Posts

Showing posts from September, 2017

চর্যা 15

শেষ পর্ব 'গঙ্গা জউনা মাাঝে রে বহই নাঈ ' - এই গঙ্গা-যমুনার মধ্যে থাকা নদী হল ঈড়া -পিঙ্গলার মাঝে থাকা সুষুম্না নাড়ী। যোগ সাধনায় এর ব্যাখ্যা আছে।   সব সাধন পথেরই এক মূল গত ঐক্য আছে। সরহপাদ বলছেন, 'এথ্থু সে সুরসরি জমুনা এথ্থু সে গঙ্গাসাঅরু এথ্থু পআগ বনারসি এথ্থু সেছচন্দ দিবাঅরু - এখানেই (এই দেহেই) প্রয়াগ, যমুনা,বারাণসী। এখানেই সূর্যচন্দ্র, গঙ্গাসাগর।  দেহতত্বের এই সাধন প্রক্রিয়া আজও সহজিয়া বাউল-ফকির সাধকদের মধ্যে পাওয়া যায়।   হিন্দুধর্মের কালের দোষে কঠোরতা ও সংকীর্ণতা এলে বৌদ্ধ ধর্মাদির সৃষ্টি। একই কারণে কালের স্রোতে বৌদ্ধ ধর্মে এল সহজযান । কিন্তু সনাতন দর্শনগুলি তো হারিয়ে গেল না। সরহপাদ বললেন, ' গম্ভীরই উআহরণে ণউ পর ণণ অপ্পান' -- গম্ভীরভাবে বিচার করলে দেখা যায় আপন কেউ নয়, আবার পরও কেউ নয়। অন্যতম শ্রেষ্ঠ আচার্য কান্হ্নপাদ বললেন, 'ভব জাই ণ আবই এসু কোই' -- এই ভব সংসারে কেউ আসেও না কেউ যায়ও না।   যদি সারকথা জিজ্ঞাসা করা হয়, যদি এই নশ্বর দেহে ঈশ্বর তথা তীর্থের অবস্থানের প্রমাণ চাওয়া হয় তাহলে শ্রেষ্ঠ আচার্য লুইপাদের ভাষায় বলতে হয় - 'কাহেরে কিস ভণ...

চর্যা 14

"সোনে ভরিলী করুণা নাবী রূপা থই নাহিক ঠাবী।" - আমার করুণা নৌকা সোনা  (শূন্য তথা সত্য জ্ঞান )। সেখানে রূপা অর্থাৎ রূপজগৎ তথা ইন্দ্রিয়জগতের  কোন ঠাই নাই । নাগার্জুন পাদ বলেছেন -- 'যাবান্ কশ্চিৎ বিকল্পঃ প্রভবতি মনসি ত্যাজ্য রূপো হি তাবান্....... -- মনে যা কিছু বিকল্প উদিত হয়, তা-ই ত্যাজ্য । যা পরম সুখকর আনন্দরূপ তাও, যা বৈরাগ্য ভাব আনে তা-ও । নির্বিকল্প চিত্ত ছাড়া নির্বাণ নাই ।    চিত্ত হল আসল। জ্ঞানসম্বোধি বলছে- ' চিত্তমেব মহাবীজং ভবনির্বাণয়োরপি সংবৃতৌ সংবৃতিং যাতি নির্বাণে নিঃস্বভাবতম্ ' -- ভব ও নির্বাণেও চিত্ত ই হল মহাবীজ। সংবৃত্তি তে তা রূপলাভ করে , নির্বাণে নিঃস্বভাব হয়। (সংবৃত্তি ও পারমার্থিক বোধিচিত্ত পূর্বে আলোচিত)। আগম বলেছে - 'করোতি জড়তাম অক্ষ্ণোঃ শিরশ্চাবনম্রতাং স্তৈমিত্যং চিত্তচৈত্তানাং শূন্যতা শূন্যতেক্ষির্ণাং । -- চক্ষুর স্তৈমিত্য ও মস্তকের অবনম্রতা সম্পাদন করো। চিত্তবৃত্তির স্তৈমিত্যই হল শূন্যতা । চক্ষুর স্তৈমিত্যই শূন্যতা ।   এভাবেই লাভ হবে তথতা বা নির্বাণ।

চর্যা 13

   হিন্দু তন্ত্রে শিব কে 'আদিনাথ ' বলা হয়। আবার, নাথ ধর্মে প্রথম নাথ হলেন 'আদিনাথ '। এদিকে আবার,  বৌদ্ধ তন্ত্রে বজ্রসত্ব বা হেবজ্র বা হেরুক কে 'আদিনাথ ' বলা হয়েছে ।      মূলগত মিল থাকলেও( তান্ত্রিক মহাযানী দেবতা হলেন হেরুক ও নৈরাত্ম যোগিনী) এদের সাধন পদ্ধতিগুলিতে কিছু পার্থক্য আছে । নাথপন্থী হঠযোগে 'মূলবন্ধ', 'জালন্বর বন্ধ', ও 'ওড্ডিয়ান বন্ধ' হল সাধনার তিনটি শ্রেষ্ঠ পথ। লুইপাদ এসব দরকার নেই বলছেন । তিনি বলছেন - " এড়িএউ ছান্দক বান্ধক করণক পাটের আশ সুনুপাখ ভিড়ি লেহুড়ে পাস । -- ছন্দের বন্ধন ও ইন্দ্রিয়ের পটুতার আশা পরিত্যাগ হোক। শূন্যরূপ পাখার প্রতি মনোনিবেশ করো।    চর্যা হল 'সহজ পন্থা '।  প্রত্যেক জীব তথা বস্তুর একটি সহজ স্বরূপ আছে। এটি সকল পরিবর্তনশীলতার মাঝে অপরিবর্তিত স্বরূপ । এই সহজ স্বরূপকে উপলব্ধি করে মহাসুখে মগ্ন হতে হবে।    এপথে পাপ-পূন্য দুইই হল বন্ধন। মহীধরপাদ বলছেন, 'পাপ পুন্ন বেণি তোড়িঅ সিকল মোড়িঅ খম্ভাঠাণা' - পাপ-পূন্য উভয়েরই শিকল ছিড়তে হবে। আসলে পাপ পূন্য বলে কিছু নেই । কর্মফল আছে। শূন্যতা বা নির...

চর্যা 12

       483 BC তে রাজগৃহে প্রথম বৌদ্ধ মহাসঙ্গীতি (মহা সম্মেলন) অনুষ্ঠিত হল মহাকাশ্যপের নেতৃত্বে । দীর্ঘ  7 মাস আলোচনার পরে 'স্থবিরবাদ' চালু হল। তার মূল সূত্র হল ধর্ম ও বিনয় ।        383 BC তে ঠিক 100 বছর পরে বৈশালী তে দ্বিতীয় মহা সঙ্গীতি অনুষ্ঠিত হল। ততোদিনে বৌদ্ধদের মধ্যেই তীব্র মতপার্থক্য গড়ে উঠেছে।  নব্যরা নিজ নির্বাণের পাশাপাশি জগতের মুক্তির কথাও বলছিল । স্থবিরগণ ছনব্যপন্থী 10,000 জন ভিক্ষুককে বহিষ্কার করেন । বহিষ্কৃতরা বৈশালিতেই পাল্টা সম্মেলন করেন। নিজেদের নাম দেন ' মহাসাঙ্ঘিক'। এই মহাসাঙ্ঘিক থেকেই 'মহাযান' ধারার উদ্ভব ।     247 BC তে অশোকের রাজ্যকালে পাটলিপুত্রে তৃতীয় মহাসঙ্গীতি হয় । এই সময়ের পর থেকেই ভারতে স্থবিরবাদ গুরুত্ব হারায়। ছড়িয়ে পরে সিংহল, ব্রহ্মদেশ , শ্যাম দেশে ।      কনিষ্কের আমলে চতুর্থ মহাসঙ্গীতি হয়।  এতে 'অভিধর্ম' সংকলিত হয়।     এর পরই বাংলাতে মহাযানী ও তন্ত্র মিলিত হয়ে 'বজ্র যান ' সাধনার উদ্ভব,  যা পরবর্তীতে বাংলায় পট পরিবর্তনের ফলে তিব্বতে আশ্রয় নেয় ।     ...

চর্যা 11

   বাংলা  ( পূর্ব-পশ্চিম মিলিয়ে ) যে সাধন-ভজনের পীঠস্থান সে বিষয়ে সন্দেহের অবকাশ নেই । রামকৃষ্ণ - বামাক্ষেপার পাশাপাশি অসংখ্য মাজার শরীফ বাংলাতেই আছে । আধুনিক যুগ ছেড়ে যদি অতীতে পা বাড়াই দেখতে পাব, 1. বৌদ্ধ তন্ত্র 2. নাথধর্ম 3. সহজ যান  তথা সহজিয়া সাধনা  এই দুয়েরই জন্ম, বিকাশ ও বিস্তার বঙ্গভূমি থেকে । 51 শক্তিপীঠের বিরাট সংখ্যক রয়েছে এখানে । বঙ্গভূমি শক্তিপীঠের মাধ্যমে তান্ত্রিক সাধনার জন্য একদা বিখ্যাত ছিল । বীরাচার সাধনার জন্য 'বীরভূম (বীরভূমী)' জেলার নামকরণ হয়।     মহাবীর জৈন এর অপর নাম ছিল 'বর্ধমান'। তার স্মৃতিতে বর্ধমান জেলা ও শহরের নামকরণ হয় । এমনকি চন্দ্রগুপ্ত মৌর্যের আধ্যাত্মিক গুরু ভদ্রবাহু ছিলেন পৌন্ড্রবর্ধনের মানুষ।    আমরা সাধারণ আস্তিক  মানুষ ঈশ্বরের সাথে সম্পর্ক রাখি মূলতঃ দুভাবে - 1। তিনি সর্বশক্তিমান রাজাধিরাজ । আমরা তার কাছে প্রার্থনা করি । তিনি কৃপা করেন । কৃপা পাব কি পাবনা জানি না । শুধু তার দরবারে নত হয়ে আবেদন করতে পারি । প্রার্থনা মঞ্জুর হলে খুশি হই। না হলে বিমর্ষ হই। 2। মনে করি আমরা তার-ই সন্তান  (অমৃত...

চর্যা 10

'নৈব ক্কচিৎ পুরা বদ্ধোহধুনা মুক্তির্ন বিদ্যতে' ---আগম --পূর্বেও কোথাও বন্ধন ছিল না,  এখনও কোথাও মুক্তি নেই । এই কথায় বিসম্বাদ হতে পারে । মুক্তি যদি নেই তাহলে কিসের সাধনা ? আসলে আত্মা সর্বদাই মুক্ত। সরহ পাদের কথায় - 'চিঅরাজ সহাবে মুকল' - চিত্তরাজ স্বভাবতই মুক্ত । আমরা তাকে বদ্ধ করেছি । কাহ্নপাদ বলছেন, ' চিঅ সহজে শূণ সংপুন্না' - চিত্ত সহজাবস্থায় সম্পূর্ণ শূন্য । আরও বলছেন, 'মূঢ়া অচ্ছন্তে লোঅ ন পেখই দুধ মাঝে লড় ণ চ্ছন্তে দেখই' - দুধের মধ্যে থাকা ননী যেমন দেখা যায় না, মূঢ় তেমনই চিত্তবৃত্তির শূন্যতা দেখতে পায় না । ভুসুকপাদ বলেছেন, 'জঁবে মুসা অচার তুটঅ ভুসুক ভণঅ বান্ধন ফিটঅ' -- মুষিকের(আমাদের ) এই চ'রে বেড়ানো বন্ধ হলেই বন্ধন কাটবে। দারিকপাদ বলেছেন, 'রাআ রাআ রাআ রে অবর রাঅ মোহে রে বাধা' - রাজা রাজা রাজা    মোহে পড়ে বাধা আমরা সকলেই রাজা । শুধু মোহে আবদ্ধ হয়ে আছি। তাই আসলে বন্ধনও নেই,  তাই বন্ধন থেকে মুক্তির প্রশ্নও নেই । সরহপাদের কথায় - 'হাথেরে কাঙ্কণ মা লেই দাপণ অপনে অপা বুঝ তু নিঅমন। -  হাতের কঙ্কণ দেখার জন্য আ...

চর্যা 9

চর্যা  9 "ঘরে অচ্ছই বাহিরে পুচ্ছই পই দেকখই পড়িবেসী পুচ্ছই।। - যা ঘরে আছে তাই বাইরে খুজছ । পতি কে দেখে ও প্রতিবেশী র কাছে খুজছ। অর্থৎ সব তোমার আমার কাছে ই আছে । এদিক ওদিক খোঁজ করার দরকার নেই । 'তান- জুর' - চর্যাপদের তিব্বতী অনুবাদ। এর থেকে জানা গেছে যে মুনি দত্ত ছাড়া ও চর্যার আরও টীকাকার ছিলেন । যেমন,  আর্যদেব, শাক্য মিত্র, দীপঙ্কর পন্ডিত । চীন, জাপান, কোরিয়ান ও মোঙ্গলীয় ভাষাতে এর অনুবাদ হয়েছিল । 'জামে কাম  কি কামে জাম' - সরহ পাদের এটি প্রশ্ন । জন্ম থেকে কর্মের সৃষ্টি,  নাকি কর্ম বা কর্মফলের কারণে মানুষের জন্ম ?    বুদ্ধ যে বললেন, দুঃখ আছে, দুঃখের কারণ আছে । দুঃখের নিবৃত্তি সম্ভব, দুঃখ নিবৃত্তির উপায় আছে । এই নিবৃত্তি হলে হবে নির্বাণ ।     সহজ যান সাধনা তে সব কিছুই সহজ । কঠোর কৃচ্ছসাধন করা দরকার নেই ।  নির্বাণ লাভের পদ্ধতি কি  ?   আগম শাস্ত্র বলেছে, ' ভবস্যৈব পরিজ্ঞানে নির্বাণ মিতি কথ্যতে" - সৃষ্টির বোধের দ্বারা ই এটি লাভ করা সম্ভব । সৃষ্টি তত্ত্ব বুঝতে হবে । জগত জটিল নয়, সহজ । সহজ পথেই নির্বাণ লাভ সম্ভব ।  শ্রীহে...

চর্যা 8

চর্যা 8 শান্তিপাদ ( ইনি অতীশ দীপঙ্করের গুরু ) বললেন - " কূলে কূল মা হোহি রে মূঢ়া উজুবাট সংসারা ....  জে জে উজূবাটে গেলা অনাবাটা ভইলা সোঈ । - ওরে মূঢ়, কূলে কূলে ঘুরো না। সংসার হল সোজা পথ। যে যে সোজা পথে গেল আর তারা ফিরল না (  অর্থাৎ নির্বাণ লাভ হল, আর পুনর্জন্ম হল না )।    উনি আরও বললেন - "মাআমোহ সমুদারে অন্ত ন বুঝসি থাহা.... সুনা পান্তর উহ ন দীসই ভান্তি ন বাসসি ভান্তে । - মায়ামোহ সমুদ্রের অন্ত বোঝা যায় না। শূন্য প্রান্তরের দেখা না পেলেও যেতে যেন ভুল না হয়।   অর্থাৎ  হৃদয় বৃত্তি লুপ্ত হলে প্রান্তর দিশাহীন বোধ হতে পারে । তবে থেমে যাওয়া চলবে না। এগিয়ে যেতে হবে।     এ বিষয়ে আগম শাস্ত্র বলছে -  " দগ্ধা মায়াপুরং রম্যং সহসা জ্ঞানবহ্নিনা পশ্যন্তি সততং শূন্যং দিব্যনেত্রা হি যোগিনঃ। -- জ্ঞানাগ্নীর দ্বারা রম্য মায়াপুরকে হঠাৎ দগ্ধ করে দিব্যনেত্রে যোগীরা শূন্যতাকে সতত দেখেন।     সহজ যান সাধনা তে সব কিছুই সহজ । কঠোর কৃচ্ছসাধন করা দরকার নেই । শ্রীসমাজ বলছে " পঞ্চ কামন পরিত্যজ্য তপোভির্ণ চ পীড়য়েত.... --- পঞ্চ কাম ত্যাগ করে তপস্যা য়...

চর্যা 7

চর্যা 7 চর্যার যে গানগুলি হরপ্রসাদ শাস্ত্রী নেপাল থেকে 1906 সালে উদ্ধার করেছিলেন তাতে পদ বা গান ছিল 50 টি। লালন ফকিরের দেহতত্বের গানগুলিকে observe করলে আমরা তার পূর্বসূরী হিসাবে চর্যাপদগুলিকে বুঝতে সুবিধা হবে।    100 বছর আগে শাস্ত্রীজীর আবিস্কার প্রকাশিত হতেই বাংলা ভাষার আদিরূপ আবিস্কারের আনন্দে এই চর্যাগীতির আভ্যন্তরীন সাধন-ভজনের দিকটি অনালোচিত থেকে যায়। পরবর্তীকালে ধীরে ধীরে সামনে আসে এর সহজিয়া সাধন কথা।  চর্যা গাওয়া কেন হতো ?   সাধনার অঙ্গ হিসাবে গান বাংলা তথা ভারতীয় সংস্কৃতির অঙ্গ। সে ভক্তিগীতি হোক, বা বৈষ্ণব গীত বা বাউল -ফকিরদের গান। গানের কথায় সুরে ইঙ্গিতে সাধনার চর্চা বরাবরের।    শশিভূষণ দাশগুপ্ত পরবর্তীকালে আরো শতাধিক চর্যাগীত উদ্ধার করলেও মুনিদত্তের ব্যাখ্যা সমন্বিত প্রথম 50 টি ই আজও আলোচিত বেশি।      ঐ 50 পদের রচয়িতা হিসাবে 24 জন সিদ্ধাচার্যের নাম পাওয়া যায়। এদের মধ্যে সর্বাধিক বিখ্যাত হল কাহ্ন পাদ। ইনি কখন্ও কৃষ্ণাচার্য নামেও পরিচিত। চর্যা ছাড়াও কাহ্নপাদ রচিত ' হে বজ্রপঞ্জিকা যোগরত্নমালা' নামক তান্ত্রিক গ্রন্থের পান্ডুলিপি C...

চর্যা 6

চর্যা 6 " দশমি দুয়ারত চিহ্ন দেখইআ   আইল গরাহক অপনে বহিয়া। পইঠেল গরাহক নাহি নিসারা ... -- বিরুআ পাদ ( ত্রিপুরাতে জন্ম, দেবপালের সমসাময়িক, বিরুআ বজ্র গীতিকা- র রচয়িতা) শুড়িনি ( নৈরাত্মাদেবীর রূপক, তিনি কখনও ডোম্বী, ঈখনও শবরী) দশমী দুয়ারে চিহ্ন দিয়ে রাখেন। যারা বোধিচিত্তের প্রত্যাশী, তারা সে পথে শুড়িখানায় প্রবেশ করে এবং আর বের হয় না। অর্থাৎ নির্বাণ লাভ করে ।   বোধিচিত্ত দেহে কিভাবে প্রবেশ করে ? শরীরের নয়টি রন্ধ্রপথ বা নবদ্বার ( চক্ষু 2, কর্ন 2, নাক2, মুখ, পায়ু ও উপস্থ) এর একটি দিয়েও নয়। প্রবেশ করে অতিরিক্ত দশম রন্ধ্র দিয়ে। বৌদ্ধ দর্শনে একে ' বৈরোচন দ্বার' বলে। বুদ্ধ যেভাবে বুদ্ধত্ব লাভ করেছিলেন ঠিক সেই ভাবে। সম্ভবত তান্ত্রিক মতে একেই বলে ব্রহ্মরন্ধ্র।   চিখিলপাদ আবার বলছেন - " ভবনই গহন গম্ভীর বেগে বাহী " --  জীবননদী গহন ও গম্ভীর। তার দুদিকে পাঁক, মধ্যিখানে অতল ঠাই। যোগসাধনার সাঁকো দিয়ে পার হতে হবে। গুন্ডরী পাদ বলছেন- " খেপহুঁ জোইনি লেপ ন জাঅ -- -- যোগিনী, ক্ষিপ্ত হও, লিপ্ত হয়ো না। কারন সরহপাদ জানিয়েছেন - " অপানে রচি রচি ভবনির্মাণা   মিছে লোঅ...

চর্যা 5

চর্যা  5 "দিবসই বহুড়ি কাউই তরে ভাঅ  রাতি ভইলে কামরু জাঅ ।। "অইসনি চর্যা কুক্কুরী পাএ গাউই কোড়ি মাঝে একু হি অহি সমাইউ।।   কুক্কুরী পাদ( উনি 800 AD নাগাদ ধর্মপাল-দেবপালের আমলে জীবিত ছিলেন। তারানাথ মনে করেন এটা ছদ্মনাম। এই সিদ্ধ যোগীর সঙ্গে সর্বদা কুকুর থাকত বলে এমন নাম) এমন চর্যা গাইলেন যে কোটি তে একজন সমঝদার হলেন । যে বউটি দিনে কাক কে দেখে ভয় পায়, রাতে সে ই কাম নগরে যাত্রা করে । অর্থৎ ভীত সন্ত্রস্ত মানুষ যোগ সাধনায় অসীম ভয় কে লঙ্ঘন করতে পারে । " দুলি দুহি পিঠা ধরন না জাই.. দুলি মানে কচ্ছপ, তাকে দুইয়ে পাত্রে ধরা যাচ্ছে না।  এ বড়ই অদ্ভূত কথা। কচ্ছপকে দোহন করা কি সম্ভব ? আসলে এটি রূপক। মুনিদত্ত এই ভাষাকে ' সান্ধ্য ভাষা ' বলেছেন। এক্ষেত্রে দুলি বা কচ্ছপ হল অপরিশুদ্ধ বোধিচিত্ত। পিঠা হল দেহপাত্র।    কাহ্নপাদ বলেছেন - " ভনই কাহ্ন দুল্লক্খ সুরবগাহ কো মনে পরিভাবই ..  -- দুর্লক্ষ্য তত্ত্বকে বিশেষভাবে উপলব্ধি করতে হবে।   চিত্তের যে অবস্থায় নির্বাণ লাভের আকাঙ্খা হয় তাকে 'বোধিচিত্ত' বলে। হিন্দু যোগসাধনায় যা 'কুলকুন্ডলিনী শক্তি', সহজসাধনা-য় তার ...

চর্যা 4

চর্যা  4   চর্যাপদের উপলব্ধির জন্য বৌদ্ধ সাধন পদ্ধতিগুলি উপলব্ধির প্রয়োজন । এই পদ্ধতিগুলি 'যান বা পথ । বুদ্ধ প্রচারিত ধর্ম নিয়ে বৌদ্ধ দের মধ্যে বিরোধ না থাকলেও তার নির্বাণ লাভের পদ্ধতি নিয়ে মত পার্থক্য হয়ে ক্রমশই হীনযান, মহাযান, বজ্র যান, সহজ যান ইত্যাদি সাধন পথের উদ্ভব ।    বৌদ্ধ দের মতপার্থক্য দূর করতে রাজগৃহে, বৈশালী, পাটলিপুত্র( অশোকের সময়) এবং কনিষ্কের সময় সবমিলিয়ে চারটি মহা সম্ম লন অনুষ্ঠিত হয় । একেকটা সম্মেলনের পরে একেকটা 'যান' এর উদ্ভব হয় ।   হীনযান  -      এদের বিশ্বাস বুদ্ধ প্রদর্শিত পথেই অর্হৎ বা নির্বাণ লাভ সম্ভব । এই অর্হৎ লাভের চারটি স্তর । 1. স্রোতাপন্ন - এ অবস্থায় পশু জন্মের ভয় দূর হয় । 2. সকৃদাগামী - আর একটি মাত্র জন্ম বাকি । 3. অনাগামী - আর জন্ম নয় । 4. অর্হৎ মহা যান - নিজের নির্বাণ লাভের পাশাপাশি সমগ্র বিশ্বের মুক্তি ভাবনা করা হয় । এর দুটি ভাগ 1. মাধ্যমিক - প্রবৃত্তি ও নিবৃত্তি র মাঝে মধ্য পথ ( শূন্য বাদ ) 2. যোগাচার -   এই যো গা চার পালন করতে গিয়ে তিনটি পৃথক পথ সৃষ্টি হয়েছিল । 1। বজ্র যান 2। কাল চক্র যা...

চর্যা 3

চর্যা 3   ' অপণা মাংসে  হরিণা  বৈরী   ... ' কাহে রে ঘেণি মেলি অচ্ছহ কীস ... ' এ বন চ্ছাড়ী হোহু ভান্তো  ... ভুসুক পাদ বলছেন - হরিণ তার মাংসের জন্য নিজেই নিজের শত্রু । তার মাংসের জন্য ব্যাধ এবং  অন্য মাংসাশী প্রাণীরা তাকে তাড়া করে ফেরে । ভুসুক পাদ বলছেন, কি ছেড়ে কি নিয়ে এ জঙ্গলে পড়ে আছ । এ বন ছেড়ে অন্য বনে যাও ।   সংসার চক্রে পিষ্ট মানুষদের প্রতি এ আহ্বান । তোমার থেকে যা পাওয়া যাবে তা চেয়ে -ছিনিয়ে নিতে অন্যরা ব্যস্ত, তাতে তোমার সর্বস্ব চলে গেলেও কারো ভ্রুক্ষেপ নেই । ভুসুকপাদ তাই বলছেন, এ সংসার জঙ্গল থেকে অন্যত্র যাও । সংসার ত্যাগ নয়,  সংসারের চাওয়া পাওয়ার উর্ধ্বে যাও । বোধিচর্যাবতার বলছে - 'অস্থিপঞ্চরতো মাংসং প্রজ্ঞাশাত্রেণ মোচয় ... কিমত্র সারমস্তীতি স্বময়েব বিচারয় ... -- নিজবুদ্ধি দ্বারা প্রজ্ঞার মাধ্যমে অস্থিপঞ্জর থেকে মাংসকে পৃথক করে দেখ কি সারপদার্থ আছে । নিজেই বিচার কর । ক্রমশ ---

চর্যা 2

   কাআ তরুবর পঞ্চ বি ডাল    চঞ্চল চীএ পইঠো কাল ।    সঅল সমাহিঅ কাহি করিঅই     সুখ দুখেতে নিচিত মরিঅই ।   ভনই লুই আমহে ঝানে দিঠা... ---- শরীর হল বৃক্ষ, পঞ্চ ইন্দ্রিয়কে পাঁচটি ডাল ধরা হয়েছে । চঞ্চল চিত্ত মাঝে প্রবেশ করতে হবে । সুখ দুঃখের পরে মৃত্যু অনিবার্য । তাই সকল সমাধি কি সাহায্য করতে পারে?  লুইপাদ বলছেন তিনি ধ্যানে বসে জেনেছেন ।     চর্যাপদের জন্ম ও ব্যবহার মূলত বাংলায় পাল রাজাদের সমসাময়িক । এর ভাষা প্রাকৃত বাংলা । লুইপাদ বৌদ্ধ সহজিয়া সাধক। মুনি দত্তের ভাষায় আদি সিদ্ধাচার্য । তিনি বাংলা ভাষার আদিতম কবি । যোগ তন্ত্রের নানা গ্রন্থে ওনার নাম পাওয়া যায় । কোথাও কোথাও লুইপাদ কে নাথ সম্প্রদায়ের সিদ্ধ গুরু মীননাথ বলে চিহ্নিত করা হয়েছে । এই বিষয়ে বিতর্ক আছে । তবে উনি ধর্মপালের সমসাময়িক । 50 টি বিখ্যাত চর্যাপদের 2 টি ওনার রচিত ।     সহজ সাধনা হল মধ্য মার্গের সাধনা । কঠোর কৃচ্ছসাধন ও উদ্দাম উপভোগের মধ্যবর্তী জীবন যাপন পথে এর গমন ।      মুনি দত্ত একে বলেছেন 'মহারাগনয়'। বৌদ্ধ সহজ সাধনার এই 'মহারাগনয় চর্...

চর্যা 1

চর্যা --  1 রাগেণ বধ্যতে লোকো রাগেণৈব বিমুচ্যতে ... ------   শ্রীহেবজ্র attachment এই বন্ধন এবং তাতেই মুক্তি । চর্যা' ব্যাখ্যাকার মুনি দত্ত -র উদ্ধৃতি । কোথাও যেন প্রবৃত্তি - র পথে নিবৃত্তি -র ইঙ্গিত ।  'চর্যাপদ  হীনযান, মহাযান  পথ পেরিয়ে বৌদ্ধ বজ্র যান ও সহজযান  সাধন পথের কথা বলে । শ্রীহেবজ্র  হল  বৌদ্ধ তন্ত্র বিষয়ক পুঁথি । চর্যাপদের মুনি দত্ত কৃত সংস্কৃত ব্যাখ্যা  হরপ্রসাদ শাস্ত্রী নেপাল থেকে উদ্ধার করেন  1906  সালে ।