বৌদ্ধ দর্শন 3

    ব্যবহারিক সত্তার বিনাশে পারমার্থিক সত্তা উৎপন্ন হয় না, প্রকাশিত হয় মাত্র এই কথাটি একটু বুঝে নিতে হবে । আসলে পারমার্থিক সত্তাটি থাকেই । যেমন দিনের বেলা সূর্যের আলোয় তার থেকেও বড় ও শক্তিশালী নক্ষত্রেরা নজরে পড়ে না, কিন্তু দিনান্তে তারা প্রকাশিত হয়, তেমনটি । আবার ব্যবহারিক সত্তার সম্পূর্ণ বিনাশ না হলে পারমার্থিক সত্তা প্রকাশিত হবে না বুদ্ধ যে এমনটা বললেন, এটিও বিচার না করে গ্রহণ করা যাচ্ছে না । যেমন বিকাল বা সন্ধ্যাকালে চাঁদ বা নক্ষত্রেরা আবছা ভাবে ক্রমশ প্রকাশিত হতে থাকে তেমনই একটি সান্ধ্য ক্ষণ আসতে পারে যখন ব্যবহারিক ও পারমার্থিক সত্তা দুটোরই অনুভব হতে পারে ।
   আবার ভেবে দেখা যেতে পারে ব্যবহারিক সত্তার বিনাশ হলেই কি নিশ্চিত ভাবেই পারমার্থিক সত্তা প্রকাশিত হয় ? বুদ্ধ এ বিষয়ে কিছু বলেন নি । রাতে যদি মেঘলা আকাশ থাকে তাহলে কি তারা দেখা যাবে ?  ব্যবহারিক সত্তা অস্তমিত হলে আসতে পারে সমাজ আরোপিত ভ্রান্তি । সংশয়ের কালো মেঘ । সত্য দর্শনকে মনে হতে পারে মনোবিকার ।
    বুদ্ধ কিছু বলেননি ।
  তবে একথা চরম সত্য যে ব্যবহারিক সত্তা প্রবল থাকলে পারমার্থিক সত্তাকে অনুভব করা যাবে না ।
   বুদ্ধ প্রথম জন সম্ভাষণে অষ্টম সত্যের কথা বললেন । একটু ভালো করে খেয়াল করলে দেখা যাবে সে সবই আধুনিক management দর্শন এর কথা । আত্ম বিশ্বাস,  নিষ্ঠা,  সংকল্প, উদ্যম - এর কথা । তখন ও পর্যন্ত উনি অষ্টাঙ্গ মার্গের কথা বলেননি । তাহলে এমন কি বললেন যে কাশীর জনতা উদ্বেলিত হল ?
    বলেননি আহামরি কিছু । কিন্তু জানা কথাই এমন সত্য উপলব্ধির মাধ্যমে বললেন,  তাতে বিশ্ব প্রকৃতির এমন চেতন শক্তি প্রবাহিত হল,  যারা শুনলেন তারাও সত্য দর্শনের স্বাদ পেলেন । এক প্রদীপ থেকে শত প্রদীপ জ্বলে উঠল ।
   পরবর্তীতে উনি অষ্টাঙ্গ মার্গের কথা বলবেন,  যা লক্ষ লক্ষ মানুষ মেনে চলবেন শত শত বছর ।
- ক্রমশঃ

Comments

Popular posts from this blog

কঠোপনিষদ ২০

উপনিষদ পর্ব 1

মহাভারত শ্লোক