছেন । বিষয়টি খানিক এমন যে ঈশ্বর থাকলে আছেন, আমরা আমাদের কাজ করব । শ্রীরামকৃষ্ণের মতে ' আম খেলেই হল, কি গাছ কোথায় গাছ, এতো জেনে কি হবে' ।
সাংখ্য প্রকৃতি ও পুরুষের (আত্মা ) সম্পর্কের বিবর্তন এর দশা বর্ণনা করেছে । তার সাথে পাতঞ্জল যোগ দর্শন যুক্ত করলে ওই দর্শন সম্পুর্ণ হয় । বুদ্ধ নির্বাণ লাভের কথা বললেন । কিন্তু সর্বজনপূজ্য রামকৃষ্ণের বক্তব্যকে বিরোধিতা করেই বলতে হয় সার্বিক না হলেও কিছু মানুষের জ্ঞান তৃষ্ণা নিত্য নতুন জানার দিকে চিরকাল ছিল,আছে এবং থাকবেও ।
এই জ্ঞান তৃষার কারণে প্রাচীন ভারতীয় ঋষিরা সমগ্র বিদ্যাকে চার ভাগে বিভক্ত করেছিলেন ।
'আন্বীক্ষিকী-ত্রয়ী-বার্তা দন্ডনীতিশ্চেতিবিদ্যা'
1। আন্বীক্ষিকী- যুক্তি-বিচারাত্মক তর্কবিদ্যা।
2। ত্রয়ী - অথর্ববেদ বাদ দিয়ে তিন বেদ ।
3। বার্তা - কৃষি, বানিজ্য শিল্প ইত্যাদি।
4। দন্ডনীতি - শাসন ও বিচার ব্যবস্থা ।
এই চার বিদ্যার মধ্যে ত্রয়ী বা বেদমূলক অধ্যাত্ম বিদ্যাকে পরম বা চরম বিদ্যা বলে ।
'য এতদবিদুরমৃতান্তে ভবতি ' - যারা একে জানে তারাই অমৃত হয় । ঈশ বা ঈশ্বর এখানে omnipresent, omnipotent ।
শ্রুতি আবার বলছে -
'ইহ চেৎ অবেদীদথ সত্যমস্তি
ন চেৎ ইহাবেদীন্মহতী বিনষ্টিঃ' ।
- এখানে থেকে এ জীবনে তাকে জানতে পারলে জীবন সত্য, না হলে মহান মানব জনম নষ্ট ।
ব্রহ্ম বা সর্বব্যাপী ঈশ্বরকে জানা যায় যে বিদ্যায় তাকে পরাবিদ্যা বলে । বাকি সকল বিদ্যা হল অবিদ্যা বা অপরাবিদ্যা।
ঋষিরা অবিদ্যা বা অপরাবিদ্যাকে তুচ্ছ জ্ঞানে বর্জনীয় বলেন নি । বলেছেন -
'অবিদ্যায়া মৃত্যুং তীর্ত্বা বিদ্যয়াহমৃতমশ্নুতে '
- অর্থাৎ অপরাবিদ্যার যথার্থ অনুশীলনের মাধ্যমে মৃত্যুর কারণস্যরূপ কর্মকে অতিক্রম করে অমর্ত হওয়া যায় । আরও বিস্তারিত বললে বলা যেতে পারে, অপরাবিদ্যার মাধ্যমে অবিদ্যারূপ কর্ম সাধন করতে হবে, নিজে অধঃপতিত না হয়ে ইহলৌকিক ও পারলৌকিক অভ্যুদয় ঘটাতে হবে এবং এর পরে পরাবিদ্যার মাধ্যমে অমৃতত্ব লাভ করতে হবে ।
সোজা কথায় আমার দায়িত্ব-কর্ম ভালো লাগছে না বলে সব ছেড়ে গাছতলায় ধ্যানে বসে গেলাম , এমন কথা বৈদিক ঋষিরা বলেননি ।
দলে দলে ঘর ছেড়ে সন্ন্যাসী হওয়ার কথা বুদ্ধ বা শঙ্করাচার্যের আগে ভারতে ছিল না । কেউ কেউ তীব্র বৈরাগ্যবশতঃ ঘর ছাড়লেও তা ছিল বিচ্ছিন্ন ঘটনা । সংসার বিমুখ কর্তব্যত্যাগী মানুষকে কোনোভাবেই উৎসাহ দেওয়া হত না। এভাবেই চতুরাশ্রমের উদ্ভব । সেখানে ব্রহ্মচর্য, গার্হস্থ্য, বানপ্রস্থের পর তাই সন্ন্যাস -এর স্থান ।
তাই বলা হল, ভোগ (সুভোগ দুর্ভোগ দুইই) করতে করতে ত্যাগ কর বা ত্যাগ করতে করতে ভোগ কর ।
বেদকে বলা হল অধ্যাত্ম মন্দিরে প্রবেশের প্রবেশ দ্বার ।
' প্রত্যক্ষেনানুমিত্যা বা যস্তু পারো না বুধ্যতে
এবং বিন্দন্তি বেদেন তস্মাৎ বেদস্য বেদতা '।
- প্রত্যক্ষ অনুমানাদি কোন উপায়েই যে তত্বকে বুদ্ধিগম্য করা যায় না, এমন অব্যক্ত তত্বের সংবাদ বেদের দ্বারা জানা যায় । এটাই বেদের বেদত্ব ।
বেদের দুটি কান্ড । কর্ম কান্ড ও জ্ঞান কান্ড । সংহিতা, ব্রাহ্মণ, আরণ্যক হল কর্ম কান্ড । উপনিষদ হল জ্ঞান কান্ড ।
' উপসমীপেনিষীদত্যনয়েত্যুপনিষদ '
- যা আত্মজিজ্ঞাসু বা মুমুক্ষু মানুষকে তার (ঈশ্বর ) সমীপে উপনীত করায় তাই হল উপনিষদ । এটি বেদের অন্ত ।
- ক্রমশঃ
Comments
Post a Comment