।।  বৌদ্ধ দর্শন  1 ।।
  ধর্ম  (religion নয়) আলোচনায় বিশুদ্ধ সমুত্থান (সমভাবে উত্থিত বা কুশল যুক্ত) চিত্তের প্রয়োজন । লেখক বা বক্তার যশ, ধনোপার্জন, ঈর্ষা, প্রতিযোগিতা ইত্যাদি ভাবনা এবং পাঠক বা শ্রোতার নিন্দা, প্রশংসা, যশ-অপযশ ইত্যাদি ভাবনা থাকলে তা কুশল বা সমুত্থিত নয় ।
    তাহলে আমি যে মাঝে মধ্যেই ধর্ম আলোচনায় নিযুক্ত হচ্ছি এবং তা জনসমক্ষে প্রকাশ করছি প্রশ্ন হতে পারে এর উদ্দেশ্য কি  ?
    এর উত্তর বৌদ্ধ দর্শনের অন্তর্গত 'প্রতিত্যসমুৎপাদ দর্শন ' এ পাওয়া যাবে । তিব্বতী ভাষায় একে 'তেন-ডেল' বলে । 'তেন' অর্থ সাপেক্ষ হওয়া বা আশ্রিত বা নির্ভরশীল হওয়া । 'তেন - ডেল' বা প্রতিত্যসমুৎপাদ -এর অর্থ হল ' পরস্পর নির্ভরশীলতা এবং সংযোগের ফলে উৎপন্ন হওয়া । এককথায় পারস্পরিক সহায়তার মাধ্যমে অগ্রসর হওয়া । আরো ভালো রবি ঠাকুরের ভাষায় -
    'একাকী গায়কের নহে সে গান
     মিলিতে  হবে দুইজনে (গায়ক ও শ্রোতা )
      একজন গাবে খুলিয়া গলা
       অন্যজন গাবে মনে।
   সূত্র পিটক  থেকে জানতে পারছি বুদ্ধ বলছেন -
   'অবিদ্যা' বা ভ্রান্ত ধারণা থেকে জন্ম নেয় সংস্কার । সংস্কার থেকে প্রবৃত্তি । প্রবৃত্তি হল জীবনের প্রতি আকর্ষণ । এ থেকে সৃষ্ট হয় ' নামরূপ' , যা মনের সেই অংশ যে বস্তু জগতের দিকে ধাবমান । এ থেকে জন্মায় স্পর্শ, যা থেকে সৃষ্ট হয় অনুভূতির (বুদ্ধের ভাষায় বেদনা)। এই অনুভূতি নিয়ে আসে তৃষ্ণা , জীবনের প্রতি তৃষ্ণা । এই তৃষ্ণা থেকে উৎসারিত হয়  'ভব', অর্থাৎ জন্মের প্রস্তুতি পর্ব।
       বুদ্ধ মনে করছেন জন্ম মানেই হল শোক, দুঃখ, ভোগ । ভোগের পরিনতি হল অবসাদ ও নিরাশা । এবং জন্মের পরিনতি হল জরা ও মৃত্যু ।
      আমরা যদি জীবনকে এতোটা negatively না-ও নিই, তা-ও আমরা বুদ্ধের একথা এককথায় মেনে নিই যে,
    1।  দুঃখ আছে
    2। দুঃখের কারণ আছে  এবং
    3। দুঃখ নিবৃত্তির পথ আছে ।
    বুদ্ধের মতে ত্রিবিষরূপী ক্লেশ  (রাগ,দ্বেষ ও মোহ ) হল দুঃখের কারণ ।  এগুলি জয় করা বা এসব থেকে মুক্ত অবস্থাকে মোক্ষ বা নির্বাণ বলে ।
     বিশ্ব হল চেতন পরম্পরার ধারা ।  মানুষ হল তার দেহ,  মন ও অহং বোধ এই তিন উপাদানের সমষ্টি । তার চেতনা পরম্পরাকে বিশ্ব চেতনা পরম্পরায় যুক্ত করতে হবে । তবে সে তার অহং তথা দুঃখকে অতিক্রম করতে পারবে ।
  -  ক্রমশঃ 

Comments

Post a Comment

Popular posts from this blog

কঠোপনিষদ ২০

উপনিষদ পর্ব 1

মহাভারত শ্লোক