বৈদিক সভ্যতা ও Indian Archaeology Part 3
।। বৈদিক সভ্যতা ও Indian Archaeology ।।
Part 3
।। ভাষাতাত্ত্বিক আলোচনা এবং অশ্ব ও রথ ।।
ইরাকের হিটাইট, মিতান্নি ও ক্যাসাইট দের (1400 BC) দের লেখ্য উপাদানের সাথে বৈদিক শব্দাবলীর কিছু মিল পেয়ে ( ইন্দ্র, সূর্য, অশ্ব, সপ্ত ) ভাষাতাত্ত্বিকেরা পরম উৎসাহে ভারতে আর্য আগমনের এক রূপরেখা তৈরি করেন ।
মজা হল যে শুধু কয়েকটি শব্দ দিয়ে কি ওদের আর্য গোষ্ঠী ভুক্ত করা যাবে ? সে তো দ্রাবিড় ভাষাগুলির মধ্যে ও অনেক সংস্কৃত শব্দ এবং সংস্কৃত ভাষাতে অস্ট্রিক শব্দাবলী পাওয়া যায় । তাহলে এরা কি একই ভাষাগোষ্ঠী । ভাষা মানে তো তার বাক্যশৈলী, তার ব্যাকরণ অনেককিছু।
আসলে তুলনামূলক ভাষা তত্ত্ব এক অদ্ভুত বিষয় । এ নিয়ে নানা মুনির নানা মত । এ নিয়ে আর্য আগমনের প্রমাণ বের করা মুশকিল । যদিও এই চেষ্টা দীর্ঘদিন ধরে চলেছে এবং RS Sharma, I Habib, R Thapar এর মতন ঐতিহাসিকেরা এই ভাষাতাত্ত্বিক ধারণা দিয়ে আর্য আগমনের পক্ষে মত দিচ্ছেন ।
Cambridge এর প্রত্নবিদ ও নৃতত্ত্ববিদ J Shaffer এর বিরোধিতা করে বলেছেন যে ভাষাতাত্ত্বিক তত্ত্বকে প্রত্ন ও নৃতাত্ত্বিক তথ্যের ওপর চাপিয়ে দেয়া হচ্ছে । এসব ভাষাতাত্ত্বিক অত্যাচার বন্ধ হোক । ( it is time to end the linguistic tyranny - 1984)।
কিন্তু কে শুনছে । বৈদিক উপাদান কে যে যার মতো ব্যাখ্যা করছেন । একটি উদাহরণ দিই ।
M witzel এবং RS Sharma তৈত্তিরীয় সংহিতা -র 'বৌধায়ণ শৌতসূত্র' থেকে একটি কাহিনী নিলেন, যেখানে উর্বশী তার দুই পুত্র আয়ু ও অমাবসুকে পূর্ব ও পশ্চিম দিকে যেতে বলেছেন । শর্মা বললেন এই আয়ুর পুত্র রা হলেন 'আয়ভ গোষ্ঠী ', এবং এরাই কুরু-পাঞ্চাল স্থাপন করেন । অর্থাৎ আর্যদের পূর্বদিকে অর্থাৎ ভারতে আগমনের বৈদিক তথ্য এটি ।
আমরা কি প্রশ্ন করব না ? জানতে চাইব না কি যে
- আয়ু পূর্ব দিকে এলো বুঝলাম । তা কোথা থেকে এলো ? সিন্ধু - পাঞ্জাব থেকে পূর্ব দিকে এলেও তো কুরু -পাঞ্চাল হয় !
- তার চেয়েও বড় কথা, আয়ুর ভাই অমাবসু যে পশ্চিম দিকে গেল সেটার কি হল ?
- এমনটা হওয়া কি স্বাভাবিক নয় যে সিন্ধু -পাঞ্জাব থেকে অমাবসুকে গান্ধার অঞ্চলে এলেন ।
- দুই বীর ভ্রাতা সিন্ধু -পাঞ্জাব থেকে দুদিকে গিয়ে এক সাম্রাজ্য তথা সংস্কৃতির বিস্তার করলেন । একটি আফগানিস্তানে ও একটি উত্তর প্রদেশে । এমন ধারণাই তো ঐ কাহিনী থেকে মনে হওয়া স্বাভাবিক ।
- তার বদলে কি কষ্ট কল্পনা !! Tyranny ই বটে !!
আর একজন British Anthropologist ( দেশ শাসনের জন্য তদানীন্তন ব্রিটিশ রা অন্য কথা বললেও এখনকার ব্রিটিশ পন্ডিতেরা কিন্তু নিরপেক্ষ কথা বলছেন ) এবং former President of Royal Anthropological Institute, বললেন যে এসব ভাষাতাত্ত্বিক ব্যাখ্যা অনেক আগেই বাতিল হওয়া উচিত ছিল । কিন্তু ব্যক্তি স্বার্থ ও পদ এর বাধাস্বরূপ ( Indo European scholars should have scrapped all their historical reconstruction. ... but this is not happened. Vested interest and academic posts are involved - Edmund Leach 1990)
হ্যা ! একজন Knighthood প্রাপ্ত ব্রিটিশ নৃতাত্ত্বিক ' vested interest ' কথাটি ব্যবহার করেছেন ।
মজা হল যে -
বৈদিক text গুলো নিয়ে যা খুশি বলা যায় । কারণ -
1। অশোকের শিলালিপির মতন বৈদিক পাথুরে প্রমাণ নেই ।
2। বেদ শ্রুতি অবস্থায় দীর্ঘদিন চর্চা হয়েছে । লেখা হয়েছিল অনেক পরে ।
3। লেখা হত ভূর্জ পত্র, তালপাতা ইত্যাদি তে । নষ্ট হয়ে যেত বলে কিছু সময় পর পর copy করা হত ।
4। ফলে আসলে বৈদিক text যা পাওয়া গেছে ঐতিহাসিক ভাবে তা মাত্র দু একশ বছরের পুরনো ।
5। লিপি নিয়েও সমস্যা। আদিতে কোন লিপিতে লেখা হয়েছিল কেউ জানে না । দেবনাগরী মাত্র কয়েক শো বছরের পুরাতন । খৃষ্ট জন্মের অনেক পরে ।
6। ব্রাহ্মী 500 BC তে পাওয়া গেছে এবং সিন্ধু লিপি কে ব্রাহ্মীর পূর্ব সুরী হিসেবে মেনে নিতে সময় লাগবে ।
ফলে বৈদিক text দিয়ে আর্য আগমনের প্রমাণ করা যাচ্ছে না বোঝা গেল । কারণ কবে সেসব রচনা হয়েছে তা-ই নির্ধারিত করা যাচ্ছে না । আর্য বৈদিক কাহিনী গুলিতে এদেশে আগমনের সত্যি ই কিছু কথা নেই । বরং চন্দ্র বংশের যযাতির দুই ছেলে অনু ও দ্র্যুহু র মাধ্যমে বৈদিক সংস্কৃতি পশ্চিমে ( অন্য ভাই পুরু ও যদু দের বংশের কাহিনী মহাভারত ) গেছিল, এমনটাই বোধ হয় ।
ভাষাতাত্ত্বিক আলোচনা ছেড়ে তাই আমরা প্রত্ন নিদর্শন নিয়ে মাথা ঘামাবো । আমরা বৈদিক সংস্কৃতির সাথে সম্পর্কিত বিষয়ে দেখে নেব , সেগুলো 1400 BC পরে ভারতে এলো নাকি ? যদি তাই হয় তাহলে আমরা মানতে রাজি যে এরপরেই আর্যরা ভারতে এসেছিল এবং বৈদিক সভ্যতা গড়ে তুলেছিল ।
Point গুলো হল -
1। অশ্ব বা ঘোড়া
2। রথ ও spoked wheel
3 । লোহার ব্যবহার
4। যজ্ঞ ও অগ্নিশিখ
5। মৃত সৎকার
6। কৃষি। ইত্যাদি
আগেও বলেছি reference আমরা RS Sharma, I Habib মহাশয়দের বই থেকেই নেব । কিন্তু deduction আমাদের হবে ।
অশ্ব :-
অশ্ব কে আর্যদের সাথে সমার্থক মনে করা হয় । তাহলে 1400 BC র আগে ভারতে ঘোড়া নেই ? একটু দেখে নিই প্রত্ন উপাদাগুলোকে --
- Neolithic প্রস্তর যুগ থেকেই ভারতে অশ্বের অস্তিত্ত্ব কথা বলেছেন G R Sharma et al ' Beginning in agriculture ' বইতে । এটি Equus namadicus প্রজাতির ঘোড়া । ইউরোপের Equus ferus caballus ঘোড়া নয় । তবে ঘোড়া তো বটেই । এবং বহু নিদর্শন মিলেছে সে সময়কার।
- রাজস্থানে বাগোর ( সেই সোনালী পঞ্চভূজের একটি কেন্দ্র !) এ 4500 BC র গৃহপালিত অশ্ব। ( EIA = Encyclopedia of Indian Archaeology by A Ghosh, 1989)
- কর্ণাটকে কোদেকাল, হাল্লুর এ প্রস্তর যুগে (EIA )
- Surkotda 2100- 1700 BC
- Rana Ghundai 3000 BC ( দিলীপ কু চক্রবর্তী এটি অশ্ব বলেই নিশ্চিত করেছেন )।
- গুজরাত এ মালাবান, লোথাল ও হরপ্পা তে হয় অস্থি না হয় terracotta
- সুরাটে মালায়াল
- পিরাক 2000 BC
ইত্যাদি ।
তাহলে 1400 BC র আগে এই উপমহাদেশে অশ্বের ব্যবহারের প্রমাণ তো আছেই । তাহলে ?
এবার নতুন কথা এলো ।
ঋগ্বেদ এ 'গো' শব্দটির ব্যবহার 176 বার, কিন্তু ' অশ্ব' শব্দটি 215 বার । অশ্ব তাই আর্যদের প্রতীক । Ukraine / Uzbekistan এর মতন অশ্ব বহুল অঞ্চল তাই আর্যদের আদি ভূমি । ভারতের এতো অল্প ঘোড়ার দেশ আর্যদের আদি নিবাস হতেই পারে না ।
আমরা একটু দেখে নেব ঋগ্বেদ এ অশ্বের কথা কিভাবে আছে ।
1। অবশ্যই বেদ এ অশ্বের জয় জয়কার । তবে অধিকাংশই ' অশ্ব দাও! হে দেব অশ্ব নিয়ে এসো ' জাতীয় প্রার্থনা ।
2। অশ্বের চাহিদা প্রচুর । কিন্ত supply কম ।
3। নৃপতিরা হাজার হাজার গো দান করলেও অশ্বের দান খুব কম ।
4। 4/15 সূক্তে পাচ্ছি, সোমক রাজা ঋষি বামদেব কে দুটি অশ্ব দান করেছেন । তাতেই রাজার নামে প্রশস্তি ।
5। অশ্ব নৃপতিদের সাথে সম্পর্কিত, সাধারণ মানুষের কাছে দুর্লভ ।
6। Ukraine / Kazakhstan এ এমনটা নয় । সেখানে অশ্ব দিয়ে কৃষি ও ভারবহন করাচ্ছে সাধারণ মানুষ ।
ভারতে অশ্বের ব্যবহার সে সময়ের মানুষ জানেন । অশ্বের supply কম । তাই দাও দাও বলে প্রার্থনা ।
আচ্ছা , এ যুক্তি যদি পছন্দ না ও করেন তাহলে একথা তো মানবেন যে 1400 তে তথাকথিত আর্য আগমনের পরে অশ্বের প্রচুর প্রত্ন প্রমাণ পাওয়া উচিত । মুশকিল হল, তাও তো বিশেষ আহামরি নয় ।
নরহান , বালিয়া, হস্তিনাপুরে 1000 BC র পরে এবং এরও পরে বৈশালী, রাজগীর ইত্যাদি কয়েকটি জায়গায় ।
সংখ্যার বিচারে 1400 BC র আগের থেকে বেশি নয়। শুধু হরপ্পা ক্ষেত্রগুলি থেকে পূর্ব দিকে সরে এসেছে ।
একথা তো আমরা জানিই যে নানা কারণে হরপ্পা ক্ষেত্রগুলোর থেকে জনবসতি পূব দিকে সরে এসেছে 1900 BC র পরে ।
আমরা যে সোনালী পঞ্চভূজের কথা আলোচনা করছি তার পশ্চিম প্রান্ত ও দক্ষিণ সীমাতে ঘোড়া পাচ্ছি , পাচ্ছি রাজস্থানেও । সবই 1400 BC র অনেক আগেই । হঠাৎ করে এদেশে ঘোড়া আসেনি ।
রথ ও চাকা :-
Romilla Thapar ( Cultural Pasts, 2000, ) এ বলেছেন , চাকা এবং রথ আর্যদের সাথে ভারতে প্রবেশ করেছে 1500 BC নাগাদ ।
M Witzel ( Early Indian History, 1995) এ বললেন, রথ নিয়ে এসে আর্যরা স্থানীয়দের চমকিত করে দিয়েছিল ( the first appearance of ( the invading aryans) thundering chariots must have striken the local population with a thunder).
তাহলে আমরা এটাই ধরে নেব যে 1400 BC র আগে এখানকার লোকজন রথ সম্পর্কে অজ্ঞ ছিল । কিন্ত প্রত্ন প্রমাণ কি বলে ?
1। দাইমাবাদ ( মহারাষ্ট্র ) এ রথের terracotta পাওয়া গেছে । Auchin Brothers এর ছবি ছেপেছেন ।
2। Rao দেখিয়েছেন ( Puratatta 2005-6) লোথাল , ভিরানা তে চাকা পাওয়া গেছে ।
3। Danino দেখিয়েছেন, রাখিগরহি ও বানাওয়ালি তে spoked wheel এর terracotta মিলেছে ।
4। সর্বোপরি এই কদিন আগেই Sinauli ( উত্তর প্রদেশ) তে 2000 BC সময়ের তিনটি Bronze যুগের রথ পাওয়া গেছে ।
উত্তর প্রদেশে 2000 BC তে রথ পাওয়ার পরে তথাকথিত আর্যদের রথ নিয়ে এদেশে এসে চমকে দেওয়ার তত্ত্ব কি আর গ্রহণ করা সম্ভব ?
3 টে part এও শেষ করতে পারলাম না । এসব কথা আসলে 30 টি পর্বেও শেষ করা মুশকিল । যাহোক আর একটিতে শেষ করতেই হবে ! পূজার মুখে আর জ্বালাব না বেশ ।
ক্রমশ :
Part 3
।। ভাষাতাত্ত্বিক আলোচনা এবং অশ্ব ও রথ ।।
ইরাকের হিটাইট, মিতান্নি ও ক্যাসাইট দের (1400 BC) দের লেখ্য উপাদানের সাথে বৈদিক শব্দাবলীর কিছু মিল পেয়ে ( ইন্দ্র, সূর্য, অশ্ব, সপ্ত ) ভাষাতাত্ত্বিকেরা পরম উৎসাহে ভারতে আর্য আগমনের এক রূপরেখা তৈরি করেন ।
মজা হল যে শুধু কয়েকটি শব্দ দিয়ে কি ওদের আর্য গোষ্ঠী ভুক্ত করা যাবে ? সে তো দ্রাবিড় ভাষাগুলির মধ্যে ও অনেক সংস্কৃত শব্দ এবং সংস্কৃত ভাষাতে অস্ট্রিক শব্দাবলী পাওয়া যায় । তাহলে এরা কি একই ভাষাগোষ্ঠী । ভাষা মানে তো তার বাক্যশৈলী, তার ব্যাকরণ অনেককিছু।
আসলে তুলনামূলক ভাষা তত্ত্ব এক অদ্ভুত বিষয় । এ নিয়ে নানা মুনির নানা মত । এ নিয়ে আর্য আগমনের প্রমাণ বের করা মুশকিল । যদিও এই চেষ্টা দীর্ঘদিন ধরে চলেছে এবং RS Sharma, I Habib, R Thapar এর মতন ঐতিহাসিকেরা এই ভাষাতাত্ত্বিক ধারণা দিয়ে আর্য আগমনের পক্ষে মত দিচ্ছেন ।
Cambridge এর প্রত্নবিদ ও নৃতত্ত্ববিদ J Shaffer এর বিরোধিতা করে বলেছেন যে ভাষাতাত্ত্বিক তত্ত্বকে প্রত্ন ও নৃতাত্ত্বিক তথ্যের ওপর চাপিয়ে দেয়া হচ্ছে । এসব ভাষাতাত্ত্বিক অত্যাচার বন্ধ হোক । ( it is time to end the linguistic tyranny - 1984)।
কিন্তু কে শুনছে । বৈদিক উপাদান কে যে যার মতো ব্যাখ্যা করছেন । একটি উদাহরণ দিই ।
M witzel এবং RS Sharma তৈত্তিরীয় সংহিতা -র 'বৌধায়ণ শৌতসূত্র' থেকে একটি কাহিনী নিলেন, যেখানে উর্বশী তার দুই পুত্র আয়ু ও অমাবসুকে পূর্ব ও পশ্চিম দিকে যেতে বলেছেন । শর্মা বললেন এই আয়ুর পুত্র রা হলেন 'আয়ভ গোষ্ঠী ', এবং এরাই কুরু-পাঞ্চাল স্থাপন করেন । অর্থাৎ আর্যদের পূর্বদিকে অর্থাৎ ভারতে আগমনের বৈদিক তথ্য এটি ।
আমরা কি প্রশ্ন করব না ? জানতে চাইব না কি যে
- আয়ু পূর্ব দিকে এলো বুঝলাম । তা কোথা থেকে এলো ? সিন্ধু - পাঞ্জাব থেকে পূর্ব দিকে এলেও তো কুরু -পাঞ্চাল হয় !
- তার চেয়েও বড় কথা, আয়ুর ভাই অমাবসু যে পশ্চিম দিকে গেল সেটার কি হল ?
- এমনটা হওয়া কি স্বাভাবিক নয় যে সিন্ধু -পাঞ্জাব থেকে অমাবসুকে গান্ধার অঞ্চলে এলেন ।
- দুই বীর ভ্রাতা সিন্ধু -পাঞ্জাব থেকে দুদিকে গিয়ে এক সাম্রাজ্য তথা সংস্কৃতির বিস্তার করলেন । একটি আফগানিস্তানে ও একটি উত্তর প্রদেশে । এমন ধারণাই তো ঐ কাহিনী থেকে মনে হওয়া স্বাভাবিক ।
- তার বদলে কি কষ্ট কল্পনা !! Tyranny ই বটে !!
আর একজন British Anthropologist ( দেশ শাসনের জন্য তদানীন্তন ব্রিটিশ রা অন্য কথা বললেও এখনকার ব্রিটিশ পন্ডিতেরা কিন্তু নিরপেক্ষ কথা বলছেন ) এবং former President of Royal Anthropological Institute, বললেন যে এসব ভাষাতাত্ত্বিক ব্যাখ্যা অনেক আগেই বাতিল হওয়া উচিত ছিল । কিন্তু ব্যক্তি স্বার্থ ও পদ এর বাধাস্বরূপ ( Indo European scholars should have scrapped all their historical reconstruction. ... but this is not happened. Vested interest and academic posts are involved - Edmund Leach 1990)
হ্যা ! একজন Knighthood প্রাপ্ত ব্রিটিশ নৃতাত্ত্বিক ' vested interest ' কথাটি ব্যবহার করেছেন ।
মজা হল যে -
বৈদিক text গুলো নিয়ে যা খুশি বলা যায় । কারণ -
1। অশোকের শিলালিপির মতন বৈদিক পাথুরে প্রমাণ নেই ।
2। বেদ শ্রুতি অবস্থায় দীর্ঘদিন চর্চা হয়েছে । লেখা হয়েছিল অনেক পরে ।
3। লেখা হত ভূর্জ পত্র, তালপাতা ইত্যাদি তে । নষ্ট হয়ে যেত বলে কিছু সময় পর পর copy করা হত ।
4। ফলে আসলে বৈদিক text যা পাওয়া গেছে ঐতিহাসিক ভাবে তা মাত্র দু একশ বছরের পুরনো ।
5। লিপি নিয়েও সমস্যা। আদিতে কোন লিপিতে লেখা হয়েছিল কেউ জানে না । দেবনাগরী মাত্র কয়েক শো বছরের পুরাতন । খৃষ্ট জন্মের অনেক পরে ।
6। ব্রাহ্মী 500 BC তে পাওয়া গেছে এবং সিন্ধু লিপি কে ব্রাহ্মীর পূর্ব সুরী হিসেবে মেনে নিতে সময় লাগবে ।
ফলে বৈদিক text দিয়ে আর্য আগমনের প্রমাণ করা যাচ্ছে না বোঝা গেল । কারণ কবে সেসব রচনা হয়েছে তা-ই নির্ধারিত করা যাচ্ছে না । আর্য বৈদিক কাহিনী গুলিতে এদেশে আগমনের সত্যি ই কিছু কথা নেই । বরং চন্দ্র বংশের যযাতির দুই ছেলে অনু ও দ্র্যুহু র মাধ্যমে বৈদিক সংস্কৃতি পশ্চিমে ( অন্য ভাই পুরু ও যদু দের বংশের কাহিনী মহাভারত ) গেছিল, এমনটাই বোধ হয় ।
ভাষাতাত্ত্বিক আলোচনা ছেড়ে তাই আমরা প্রত্ন নিদর্শন নিয়ে মাথা ঘামাবো । আমরা বৈদিক সংস্কৃতির সাথে সম্পর্কিত বিষয়ে দেখে নেব , সেগুলো 1400 BC পরে ভারতে এলো নাকি ? যদি তাই হয় তাহলে আমরা মানতে রাজি যে এরপরেই আর্যরা ভারতে এসেছিল এবং বৈদিক সভ্যতা গড়ে তুলেছিল ।
Point গুলো হল -
1। অশ্ব বা ঘোড়া
2। রথ ও spoked wheel
3 । লোহার ব্যবহার
4। যজ্ঞ ও অগ্নিশিখ
5। মৃত সৎকার
6। কৃষি। ইত্যাদি
আগেও বলেছি reference আমরা RS Sharma, I Habib মহাশয়দের বই থেকেই নেব । কিন্তু deduction আমাদের হবে ।
অশ্ব :-
অশ্ব কে আর্যদের সাথে সমার্থক মনে করা হয় । তাহলে 1400 BC র আগে ভারতে ঘোড়া নেই ? একটু দেখে নিই প্রত্ন উপাদাগুলোকে --
- Neolithic প্রস্তর যুগ থেকেই ভারতে অশ্বের অস্তিত্ত্ব কথা বলেছেন G R Sharma et al ' Beginning in agriculture ' বইতে । এটি Equus namadicus প্রজাতির ঘোড়া । ইউরোপের Equus ferus caballus ঘোড়া নয় । তবে ঘোড়া তো বটেই । এবং বহু নিদর্শন মিলেছে সে সময়কার।
- রাজস্থানে বাগোর ( সেই সোনালী পঞ্চভূজের একটি কেন্দ্র !) এ 4500 BC র গৃহপালিত অশ্ব। ( EIA = Encyclopedia of Indian Archaeology by A Ghosh, 1989)
- কর্ণাটকে কোদেকাল, হাল্লুর এ প্রস্তর যুগে (EIA )
- Surkotda 2100- 1700 BC
- Rana Ghundai 3000 BC ( দিলীপ কু চক্রবর্তী এটি অশ্ব বলেই নিশ্চিত করেছেন )।
- গুজরাত এ মালাবান, লোথাল ও হরপ্পা তে হয় অস্থি না হয় terracotta
- সুরাটে মালায়াল
- পিরাক 2000 BC
ইত্যাদি ।
তাহলে 1400 BC র আগে এই উপমহাদেশে অশ্বের ব্যবহারের প্রমাণ তো আছেই । তাহলে ?
এবার নতুন কথা এলো ।
ঋগ্বেদ এ 'গো' শব্দটির ব্যবহার 176 বার, কিন্তু ' অশ্ব' শব্দটি 215 বার । অশ্ব তাই আর্যদের প্রতীক । Ukraine / Uzbekistan এর মতন অশ্ব বহুল অঞ্চল তাই আর্যদের আদি ভূমি । ভারতের এতো অল্প ঘোড়ার দেশ আর্যদের আদি নিবাস হতেই পারে না ।
আমরা একটু দেখে নেব ঋগ্বেদ এ অশ্বের কথা কিভাবে আছে ।
1। অবশ্যই বেদ এ অশ্বের জয় জয়কার । তবে অধিকাংশই ' অশ্ব দাও! হে দেব অশ্ব নিয়ে এসো ' জাতীয় প্রার্থনা ।
2। অশ্বের চাহিদা প্রচুর । কিন্ত supply কম ।
3। নৃপতিরা হাজার হাজার গো দান করলেও অশ্বের দান খুব কম ।
4। 4/15 সূক্তে পাচ্ছি, সোমক রাজা ঋষি বামদেব কে দুটি অশ্ব দান করেছেন । তাতেই রাজার নামে প্রশস্তি ।
5। অশ্ব নৃপতিদের সাথে সম্পর্কিত, সাধারণ মানুষের কাছে দুর্লভ ।
6। Ukraine / Kazakhstan এ এমনটা নয় । সেখানে অশ্ব দিয়ে কৃষি ও ভারবহন করাচ্ছে সাধারণ মানুষ ।
ভারতে অশ্বের ব্যবহার সে সময়ের মানুষ জানেন । অশ্বের supply কম । তাই দাও দাও বলে প্রার্থনা ।
আচ্ছা , এ যুক্তি যদি পছন্দ না ও করেন তাহলে একথা তো মানবেন যে 1400 তে তথাকথিত আর্য আগমনের পরে অশ্বের প্রচুর প্রত্ন প্রমাণ পাওয়া উচিত । মুশকিল হল, তাও তো বিশেষ আহামরি নয় ।
নরহান , বালিয়া, হস্তিনাপুরে 1000 BC র পরে এবং এরও পরে বৈশালী, রাজগীর ইত্যাদি কয়েকটি জায়গায় ।
সংখ্যার বিচারে 1400 BC র আগের থেকে বেশি নয়। শুধু হরপ্পা ক্ষেত্রগুলি থেকে পূর্ব দিকে সরে এসেছে ।
একথা তো আমরা জানিই যে নানা কারণে হরপ্পা ক্ষেত্রগুলোর থেকে জনবসতি পূব দিকে সরে এসেছে 1900 BC র পরে ।
আমরা যে সোনালী পঞ্চভূজের কথা আলোচনা করছি তার পশ্চিম প্রান্ত ও দক্ষিণ সীমাতে ঘোড়া পাচ্ছি , পাচ্ছি রাজস্থানেও । সবই 1400 BC র অনেক আগেই । হঠাৎ করে এদেশে ঘোড়া আসেনি ।
রথ ও চাকা :-
Romilla Thapar ( Cultural Pasts, 2000, ) এ বলেছেন , চাকা এবং রথ আর্যদের সাথে ভারতে প্রবেশ করেছে 1500 BC নাগাদ ।
M Witzel ( Early Indian History, 1995) এ বললেন, রথ নিয়ে এসে আর্যরা স্থানীয়দের চমকিত করে দিয়েছিল ( the first appearance of ( the invading aryans) thundering chariots must have striken the local population with a thunder).
তাহলে আমরা এটাই ধরে নেব যে 1400 BC র আগে এখানকার লোকজন রথ সম্পর্কে অজ্ঞ ছিল । কিন্ত প্রত্ন প্রমাণ কি বলে ?
1। দাইমাবাদ ( মহারাষ্ট্র ) এ রথের terracotta পাওয়া গেছে । Auchin Brothers এর ছবি ছেপেছেন ।
2। Rao দেখিয়েছেন ( Puratatta 2005-6) লোথাল , ভিরানা তে চাকা পাওয়া গেছে ।
3। Danino দেখিয়েছেন, রাখিগরহি ও বানাওয়ালি তে spoked wheel এর terracotta মিলেছে ।
4। সর্বোপরি এই কদিন আগেই Sinauli ( উত্তর প্রদেশ) তে 2000 BC সময়ের তিনটি Bronze যুগের রথ পাওয়া গেছে ।
উত্তর প্রদেশে 2000 BC তে রথ পাওয়ার পরে তথাকথিত আর্যদের রথ নিয়ে এদেশে এসে চমকে দেওয়ার তত্ত্ব কি আর গ্রহণ করা সম্ভব ?
3 টে part এও শেষ করতে পারলাম না । এসব কথা আসলে 30 টি পর্বেও শেষ করা মুশকিল । যাহোক আর একটিতে শেষ করতেই হবে ! পূজার মুখে আর জ্বালাব না বেশ ।
ক্রমশ :
Comments
Post a Comment