রাখিগরহি: দ্রাবিড়-আর্য দ্বন্দ্ব

।। রাখিগরহি : আর্য -দ্রাবিড় দ্বন্দ্ব ।।
   রাখিগরহি তে এপর্যন্ত সর্ববৃহৎ হরপ্পা সভ্যতার নগর আবিস্কারের পরে আবার নতুন করে আর্য-দ্রাবিড় দ্বন্দ্ব মাথা চাড়া দিয়েছে । ওখানে প্রাপ্ত কঙ্কালের জিন study করে কিছু মত সামনে এসেছে । কেউ কেউ বলছেন সিন্ধু সভ্যতা যে দ্রাবিড় সভ্যতা তার প্রমাণ মিলেছে ।
  আমরা এ বিষয়ে একটু আলোচনা করে নেব ।
1।  মধ্য এশিয়ার steppe অঞ্চলের R1a1 জিন পাওয়া যায় নি,  তাই বলা হচ্ছে যে আর্যরা রাখিগরহিতে ছিলেন না ।
 - এখানে একটা  hypothesis এ আমরা ধরে নিচ্ছি যে steppe অঞ্চল থেকে আর্যরা এদেশে এসেছিল । অথচ 'আর্যরা বহিরাগত' বা Aryan Invasion/Migration Theory' এতো বছরের চেষ্টা সত্ত্বেও একদল ঐতিহাসিক প্রমাণ করতে পারেন নি । বরং আর্য সংস্কৃতির উৎপত্তি ভারতে এই মতই জোরদার হচ্ছে ক্রমশ ।
    মেহেরগড়, ভিরানা(হরিয়ানা) অঞ্চলে যে সভ্যতা 9000 বছর থেকে ধারাবাহিক ভাবে উন্নতির স্তর পার করে অন্ততঃ 6-7 হাজার বছর টিকে রইল তাকে মধ্য এশিয়ার একদল যাযাবর জাতির সাথে যুক্ত করার চেষ্টা করাটাই একধরনের ছেলেমানুষি ।
2। রাখিগরহি DNA project Director বসন্ত সিন্ধে ও নিরজ রাই বলেছেন সেখানে আবিস্কৃত জিন সম্পূর্ণ ভারতীয় ।
 - এমনটাই তো হবার কথা । কেন যে আমরা ইউরোপ -মধ্য এশিয়ার মানুষ এসে ভারতীয় সভ্যতা গড়ে তোলার কথা ভাবি , সেটাই তো আশ্চর্যের । কারণ 9-10 হাজার বছর আগের সভ্যতার প্রমাণ তো ওখানে কোথাও নেই! !
  রাই বলেছেন প্রাপ্ত  I 4411 জিনটির নিকটবর্তী জিন মিলেছে নীলগিরি অঞ্চলে।
   এই তথ্য দিয়ে বলা হচ্ছে হরপ্পা সভ্যতা দ্রাবিড় সভ্যতা ।
- সিন্ধু /হরপ্পা সভ্যতা দ্রাবিড় সভ্যতা হলে অসুবিধা কিছুই নেই । কিন্তু দ্রাবিড় কি জাতিগতভাবে আলাদা কিছু  ? এটা আগে বুঝতে হবে ।
3।  সংস্কৃত  দ্রব্  (জল) + বিড়্  (নিকটবর্তী edge)  থেকে উৎপন্ন দ্রাবিড় কথাটি একটি ভৌগলিক স্থান নির্দেশ করে । অর্থাৎ সমুদ্রের কিনারা ভুক্ত অঞ্চল। মহাভারতে এই অঞ্চলের কথা আছে । শঙ্করাচার্য নিজেকে "দ্রাবিড়-শিশু' বলে অভিহিত করেছিলেন । জাতিগতভাবে (anthropological ) দ্রাবিড় জাতি বলে কিছু হয় না ।
   দ্রাবিড় ভাষাগোষ্ঠী হিসেবে পৃথক কিছুর ভাবনা শুরু হয় খৃষ্টান পাদ্রী Caldwell এর লেখা 1861 সালের বই থেকে । এর পূর্বে বাংলা ,পাঞ্জাবি,  মারাঠীর মতো  তামিল, তেলেগু ও  ভারতীয় একটি ভাষা বলে চিহ্নিত ছিল । ভালো করে নজর করলে দেখা যায়  উত্তর ভারতীয় ভাষাগোষ্ঠীর সাথে অমিল ততটা নয়  যতটা  হিন্দি -চিনি বা  বাংলা -সাঁওতাল ভাষার মধ্যে আছে ।  বাংলাতে যেমন বহু অস্ট্রিয়া শব্দ প্রবেশ করেছে তামিল -তেলুগু তেই তেমনি বহু আদিবাসী শব্দ আছে ।
4।  লিপিগতভাবে আর্য-দ্রাবিড় পার্থক্য আরও কম। কারণ সবগুলোরই আদি ব্রাহ্মী । তামিল -ব্রাহ্মী Script এর পূর্ববর্তী  কোনও script সমগ্র দক্ষিণ ভারতে পাওয়া যায় নি ।
5।  রাজস্থানের বাগোর,  মহারাষ্ট্রের দাইমাবাদ,  মধ্যপ্রদেশ এর নানা স্থানে  40-20 হাজার বছর আগের প্রস্তর যুগের নানা সভ্যতার প্রমাণ পাওয়া গেছে । ভারতের মানুষ ধারাবাহিকভাবে ক্রমবিকাশের পথে এগিয়েছে । ক্রমে গড়ে তুলেছে নাগরিক সভ্যতা । এটাইতো স্বাভাবিক ।
  কেন আমরা বিদেশ থেকে আগত কেউ সিন্ধু হোক বা আর্য সভ্যতার স্থাপন করেছিল,  এই ভাবনা থেকে বের হতে পারছি না  ?  বহু বছরের বিদেশী শাসনের Effect কি এর কারণ  ?
  কখনও আর্য -দ্রাবিড়,  কখনও  হরপ্পা -কোট দিজিয়ান,  কখনও জিন,  কখনও ভাষা;  নানাভাবে প্রাচীন ভারতীয় সভ্যতা -সংস্কৃতিকে টুকরো টুকরো করে দেখে চলেছি ।
  Maxmuller নিজের ভুল স্বীকার করে 1872 সালে বলেছিলেন,
"... it is unscientific. ..to speak of Aryan race,  Aryan blood and Aryan  skulls "
 -   Speech at Stressburg University
    আর্য জাতি বলে কিছু হয় না ।
তবে কে আর এসব শোনে  ?

Comments

Popular posts from this blog

কঠোপনিষদ ২০

উপনিষদ পর্ব 1

মহাভারত শ্লোক