চিরায়ত কাহিনীর আমাদের কথা ।। পর্ব 1

।। ভীষ্ম - অম্বা - কর্ম ও কর্মফল  ।।
 যো যথা  বর্ততে  যস্মিংস্তথা তস্মিন্ প্রবর্ততে ।
  অম্বাকে বিবাহ করতে চিরকুমারব্রতধারী ভীষ্ম  যখন  গুরু পরশুরাম কর্তৃক আদিষ্ট হয়ে শুনলেন,  আজ্ঞা না মানলে  21 বার নিঃক্ষত্রিয়কারী গুরু, তার প্রাণাধিকপ্রিয় শিষ্যের বিরুদ্ধেও অস্ত্রধারনে দ্বিধা করবেন না,  তখন গঙ্গাপুত্র একথা বলে বোঝালেন যে, যে ব্যবহার তিনি পাবেন,  সেই ব্যবহার ই  ফিরিয়ে দেবেন ।
  এটাই  পুরুষাকারের ধর্ম ।  যেমন ব্যবহার পাব, তেমনটাই ফিরিয়ে দেব । মিত্রের সাথে মিত্রতা করব,  তবে শত্রুর সাথে শত্রুতা না করলেও মিত্রতার ভান করব না । এ ক্ষত্রিয় গুণ,  রজোগুণ।  তাহলে অহিংসাবৃত্তির যে জয়জয়কার, তার কি হবে ?
   সে ধর্ম সাধকের,  মুমুক্ষুর ।  সাধারণ মানুষের ঘরে সাপ ঢুকলে তাকে লাঠি নিয়ে তেড়ে যেতেই হবে । মশা না মারলে রক্ত চুষে খাবে ।
   ভীষ্ম যে বৈমাত্রেয় ভাইয়ের জন্য তিন রাজকন্যা ( অম্বা, অম্বিকা, অম্বালিকা) কে উঠিয়ে আনলেন সেখানেই তাঁর কর্মফলের শুরু । পিতা শান্তনুকে স্বেচ্ছায় কথা দিয়েছিলেন যে অবিবাহিত থেকে হস্তিনাপুর রক্ষা করবেন  ( অবশ্যই মহান   আত্মত্যাগ ), ভাইয়ের জন্য বউ উঠিয়ে আনবেন,  এমন তো কথা ছিল না  !
  স্বয়ংবর থেকে কন্যা তুলে আনা সে যুগে ক্ষত্রিয় ধর্মে স্বীকৃত ছিল  এবং বীরপদবাচ্য হত । তবে  রাজা  বা রাজকুমার,  যিনি পাত্র,  একাজটি তাকে করতে হত । কৃষ্ণ করেছিলেন । অপদার্থ ভাইয়ের হয়ে  এ কাজ ভীষ্ম কেন করবেন? 
  আবার যখন জানলেন যে সে কন্যা রাজা শাল্বকে  পতি স্বীকার করেন, তখন তাকে মুক্তি দিলেন । যদিও এমন লাঞ্ছিতা কন্যাকে রাজা গ্রহণ করলেন না  ( সেটি তার কর্ম,  সেটির ফলের বিচার আলাদা ), তখন অম্বা ভীষ্মকেই বিবাহ করতে হবে এমন দাবী নিয়ে পরশুরামের কাছে গেলেন ।
  ফল কি হল আমরা জানি । 40 দিন  ঘোরতর অমিমাংসিত যুদ্ধের পর পরশুরাম অম্বা র কাছে ক্ষমা চাইলেন । ক্ষুব্ধ  অম্বা প্রতিশোধ কামনায় সাধনা করে দেহত্যাগ করে পরজন্মে শিখণ্ডী হয়ে দ্রুপদের ঘরে জন্মালেন ।
  সব জানতেন ভীষ্ম । কুরুক্ষেত্র যুদ্ধে  তিনিই জানালেন তাকে পরাস্তের পথ । শিখন্ডীকে সামনে রেখে অর্জুন আক্রমণ করলেন,  ভীষ্ম শিখন্ডীকে অম্বাজ্ঞানে সেদিকে তীরচালনা করলেন না এবং শরশয্যায় পতিত হলেন।
  কম বয়সে অজ্ঞতাজনিত কৃত  কর্মের ফল ভোগ করলেন স্বেচ্ছায় !  ততদিনে তিনি  আরও জ্ঞানী হয়েছেন  এবং জেনেছেন  প্রারব্ধ কর্মের ভোগ না হলে যে মুক্তি নেই !!

Comments

Popular posts from this blog

কঠোপনিষদ ২০

উপনিষদ পর্ব 1

মহাভারত শ্লোক