চর্যা 5

চর্যা  5
"দিবসই বহুড়ি কাউই তরে ভাঅ
 রাতি ভইলে কামরু জাঅ ।।
"অইসনি চর্যা কুক্কুরী পাএ গাউই
কোড়ি মাঝে একু হি অহি সমাইউ।।
  কুক্কুরী পাদ( উনি 800 AD নাগাদ ধর্মপাল-দেবপালের আমলে জীবিত ছিলেন। তারানাথ মনে করেন এটা ছদ্মনাম। এই সিদ্ধ যোগীর সঙ্গে সর্বদা কুকুর থাকত বলে এমন নাম) এমন চর্যা গাইলেন যে কোটি তে একজন সমঝদার হলেন । যে বউটি দিনে কাক কে দেখে ভয় পায়, রাতে সে ই কাম নগরে যাত্রা করে । অর্থৎ ভীত সন্ত্রস্ত মানুষ যোগ সাধনায় অসীম ভয় কে লঙ্ঘন করতে পারে ।
" দুলি দুহি পিঠা ধরন না জাই..
দুলি মানে কচ্ছপ, তাকে দুইয়ে পাত্রে ধরা যাচ্ছে না।  এ বড়ই অদ্ভূত কথা। কচ্ছপকে দোহন করা কি সম্ভব ? আসলে এটি রূপক। মুনিদত্ত এই ভাষাকে ' সান্ধ্য ভাষা ' বলেছেন। এক্ষেত্রে দুলি বা কচ্ছপ হল অপরিশুদ্ধ বোধিচিত্ত। পিঠা হল দেহপাত্র।
   কাহ্নপাদ বলেছেন -
" ভনই কাহ্ন দুল্লক্খ সুরবগাহ কো মনে পরিভাবই ..
 -- দুর্লক্ষ্য তত্ত্বকে বিশেষভাবে উপলব্ধি করতে হবে।
  চিত্তের যে অবস্থায় নির্বাণ লাভের আকাঙ্খা হয় তাকে 'বোধিচিত্ত' বলে। হিন্দু যোগসাধনায় যা 'কুলকুন্ডলিনী শক্তি', সহজসাধনা-য় তার নাম 'চন্ডালী'। এই চন্ডালীর উপলব্ধিজনিত যে মানসিক অবস্থা তা-ই হল 'বোধিচিত্ত'।
  অবধূতমার্গে বোধিচিত্তের চলাচলের পথ দুটি। প্রাণ ও অপান বায়ুর মিলিত যে ধারা নিম্নমুখে প্রবাহিত হয়ে যৌনমিলন ঘটায় তাকে 'সংবৃত্তি বোধিচিত্ত ' বলে। এতে মানুষ পরিপূর্ণ তৃপ্তি পায় না। মায়া-প্রপঞ্চে পড়ে ভীত হয়।
  বোধিচিত্তের যে ধারা উর্ধপথে গিয়ে নির্বিকল্পত্ব লাভ করে তাকে 'পরমার্থিক বোধিচিত্ত' বলে। সহজসাধনার প্রধান বাহন হল এই পরমার্থিক বোধিচিত্ত।
    বোধিচিত্তের সংবৃত্তি হল আপাত সত্য এবং পরমার্থ হল চিরন্তন সত্য।
চর্যাত্বরং বলছে -
" ভব ভুঞ্জই ন বাসসই রে অপূব বিনাণা
জিম বি লোঅর বান্ধন তিম জোইর মেলানা..
-- সংসার ভোগ করেও বদ্ধ হয় না, অপূর্ব এ বিজ্ঞান । মানুষের যাতে বন্ধন, যোগীর তাতেই মুক্তি।
ক্রমশ


Comments

Popular posts from this blog

কঠোপনিষদ ২০

উপনিষদ পর্ব 1

মহাভারত শ্লোক