Posts

Showing posts from April, 2017

উপনিষদ পর্ব 16

    যদিও দুই শতাধিক উপনিষদের নাম পাওয়া যায় পন্ডিতগণ মনে করেন তার মধ্যে 108 টি গ্রহণযোগ্য । এদের মধ্যে আবার ঈশ, কেন, কঠ, প্রশ্ন, ঐতরেয়, ছান্দোগ্য, বৃহদারন্যক ইত্যাদি 18 হল প্রাচীনতম । এগুলি বৈদিক যুগে রচিত । যদিও অন্যগুলি পরবর্তীকালে রচিত আমরা আলোচনায় সেগুলি বর্জন করব না । কারণ সব উপনিষদই গুরু-পরম্পরায় কিছু না কিছু সাধন-উপলব্ধির ফসল। প্রাচীন হলেই মূল্যবান এবং পরবর্তী কালের হলে বর্জনীয়, এমন কথা আমরা মানব না ।   এমনই এক হল যাজ্ঞবল্ক উপনিষদ । এর আগে ঈশোপনিষদ আলোচনা প্রসঙ্গে আমরা এই উপনিষদটি থেকে জেনেছিলাম যে আত্মাকে জানাই হল প্রকৃত যজ্ঞ। জনক রাজার প্রশ্নের উত্তরে যাজ্ঞবল্ক জানিয়েছেন ব্রহ্মচর্যের পরে যদি মনে বৈরাগ্য আসে তাহলে গার্হস্থ্য, বানপ্রস্থের পর্ব পালন না করে সরাসরিই প্রব্রজ্যা বা সন্যাস গ্রহণের বাধা নেই । ঋষি যাজ্ঞবল্ক অত্রিকে বলেছেন এ পথেই পরমাত্মাকে জানা যায়, এভাবেই আসক্তিশূন্য হয়ে পরমহংস হওয়া যায় । বলছেন , 'যতীনাং তদুপাদেয়ং পারহংস পরং পদম্" - যতি বা যোগী বা সন্যাসীরা এ পথেই পরম পদ বা ব্রহ্ম বিদ্যা লাভ করেছেন । এভাবেই আসে মুক্তি ।   উপনিষদের পাঠ থেকে আমরা ...

উপনিষদ ( ঈশ + মুন্ডক ) পর্ব ১৫

                                             ' তেন ত্যক্তেন ভুঞ্জিথা"        -- তাকে ( ঈশ ) সংগে নিয়ে ত্যাগের মাধ্যমে ভোগ কর। ঈশোপনিষদের এই প্রথম শ্লোকটির বহু আলোচনা এবং বহু ব্যাখ্যা হয়েছে। এটি নিয়ে একটু বিস্তারিত আলোচনার প্রয়োজন।    যে জ্ঞান লাভ হলে সকল জ্ঞান বা সকল বিদ্যা লাভ হয় তাকে 'ব্রহ্মবিদ্যা' বলে। যিনি প্রথম এই বিদ্যা লাভ করেছিলেন তাকে 'ব্রহ্মা' নাম দিয়ে দেবতার আসনে বসানো হয় ( Deity, not God) । মুন্ডকোপনিষদ -এ প্রথম খন্ডের ৯ টি শ্লোকে বলা আছে, ব্রহ্মার পুত্র অথর্বা, অঙ্গিরা, সত্যবহ এবং শৌণক হয়ে ব্রহ্মবিদ্যার কথা প্রচারিত হয়। শৌণকের প্রশ্নের উত্তরে ঋষি অঙ্গিরা জানান, ব্রহ্মবিদ্যা পরা এবং অপরা এই দুই ভাগে বিভক্ত।    পরা বিদ্যা - যার দ্বারা পরমাত্মার জ্ঞানলাভ হয় ।    অপরা বিদ্যা - যার দ্বারা ইহলৌকিক ও পারলৌকিক ভোগাদির জ্ঞান লাভ হয়। ঈশোপনিষদের প্রথম শ্লোকে বলা হচ্ছে,       ' ঈশা বাস্যমিদং সর্বং যত্...

উপনিষদ পর্ব। 14

  'বায়ুরনিলমভৃতমথেদ্দং ভস্মান্তর শরীরম্ ।  ওঁ ক্রতো স্মরঃ, কতৃং স্মরঃ, কৃতং স্মরঃ ।'- ঈশ - 17   উপনিষদের ঋষি বলছেন, প্রাণবায়ু মহাশূন্যে মহাবায়ুর সাথে মিলে যাবে। দেহ ছাই হবে । যজ্ঞ কে স্মরণ কর । স্মরণ কর কি করার ছিল এবং কি করেছ ।     এই শ্লোকটির অন্যত্র একটু ভিন্ন version পেয়েছি । সেখানে দুবার 'কি করেছ' বলা আছে ।   'ক্রতু' অর্থ যজ্ঞ । সব কাজ ফেলে যজ্ঞ করার কথা ভাববো কেন এটা একটু বুঝতে চেষ্টা করব । পুরাণাদি রামায়ণ,মহাভারত পড়লে মনে হয় সে সময়ে ক্ষত্রিয়-ব্রাহ্মণরা কথায় কথায় যজ্ঞ করতেন।  অশ্বমেধাদি নানা যজ্ঞ নিশ্চয়ই করা হত, কিন্তু 'যজ্ঞ' কথাটির অন্তর্নিহিত অর্থও আছে ।    রাজা জনক চতুরাশ্রম কখন কিভাবে পালনীয় এ প্রশ্ন নিয়ে যাজ্ঞবল্কের কাছে আসেন। যা কথোপকথন হয় তা নিয়ে ' যাজ্ঞবল্ক উপনিষদ ' রচিত । ঋষি বলেন 'যজ্ঞোবপীত বা যজ্ঞসূত্র ' পরিত্যাগ করে সন্যাস নিতে হবে । সেখানে উপস্থিত অত্রিমুনি প্রশ্ন করেন, ব্রাহ্মণ কেন যজ্ঞোবপীত ত্যাগ করবে ? জবাবে যাজ্ঞবল্ক বলেন,   "ইদং প্রণবম এবাস্য তদ যজ্ঞোবপীতং য আত্মা '।  অর্থাৎ আত্মাকে জানাই হল যজ্ঞ ।...

উপনিষদ ( মান্ডুক্যোপনিষদ শেষ পর্ব ) 13

( শ্রী চিত্তরঞ্জন ঘোষাল মহাশয়ের সহায়তায় )    জাগ্রত অবস্থায় (প্রথম পাদ) জীবের যাবতীয় ধ্যান-জ্ঞান-কাজ  যখন ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য জগতকে নিয়ে, তার চুড়ান্ত অবস্থায় আত্মা ইন্দ্রিয়াদি সকল বিষয়ে জ্ঞানী । এই অবস্থা হল বর্ণমালার প্রথম বর্ণ 'অ'। শরীরে এর অবস্থান নাভিতে।   আত্মার দ্বিতীয়পাদ, বর্ণমালার 'উ'। এ অবস্থায় আত্মা স্থুল থেকে সূক্ষ্ম জ্ঞানের দিকে চলে এসেছে । শরীরে এর অবস্থান নাভি অতিক্রম করে হৃদয়ে । যে এখানে 'উ' মাত্রাকে উপলব্ধি করেন সৃষ্টি রহস্যের দ্বার তার কাছে খুলে যায় ।   এরপর যাত্রা বর্ণমালার শেষ  (বর্গের) 'ম' অক্ষরে। এর স্থান আজ্ঞাচক্রে। এ অবস্থায় আত্মা প্রাজ্ঞ । আত্মা এসময়ে সূক্ষ্ম থেকে কারণে এসে হাজির ।    চতুর্থ পাদ আত্মার তুরীয় অবস্থা। স্থান সহস্রার (মাথায়)। অ-উ-ম একাকার হয়ে এখানে 'ওম' ধ্বনি তে উচ্চারিত ।   ঋষি জানিয়েছেন ওঙ্কার তথা প্রণব মন্ত্রের সাধনাই হল পরমাত্মার সাধনা। এই সাধনায় আত্মা প্রথমে 'শান্ত' হবে, পরে 'শিব' হয়ে পরমাত্মায় একাকার হয়ে 'অদ্বৈত' হবে। এই 'শান্তম-শিবম-অদ্বৈতম ' হল উপনিষদের বাণী । সমাপ্...

উপনিষদ ( মান্ডুক্যোপনিষদ 6 ) পর্ব 12

'সোহয়মাত্রাধ্যক্ষরম্ ....অকার উকার মকার ইতি ' । 8 'জাগরিতস্থানো ... য এবং বেদ ' । 9 'স্বপ্নস্থানস্তৈজস ..... য এবং বেদ । 10 'অমাত্রশ্চতুর্থোহব্যবহার্যঃ... য এবং বেদ । 11    উপনিষদের ঋষিরা বারংবার 'অক্ষর' কথার উপর জোর দিয়েছেন । পরমব্রহ্মকে বলেছেন 'অক্ষরপুরুষ'। এখানে ঋষি জানালেন 'ওঙ্কার ' - এই অক্ষরই হল আত্মা, যা পরমাত্মার অংশ। অ-উ-ম এই তিন হল ওঙ্কারের মাত্রা । ওঙ্কারের প্রতিটি মাত্রাই হল আত্মার প্রথম তিন পাদ। অ-উ-ম এই তিন মাত্রা যখন মিলেমিশে একাকার হল তখন উচ্চারিত হল 'ওম', এই ওম হল আত্মার চতুর্থ পাদ, তুরীয় অবস্থা।   আর পাঁচটা ভাষার সাথে সংস্কৃত ভাষার বর্ণমালার এক বিশেষ তফাত আছে । সংস্কৃত বর্ণমালা শ্রেণীবদ্ধভাবে উচ্চারণ স্থান ভেদে সারিবদ্ধ । এর ব্যঞ্জনবর্ণের 5 টি বর্গ, প্রতি বর্গে 5 টি করে বর্ণমালা । এটি কেবলমাত্র সাধারণ মানুষের মুখে মুখে সৃষ্ট হতে পারে না । এর পিছনে সুগভীর ভাবনা ও দর্শন আছে । শব্দের প্রয়োজনে স্বাধীন স্বরবর্ণ এবং য,র থেকে হ পর্যন্ত বর্নগুলিও বিশেষ ব্যঞ্জনাময় ।   ধ্বনি বা বর্ণের ধর্ম হল কম্পন তোলা । যোগ এবং তন...

উপনিষদ ( মান্ডুক্যোপনিষদ 5 ) পর্ব 11

   বন্ধু কয়েকটি মূল্যবান প্রশ্ন করেছেন । জনসমক্ষেই তা নিয়ে আলোচনা করার উদ্দেশ্য, তাহলে অন্যরাও অংশগ্রহণ করতে পারবেন এবং আমার ভ্রান্তি হলে আলোকপাত করতে পারবেন ।   1। আত্মার পরমাত্মার প্রতি যাত্রা যদি প্রকৃতির স্বাভাবিক বিবর্তন হয় তাহলে তা ত্বরান্বিত করা সম্ভব কিরূপে ?   জীবাত্মার মনুষ্য জন্ম ধারণের পূর্ব পর্যন্ত যে যে জন্ম পেরিয়ে আসে তা প্রাকৃতিক বিবর্তনের মাধ্যমে । মানুষ জন্মে তার বুদ্ধি - মেধার বিকাশ ঘটায় সে তার পারিপার্শ্বিক জগতকে অনুধাবন, বিচার ও নিয়ন্ত্রণ করতে থাকে । ক্রমশই সে প্রকৃতির স্বাভাবিক সৃষ্টি -স্থিতি -লয় এর ছন্দের বাইরে এসে নিজস্ব বিদ্যা -বুদ্ধি ও জ্ঞান অর্জন করে এবং নিজস্ব এক ভিন্ন জগৎ গড়ে তোলে। আত্মা পরমাত্মার অংশ হওয়ার ফলে পরমব্রহ্মের সৃষ্টি-স্থিতি-লয়ের আংশিক ক্ষমতা তার ভেতরেই থাকে। এতে মানব সভ্যতার অগ্রগতি হয় বটে, তবে ক্রমশই সে বিশ্বপ্রকৃতির বিবর্তনের স্বাভাবিক গতিপথ থেকে চ্যুত হয়ে পড়ে । চ্যুত হয়ে মানুষ জন্ম-জন্মান্তরের আবর্তে পরে।  আবার মানুষেরই রয়েছে সেই ক্ষমতা যাতে সে প্রকৃতির গতিপথে ফিরে আসতে পারে এবং প্রকৃতির গতিকে ত্বরান্বিত করতে পারে ...

উপনিষদ ( মান্ডুক্যোপনিষদ 4 ) পর্ব 10

    দ্বিতীয়পাদ --   'স্বপ্ন স্থানঃ অন্তরপ্রজ্ঞ ....প্রবিবিক্তভুক তৈজসো '   - বহির্জগতের প্রতি মোহ সমাপ্তে আত্মার এখন স্বপ্নের মতো অবস্থা।  কারণ জাগ্রত অবস্থায় যা কিছু দেখছি বা শুনছি সবকিছুই সত্য রূপে প্রতীয়মান হয় । আত্মার এই অবস্থায় সকলই যেন স্বপ্নবৎ। আমাদের ইন্দ্রিয়াদি ক্লান্ত হলে শরীর নিদ্রিত হয় । সেসময় স্বপ্ন আবির্ভাবের অনুকূল। সেরূপ সপ্ত- অঙ্গ ও উনিশটি মুখ তাদের বাহ্যিক ব্যবহারে ক্লান্ত হলে বহির্জগৎ আর আত্মার পুষ্টি বা খোরাক যোগায় না, তখনই শুরু হয় অন্তর্জগতের যাত্রা বা অন্বেষণ। স্বপ্ন যে দেখে সে ছাড়া যেমন অপর কেউ অনুধাবন করে না, সেরূপ দ্বিতীয় পাদে আত্মা সূক্ষ্ম জগতের যে সকল উপভোগ লাভ করে তা দ্বিতীয় কাউকে প্রমাণ করতে পারে না । এই অবস্থাতেও ভোগ আছে । তবে তা মনোগত,  দেহগত নয়,  মননের ।    'প্রবিবিক্তভুক ' কথাটির অর্থ হল ' সূক্ষ্ম জগতের ভোক্তা '। এই অবস্থায় আত্মা বাহ্যিক স্থুল বিষয়ের পরিবর্তে অন্তর্জগতের সূক্ষ্ম বিষয়কে উপভোগ করে আপন 'তেজস ' বা জ্যোতির দ্বারা । তৃতীয় পাদ --    '.....সুষুপ্তস্থান একীভূত প্রজ্ঞানঘন ...' -- গভীর ...

উপনিষদ ( মান্ডুক্যোপনিষদ 3) 9

     বেলুনের মধ্যকার বাতাস যেরূপ বাইরে ব্যপ্ত বাতাসেরই অংশ, জীবাত্মা তেমনই সমগ্র পরমাত্মার অংশ মাত্র । বেলুন ছিদ্র হলে যেমন বাতাস নির্গত হয়ে সমগ্র বাতাসে মিলিত হয়, আত্মাও সেই প্রকার জীবের মৃত্যুর পর পরমাত্মার সাথে যুক্ত হয় । বাতাসে অক্সিজেন, হাইড্রোজেন ইত্যাদি গ্যাস যে প্রকারে পৃথক অস্তিত্ব বজায় রাখে  ( সাধারণ অবস্থায় আমরা যদিও তা অনুধাবন করতে পারি না ), আমাদের আত্মাও মৃত্যুর পর পরমাত্মায় যুক্ত হলেও বিলীন হয়ে যায় না ।  কেবল পার্থিব বন্ধন মুক্ত আত্মাই পরম ব্রহ্ম বা পরমাত্মায় বিলীন হন । সেই অবস্থায় তিনি জন্ম -মৃত্যুর অতীত হন । যেমন বেলুন থেকে নির্গত বাতাস থেকে পুনরায় অন্য বেলুন ফোলানো সম্ভব, তেমনই মৃত্যুর পর পুনর্জন্ম সম্ভব । এই বেলুন উপমা দিয়ে সমগ্র তত্ত্ব অনুধাবন সম্ভব নয়, যদিও কিঞ্চিত আভাষ প্রদান করা গেল ।      জীবাত্মা বিভিন্ন বিবর্তনের প্রক্রিয়া অতিক্রম ( এটাই rule of nature, চাইলেও হবে, না চাইলেও হবে ) করে  ক্রমে মানুষ স্তরে উপনীত হয় ( পৃথিবীর ক্ষেত্রে আলোচিত ।  সৌরজগতের অন্যত্র এবং বাইরে অন্য জীবন চক্র চলে )। মানুষ জন্মেও বিবর্তন ...

উপনিষদ ( মান্ডুক্যোপনিষদ 2) পর্ব 8

     অথর্ববেদের ঋষি জানালেন ওঁকার হল সৃষ্টির মূল । অ, উ এবং ম এই তিন ধ্বনি মিলিত 'ওম' এর vibration থেকেই জগতের সৃষ্টি বলে তিনি অনুধাবন করেছেন । ওম-ই পূর্ণ ব্রহ্ম । সর্বব্যাপী ব্রহ্ম ওম রূপে জীবাত্মার সাথে থেকে কিভাবে সকল কর্ম করছেন ও করাচ্ছেন ঋষি তা উপলব্ধি করে এই উপনিষদটিতে ব্যক্ত করেছেন ।   'ওম..     সর্বম  ...ত্রিকালতীতং..... 1    'সর্বম  ....ব্রহ্ম ....চতুষ্পদ   ।    2    'জাগরিত  ....     প্রথম পাদঃ ।  3   '  স্বপ্ন স্থানঃ  .... দ্বিতীয় পাদঃ । 4   ' যত্র সুপ্তো .....  তৃতীয় পাদঃ । 5  ' এষ সর্বেশ্বর .... ভূতানাম  । 6     সবই 'ওম' অক্ষরাত্মক । ইন্দ্রিয় দ্বারা অনুভূত এবং ইন্দ্রিয়ের অগোচরে যে জগৎ সবই এর স্বরূপ । জগতের অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যত তিনটি কাল এবং এই ত্রিকালের বাইরের যে অনন্তকাল সবই ওঙ্কার । 'ওম' পরমাত্মা বা ব্রহ্মের প্রতীক ।      এই ওম বা ব্রহ্ম সীমার মাঝেও আছেন, আবার আছেন অসীমেও। তিনিই আত্মা, তিনিই পরমাত্মা । তিনিই...

উপনিষদ পর্ব ( মান্ডুক্যোপনিষদ 1 ) 7

    দেড়/দু’মাস আগে এক বন্ধু মান্ডুক্যোপনিষদ এর প্রসঙ্গ তুলে জানালেন জনক রাজার কাহিনী । রাজা সারারাত স্বপ্নে এক জগতে বিচরণ করে প্রভাতে জাগ্রত হয়ে দেখলেন পরিস্থিতি বিপরীত । ভাবতে বসলেন কোন জগতটি সত্যি । সারারাত যে জগতে বিচরণ করলেন, নাকি সারাদিন যে জগতে কাটান । কোন জগতটি ভ্রম। নাকি সবটাই ভ্রম ।     জনক একটি রাজ বংশের নাম । সেই বংশের সকলেই জনক । সীতার পিতা 26 তম জনক । মূল নাম সীরধ্বজ । জনক রাজবংশের রাজারা পন্ডিত, জ্ঞানী। কেউ কেউ ব্রহ্মজ্ঞ । এক জনক রাজসভাতেই গার্গী- যাজ্ঞবল্কের সুবিখ্যাত তর্কযুদ্ধ হয়, যেখানে যাজ্ঞবল্ক গার্গীকে পরাস্ত না করতে পেরে হুমকি দিয়ে থামিয়ে দেন । জনক রাজাদের রাজর্ষি  ( যিনি রাজা তিনিই ঋষি ) বলা হত ।    যাহোক এই জনক রাজা এক বিশেষ প্রশ্ন তুলে দিলেন মানবজাতির সামনে । অনেক পরে আদি শঙ্করাচার্য জানালেন,  ' ব্রহ্ম সত্য,  জগৎ মিথ্যা '। এ নিয়ে চর্চা কম হয়নি । এই ক্ষুদ্র লেখক অবশ্য মনে করে ' এ ভি সাচ্, ও ভি সাচ্। সত্য একমাত্রিক নয় । multidimensional । যে যেভাবে দেখছে তার দৃষ্টিতে সেটাই সত্য মনে হচ্ছে,  বাকি সব মনে হচ্ছে ভ্রম...

উপনিষদ পর্ব 6

Image
শুভানুধ্যায়ীরা, কেউ স্নেহের কেউ বা শ্রদ্ধার বন্ধনে আবদ্ধ, অনুরোধ করেছেন এ ধরনের লেখা ছবিসহ post হলে সহজে নজরে আসে ।    যদিও কবীর বলেছিলেন, দুধ বিক্রেতা বাড়ি বাড়ি দুধ দিয়ে আসেন, আর মদ্যপায়ী নিজে শুড়িখানায় আসেন । অর্থাৎ ভালো পুষ্টিকর দ্রব্যের মর্যাদা কম, ভেবে দেখা গেল যুগ বদলেছে । এখন দুধও আর বাড়িতে দেয় না, packet করা কিনতে হয় দোকান থেকে ।     সর্বোপরি স্নেহ-ভালোবাসার বন্ধনকে অস্বীকার করার শক্তি এখনও অর্জন করতে পারি নি ।    এ কথাও ভেবে দেখতে হবে যে স্বল্প সময়ের মধ্যে অধিকাংশই যদি লিখতে আর Social media তে প্রকাশ করতেই ব্যয় হয় তাহলে পড়ব কখন ? বুঝব কখন ? মনন করব কখন  ? আর উপলব্ধি করব কখন  ?  বিশেষত  কর্ম জগতে যে দায়িত্ব পালনের জীবিকা ন্যস্ত আছে তার পালনের পর যতটুকু উদ্বৃত্ত সময় থাকে তার পর ।   এরচেয়ে এটাই ভালো আমি আমার সুবিধা মতন লিখি,  আর  আগ্রহী জনেরা তার তার সুবিধা মতন রসাস্বাদন করে নেবেন ।   কঠোপনিষদের শান্তি পাঠে বলা হচ্ছে - " সহ নৌ ভুনক্তু। সহ বীর্যম্ করবাবহৈ । মা বিদ্বিষাবহৈ " - অর্থাৎ আমাদের উভ...

উপনিষদ ( ঈশ - অন্তিম পর্ব ) 5

বিদ্যাং চ .....  মৃতমশ্নুতে ।। 11 অন্ধ   ..... সম্ভূত্যাং রতা ।। 12 অন্যদেবাহু......বিচচক্ষিরে ।। 13  সম্ভূতিং ..... মৃতমশ্নুতে ।। 14    উপনিষদের ঋষি জানিয়েছেন বিদ্যা ও অবিদ্যার তত্ত্ব বা রহস্য যারা জানেন তারা অবিদ্যার দ্বারা মৃত্যুকে অতিক্রম করে বিদ্যার সাহায্যে অমৃতত্ব লাভ করেন । বিদ্যা-অবিদ্যা কোনটাই ফেলনা নয় । অবিদ্যার মাধ্যমেই জীব তার ভোগ সংস্কারকে পূর্ণ করে অতিক্রম করে । এই সংস্কার অতিক্রান্ত হলে বিদ্যা অর্থাৎ তত্ত্ব জ্ঞান কর্তৃত্বাদি বুদ্ধির বিনাশ ঘটায় ।   তবে বিদ্যা-অবিদ্যার চর্চা সহজ নয় । কারণ কি কর্ম আর কি অকর্ম, এর বিচার করা কষ্টকর । গীতা বলছে,    'কিং কর্ম কিমকর্মেতি কবয়োইপ্যত্র মোহিতাঃ' - 4/16   - কর্ম কি এবং অকর্ম কি এ বিষয়ে পন্ডিতগণও বিমোহিত ।   অকর্মকে ত্যাগপূর্বক কর্ম পালন করতে হয় । অকর্ম ত্যাগ করে এবং কর্ম পালন করে কর্ম বন্ধন থেকে মুক্ত হওয়া যায় । কোনটি অকর্ম, সেটি বিচার না করে ত্যাগ করলে মুক্তির পরিবর্তে বন্ধন বৃদ্ধি পায় । গীতা জানাচ্ছে,  'দুঃখমিত্যেব যৎ কর্ম কায়ক্লেশভয়াৎ ত্যজেৎ '- 18/8 ...

উপনিষদ (ঈশ্ 3 ) 4

 অসুর্যা নাম তে ....চাত্মহনো জনা ।। 3 অনেজদেকং ...... দধাতি ।। 4 তদেজতি তন্নৈজতি ...বাহ্যতঃ ।। 5 যস্তু সর্বাণি .... বিজুগুপ্সতে ।। 6 যস্মিন ... একত্বমনুপশ্যতঃ ।। 7 স পর্য.....শাশ্বতীভ্য সমাভ্য ।। 8 অন্ধং তমঃ ..... বিদ্যায়াং রতাঃ ।। 9 অন্যদেবা...... নস্তদ্বিচচক্ষিরে ।। 10   প্রাচীন ঋষি ঈশোপনিষদের এই কটি শ্লোকে জানাচ্ছেন,  যারা সৎ-চিৎ-আনন্দময় আত্মার স্বরূপ না জেনে আপন বিলাসে জীবিত থাকেন তারা আত্মহননকারী।   আত্মা, যা পরমাত্মা বা ব্রহ্মের অংশ, নিশ্চল হয়েও মনের গতির চেয়ে দ্রুতগামী । তিনি  (আত্মা ) চলেন, আবার চলেন না । তিনি বহুদূরেও আছেন, আবার নিকটেও আছেন (অজ্ঞানীর কাছে দূরে, জ্ঞানীর কাছে নিকটে), এই সৃষ্টির সমস্তকিছুর ভেতরেও আছেন, আবার বাইরেও আছেন ।   যিনি সর্বভূতে আত্মাকে দর্শন করেন, আবার নিজ আত্মার মধ্যে ব্রহ্মকে দর্শন করেন তিনি কখনই কাউকে ঘৃণা করতে পারেন না । গীতায় সমতুল্য পাওয়া যাচ্ছে -    ' সর্বভূতস্থমাত্মনং সর্বভূতনি চাত্মনি      ঈক্ষতে যোগযুক্তাত্মা সর্বত্র সমদর্শনঃ' - 5/29 - যোগাবস্থায় মানুষ ব্রহ্মদর্শী হয়ে পরমাত্মাক...

উপনিষদ (ঈশ 2) 3

                     'ঈশা বাস্যমিদং সর্বং ...তেন ত্যক্তেন ভুঞ্জিথা ....'- ঈশোপনিষদ (1) - সমগ্র জগৎ ঈশ্বর দ্বারা ব্যপ্ত । ত্যাগের মাধ্যমে ভোগ করতে হবে, লোভ নয়, আসক্ত হয়ে নয় । কারণ ধন-সম্পদ চিরস্থায়ী নয় ।    'ঈশ' শব্দের অর্থ ঈশ্বর । এই শব্দ দ্বারা শুরু হয় বলে এর নাম ঈশোপনিষদ ।                  'গচ্ছতি গচ্ছতি ইতি জগৎ '   গতিশীল বা চলমান বলেই বিশ্বের অপর নাম জগৎ । চঞ্চল, অস্থির এই জগতে স্থির সত্তা হল ঈশ্বর । কারণ তিনি সর্ব ব্যপ্ত ।    ত্যাগের মাধ্যমে ভোগ করতে হবে এবং বিষয়াদিতে আসক্ত হলে চলবে না।  গীতাতে এ বিষয়ে বলেছে,                  'রাগদ্বেষবিযুর্ক্তেস্তূ বিষয়ানিন্দ্রিয়ৈশ্চয়ন                   আত্মবশৈর্বিধেয়াত্মা প্রসাদমধিগচ্ছতি'  -  ২/৬৪        -  রাগ-দ্বেষ বর্জন করে আত্মবশীভূত হয়ে বিষয়াদি উপভোগ করলে প্রসাদ তথা শান্তি লাভ হবে। ...

উপনিষদ পর্ব ( ঈশ) 2

           "...তেন ত্যক্তেন ভুঞ্জিথা ..."    - তাকে সঙ্গে নিয়ে ত্যাগের মধ্যে দিয়ে ভোগ করতে হবে ।     উপনিষদের এও আর এক riddle বা puzzle । তাকে সঙ্গে নিতে হবে, ভোগ করতে হবে, তাও ত্যাগের মাধ্যমে ।    এর আগে সাংখ্য বা বৌদ্ধ দর্শন পাঠ করতে গিয়ে আমরা দেখেছিলাম ঈশ্বর নিয়ে আলোচনা নেই । এর অর্থ এমন ধরে নেওয়া অনুচিত যে ওই মতাবলম্বীরা নিরীশ্বরবাদী । বুদ্ধকে ঈশ্বর সম্পর্কে প্রশ্ন করলে উনি নীরব থেকেছেন । বিষয়টি খানিক এমন যে ঈশ্বর থাকলে আছেন, আমরা আমাদের কাজ করব । শ্রীরামকৃষ্ণের মতে ' আম খেলেই হল, কি গাছ কোথায় গাছ, এতো জেনে কি হবে' ।      সাংখ্য প্রকৃতি ও পুরুষের  (আত্মা ) সম্পর্কের বিবর্তন এর দশা বর্ণনা করেছে । তার সাথে পাতঞ্জল যোগ দর্শন যুক্ত করলে ওই দর্শন সম্পুর্ণ হয় । বুদ্ধ নির্বাণ লাভের কথা বললেন । কিন্তু সর্বজনপূজ্য রামকৃষ্ণের  বক্তব্যকে বিরোধিতা করেই বলতে হয় সার্বিক না হলেও কিছু মানুষের জ্ঞান তৃষ্ণা নিত্য নতুন জানার দিকে চিরকাল ছিল,আছে এবং থাকবেও ।      এই জ্ঞান তৃষার কারণে প্রাচীন ভারতীয়...