বৌদ্ধ দর্শন ৮

          ' বিসংখার গতং চিত্তং তণহানং খরস অজঝগা '
                   - সংস্কারমুক্ত চিত্তে আজ তৃষ্ণা ক্ষয় হয়ে গেছে ।
    এবার বুদ্ধ এলেন কপিলাবস্তূ, তার জন্মভূমি। সেখানে ধর্মসভায় বললেন, এ বিশ্ব সৃষ্টি নিয়ে প্রশ্ন করা নিরর্থক। কারণ এ প্রশ্নের উত্তর আজ পর্যন্ত কোন মানুষ দিতে পারেনি। যা জানার প্রয়োজন তা হল কামনা-বাসনা থেকেই মানুষের জন্ম, আর এখানেই বন্ধনের উত্‌পত্তি।
    মানুষের জন্ম হলে জরা-ব্যাধি এসব আসবেই। মানুষ ক্রমশই এসবের দাস হয়ে পড়ে। তারপর দীর্ঘ জীবন চলে বন্ধন, আকর্ষণ আর আধি-ব্যাধির সঙ্গে প্রতিনিয়ত সংগ্রাম। এই সংগ্রামের অপর নাম জীবন। এরপর আসে মৃত্যু। তবে মৃত্যুই শেষ নয়। মৃত্যুর পরে আবার জন্ম। এভাবেই জন্মচক্র বা জন্ম-প্রবাহ প্রবাহিত হতে থাকে।
    মানুষ তার নিজের বন্ধন প্রতিনিয়ত সৃষ্টি করছে। এই বন্ধন ছেদের অস্ত্রও আছে তার নিজের কাছে।  এটাই বিচিত্র। এটাই কর্মচক্র। মানুষ তার কর্মের ফল্ভোগ নিজেই করে। যদি সে তার জন্মচক্রে বা জন্মপ্রবাহে আবদ্ধ থাকে তবে তার মুক্তি হতে পারে না।
    বুদ্ধ বলে চললেন, এই মুক্তি পেতে গেলে মানুষকে আজীবন কিছু সাধারণ শর্ত মেনে চলতে হবে। যেমন, সত্য কথা বলা, সত্যপথে চলা, মানুষকে সেবা করা, কুসংস্কার নষ্ট করা, কামনা-বাসনা নির্মূল করা, হৃদয় নির্মল করা। তাহলে হৃদয়ে জ্ঞানের আলো জ্বলবে। এরপর দরকার সাধনা ও ধ্যান। তবে এই জন্মপ্রবাহ রুদ্ধ হবে। মানুষ মুক্তি পাবে, নির্বাণ লাভ ঘটবে।
      বিম্বিসারের মৃত্যুর পরে তার পুত্র অজাতশত্রু রাজা হয়েছেন। তিনি প্রাথমিক বিদ্বেষ কাটিয়ে বুদ্ধের শরণাগত হয়েছেন। মগধে বুদ্ধ আবার ধর্মসভা করলেন। বললেন,
       ১। মিত্রের প্রতি যে ভাব সেই ভাবের নাম 'মৈত্রী'।
      ২। প্রাণের যে অবস্থায় অপরের দুঃখে দুঃখ উপস্থিত হয়, অপরের দুঃখ দূর করার ইচ্ছা হয় সেই অবস্থার নাম 'করুনা'।
     ৩। প্রাণের যে অবস্থায় অপরের সুখে সুখ উপস্থিত হয় সেই অবস্থাকে 'মদিতা' বলে।,
     ৪। এই তিন তিন অবস্থা অতিক্রম করে যখন মানুষ দুঃখে অনুদবিগ্নমনা এবং সুখে বিগতস্পৃহ হয়, সেই শান্ত অবস্থাকে বলে 'উপেক্ষা'।
   বুদ্ধের প্রবর্তিত ধর্মে মৈত্রী ভাবনা, করুনা ভাননা, মুদিত ভাবনা ও উপেক্ষা ভাবনা এক বিশেষ সাধনার ক্রম।
এরপর বুদ্ধ সম্যক সমাধি ও ব্রহ্মবিহার সম্পর্কে আলোচণা করবেন।
-ক্রমশঃ 

Comments

Popular posts from this blog

কঠোপনিষদ ২০

উপনিষদ পর্ব 1

মহাভারত শ্লোক