চর্যা 15

শেষ পর্ব
'গঙ্গা জউনা মাাঝে রে বহই নাঈ '
- এই গঙ্গা-যমুনার মধ্যে থাকা নদী হল ঈড়া -পিঙ্গলার মাঝে থাকা সুষুম্না নাড়ী। যোগ সাধনায় এর ব্যাখ্যা আছে।
  সব সাধন পথেরই এক মূল গত ঐক্য আছে। সরহপাদ বলছেন,
'এথ্থু সে সুরসরি জমুনা এথ্থু সে গঙ্গাসাঅরু
এথ্থু পআগ বনারসি এথ্থু সেছচন্দ দিবাঅরু
- এখানেই (এই দেহেই) প্রয়াগ, যমুনা,বারাণসী। এখানেই সূর্যচন্দ্র, গঙ্গাসাগর।
 দেহতত্বের এই সাধন প্রক্রিয়া আজও সহজিয়া বাউল-ফকির সাধকদের মধ্যে পাওয়া যায়।
  হিন্দুধর্মের কালের দোষে কঠোরতা ও সংকীর্ণতা এলে বৌদ্ধ ধর্মাদির সৃষ্টি। একই কারণে কালের স্রোতে বৌদ্ধ ধর্মে এল সহজযান । কিন্তু সনাতন দর্শনগুলি তো হারিয়ে গেল না।
সরহপাদ বললেন,
' গম্ভীরই উআহরণে ণউ পর ণণ অপ্পান'
-- গম্ভীরভাবে বিচার করলে দেখা যায় আপন কেউ নয়, আবার পরও কেউ নয়।
অন্যতম শ্রেষ্ঠ আচার্য কান্হ্নপাদ বললেন,
'ভব জাই ণ আবই এসু কোই'
-- এই ভব সংসারে কেউ আসেও না কেউ যায়ও না।
  যদি সারকথা জিজ্ঞাসা করা হয়, যদি এই নশ্বর দেহে ঈশ্বর তথা তীর্থের অবস্থানের প্রমাণ চাওয়া হয় তাহলে শ্রেষ্ঠ আচার্য লুইপাদের ভাষায় বলতে হয় -
'কাহেরে কিস ভণি মই দিবি পিরিচ্ছা
উদক চান্দ জিম সাচ না মিচ্ছা '
-- কাকে কি বলে আমি পরীক্ষা দেব। যেমন জলের মধ্যে চাঁদের প্রতিবিম্ব সত্যি না মিথ্যা ?
  এ সাধন একাকী ব্যক্তি সাধন। যদিও একশ্রেণীর মানুষের মধ্যে উদ্দীপনা বৃদ্ধির জন্যই এই চর্যা গীতি গুলি রচিত হয়েছিল। কিন্তু সাধনা দলবদ্ধভাবে নয়। যেমন হরিনাম সংকীর্তন সকলের জন্য। কিন্তু স্বরূপ দামোদর ও রামানন্দ রায়কে নিয়ে চৈতন্যদেবের সাধন একান্ত গোপন।
   সংসার তত্ত্ব বুঝলে সহজ, না বুঝলে অতিশয় জটিল। আবার যে বোঝে তাকে নিয়ে অবুঝ সংসারীদের জ্বালাও কম নয়। তাড়কপাদ বলেছেন,
'ভণই তাড়ক এথু নাহি অবকাশ
জো বুঝই তা গঁলে গগলপাশ
--- তাড়ক বলেন যে বোঝে তার গলায় দড়ি। সংসার তার কাছে আর ভোগের উপাদান নয়। সে তখন মুমুক্ষু, নির্বাণকামী  ।

Comments

Popular posts from this blog

কঠোপনিষদ ২০

উপনিষদ পর্ব 1

মহাভারত শ্লোক