বুদ্ধ দর্শন ও প্রাসঙ্গিকতা
বুদ্ধ দর্শন
ও প্রাসঙ্গিকতা
রজত পাল
“তণহায় জায়তে সোকো তণহায় জায়তে ভয়ং
… তসিনং বনোদয়ে ভিকখু আকাঙ্খী বিরাগমত্তনো ”
প্রায় আড়াই হাজার বছর আগে অস্থির ভারতবাসীর কাছে এক যুগপুরুষ ঘোষণা
করলেন যে, তৃষ্ণা থেকেই শোক এবং তৃষ্ণা থেকেই ভয়ের উত্পত্তি । তাই হে ভিক্ষু,
মুক্তি আকাঙ্খা করে তৃষ্ণাকে অপনোদন কারো।
ইনি সিদ্ধার্থ, ইনি গৌতম বুদ্ধ। ইনি যখন জন্ম
নিচ্ছেন, ভারত তখন বৈদিক যুগের অন্তিম অধ্যায়। যাগ-যজ্ঞ, বর্ণভেদসহ নানা উপাচারে
সাধারন মানুষ ব্যতিব্যস্ত। বৈদিক শাস্ত্রের মূল অনুপান ভুলে গিয়ে শুধু পড়ে আছে
রীতি-নীতির নিস্ফল অনুকরণ। না জেনে বুঝেই নানা
দেবদেবীর আরাধনা তথা নিয়মের বন্ধনে আষ্টে-পিষ্ঠে আবদ্ধ জনজীবন। যদিও সাংখ্য দর্শন বা পতঞ্জল
যোগদর্শন জ্ঞাত ছিল, তবু তা ছিল সর্বসাধারনের বোধবুদ্ধির বাইরে। জনজীবন ছিল দুঃখ দুর্দশায়
জর্জরিত।
কপিলাবস্তুর
রাজপুত্র সিদ্ধার্থ জনসাধারনের জন্য নিয়ে এলেন শান্তির বাণী। তিনি মূলতঃ চারটি কথা বললেন। বললেন যে,
১। দুঃখ আছে
২। দুঃখের কারণ আছে
৩। দুঃখ নিবৃত্তি সম্ভব এবং
৪। দুঃখ নিবৃত্তির পথ আছে।
তিনি ঈশ্বর নিয়ে কিছু বললেন
না, দেবদেবতা নিয়ে নীরব রইলেন। সাধারন মানুষের ভাষায় সহজসরল
জীবন সত্যকে তুলে ধরলেন। জনমানসে উন্মাদনা সৃষ্টি হল।
রাজপ্রাসাদের সুখে নিমজ্জ
না থেকে জরা-ব্যাধি-মৃত্যু নিয়ে আত্মজিজ্ঞাসু গৌতম ঘর ছাড়লেন এবং নানা স্থানে সম্মিলিত এবং শেষে একাকী সাধনের মাধ্যমে
জ্ঞান তথা বুদ্ধত্ব লাভ করলেন। জ্ঞানার্জনের পর তার পূর্ব পরিচিত পাঁচ সন্যাসীর খোঁজে কাশী এলেন এবং তাদের বললেন, “শাস্ত্রপাঠে মানুষ জ্ঞানী হতে পারে। কঠোর সংযম ও সাধনা মানুষকে আত্মশুদ্ধি দিতে পারে। কিন্তু দিব্যজ্ঞান দিতে
পারে না। মানুষকে নিতে হবে মধ্য পন্থা বা ‘মজঝিম পন্থা’। সেখানে সাধনা আছে, নেই কঠোরতা”।
বুদ্ধ
সেখানে প্রথম আটটি নীতির কথা বললেন । যথা -
1। সৎ শ্রদ্ধা - নিজেকে অক্ষম মনে করা পাপ । নিজের ওপর বিশ্বাস রাখতে হবে ।
2। সৎ সংকল্প - আদর্শ মহৎ হবে । সংকল্প হবে অটল।
3। সৎ বাক্য - বাজে কথা না বলা এর অন্তর্গত।
4। সৎ অনুষ্ঠান - আদর্শ নিষ্ঠ ও স্থিতপ্রজ্ঞ।
5। সৎ জীবন - জীবনের সব কাজে সংহতি রক্ষা।
6। সৎ উদ্যম - আদর্শ রূপায়ণে উদ্যম।
7। সৎ চিন্তা - ক্রমাগত সৎ ভাবনা।
8। সৎ সমাধি - এমন অবস্থা যেখানে চিন্তা, কথা ও কাজে সামঞ্জস্য রক্ষিত হবে ।
বুদ্ধ নির্বাণ লাভের কথা বললেন। মানুষের দুই সত্তা। ব্যবহারিক ও পারমার্থিক সত্তা। বুদ্ধ বললেন ব্যবহারিক সত্তাকে বিনাশ ঘটালে পারমার্থিক সত্তা উৎপন্ন হবে এটি সত্য নয়। কারণ পারমার্থিক সত্তা উৎপন্ন হয় না। সেটি থাকেই। ব্যবহারিক সত্তার বিনাশে সেটি প্রকাশিত হয় মাত্র।
একেই বলে নিত্যাবস্থা। একেই বলে নির্বাণ।
1। সৎ শ্রদ্ধা - নিজেকে অক্ষম মনে করা পাপ । নিজের ওপর বিশ্বাস রাখতে হবে ।
2। সৎ সংকল্প - আদর্শ মহৎ হবে । সংকল্প হবে অটল।
3। সৎ বাক্য - বাজে কথা না বলা এর অন্তর্গত।
4। সৎ অনুষ্ঠান - আদর্শ নিষ্ঠ ও স্থিতপ্রজ্ঞ।
5। সৎ জীবন - জীবনের সব কাজে সংহতি রক্ষা।
6। সৎ উদ্যম - আদর্শ রূপায়ণে উদ্যম।
7। সৎ চিন্তা - ক্রমাগত সৎ ভাবনা।
8। সৎ সমাধি - এমন অবস্থা যেখানে চিন্তা, কথা ও কাজে সামঞ্জস্য রক্ষিত হবে ।
বুদ্ধ নির্বাণ লাভের কথা বললেন। মানুষের দুই সত্তা। ব্যবহারিক ও পারমার্থিক সত্তা। বুদ্ধ বললেন ব্যবহারিক সত্তাকে বিনাশ ঘটালে পারমার্থিক সত্তা উৎপন্ন হবে এটি সত্য নয়। কারণ পারমার্থিক সত্তা উৎপন্ন হয় না। সেটি থাকেই। ব্যবহারিক সত্তার বিনাশে সেটি প্রকাশিত হয় মাত্র।
একেই বলে নিত্যাবস্থা। একেই বলে নির্বাণ।
ব্যবহারিক সত্তার বিনাশে পারমার্থিক সত্তা উৎপন্ন হয় না, প্রকাশিত হয় মাত্র এই কথাটি একটু বুঝে নিতে হবে। আসলে পারমার্থিক সত্তাটি থাকেই। যেমন দিনের বেলা সূর্যের আলোয় তার থেকেও বড় ও শক্তিশালী নক্ষত্রেরা নজরে পড়ে না, কিন্তু দিনান্তে তারা প্রকাশিত হয়, তেমনটি। আবার ব্যবহারিক সত্তার সম্পূর্ণ বিনাশ না হলে পারমার্থিক সত্তা প্রকাশিত হবে না বুদ্ধ যে এমনটা বললেন, এটিও বিচার না করে গ্রহণ করা যাচ্ছে না। যেমন বিকাল বা সন্ধ্যাকালে চাঁদ বা নক্ষত্রেরা আবছা ভাবে ক্রমশ প্রকাশিত হতে থাকে তেমনই একটি সান্ধ্য ক্ষণ আসতে পারে যখন ব্যবহারিক ও পারমার্থিক সত্তা দুটোরই অনুভব হতে পারে।
আবার ভেবে দেখা যেতে পারে ব্যবহারিক সত্তার বিনাশ হলেই কি নিশ্চিত ভাবেই পারমার্থিক সত্তা প্রকাশিত হয় ? বুদ্ধ এ বিষয়ে কিছু বলেন নি। রাতে যদি মেঘলা আকাশ থাকে তাহলে কি তারা দেখা যাবে ? ব্যবহারিক সত্তা অস্তমিত হলে আসতে পারে সমাজ আরোপিত ভ্রান্তি। সংশয়ের কালো মেঘ। সত্য দর্শনকে মনে হতে পারে মনোবিকার।
বুদ্ধ কিছু বলেননি।
তবে একথা চরম সত্য যে ব্যবহারিক সত্তা প্রবল থাকলে পারমার্থিক সত্তাকে অনুভব করা যাবে না ।
বুদ্ধ প্রথম জন সম্ভাষণে অষ্টম সত্যের কথা বললেন। একটু ভালো করে খেয়াল করলে দেখা যাবে সে সবই আধুনিক management দর্শন এর কথা। আত্ম বিশ্বাস, নিষ্ঠা, সংকল্প, উদ্যম - এর কথা। তাহলে এমন কি বললেন যে কাশীর জনতা উদ্বেলিত হল ?
বলেননি আহামরি কিছু। কিন্তু জানা কথাই এমন সত্য উপলব্ধির মাধ্যমে বললেন, তাতে বিশ্ব প্রকৃতির এমন চেতন শক্তি প্রবাহিত হল, যারা শুনলেন তারাও সত্য দর্শনের স্বাদ পেলেন। এক প্রদীপ থেকে শত প্রদীপ জ্বলে উঠল।
পরবর্তীতে উনি অষ্টাঙ্গ মার্গের কথা বলবেন, যা লক্ষ লক্ষ মানুষ মেনে চলবেন শত শত বছর।
পারমার্থিক সত্তার প্রকাশ হলে আভ্যন্তরীন বিকাশ ঘটে এবং চরম সত্যের অনুভব হয়। বস্তূজগতের বাইরে এক বিশ্ববিস্তারিত চেতন জগতের সাথে সংযোগ ঘটে। বাহ্যিকভাবে সেই ব্যক্তিমানুষের বাক্য, দৃষ্টি, আচরণে এক এমন চৌম্বক শক্তির বিকাশ ঘটে যে সাধারন মানুষ তাতে আকৃষ্ট ও প্রভাবিত হয়। তখন সাধারন বাক্যও বেদবাক্য বলে মনে হয়। বুদ্ধের ক্ষেত্রেও তাই হয়েছিল। এই আকৃষ্ট মানুষদের বুদ্ধ চাইলেন স্বনির্ভরভাবে সত্যের পথে নিয়ে যেতে। এবার উনি বললেন অষ্টাঙ্গ মার্গের কথা। যা অনুসরণ করবে লক্ষ লক্ষ মানুষ শতশত বছর ধরে। উনি ব্যবহারিক সত্তা থেকে পারমার্থিক সত্তায় উত্তরণের পথ দেখালেন।
দ্বিতীয় জনসভায় বুদ্ধ বললেন, দুই অন্ত পরিবর্জনীয়। প্রথম হল অনর্থ সংযুক্ত কাম্য বস্তুর উপভোগ এবং দ্বিতীয়টি হল অনর্থ সংযুক্ত দেহ নির্যাতন। অর্থাৎ দেহ কেন্দ্রিক ভোগ ও দেহ নির্যাতন দুইই বর্জনীয়। তিনি মধ্যম পন্থার কথা বললেন। 'মজঝিম পন্থা'। তিনি মধ্যম পন্থার আটটি পথের কথা বললেন ।
1। সম্যক দৃষ্টি
2। সম্যক সংকল্প
3। সম্যক বাক
4। সম্যক কর্মান্ত
5। সম্যক আজীব
6। সম্যক ব্যায়াম
7। সম্যক স্মৃতি
8। সম্যক সমাধি
আমাদের চক্ষু দর্শন করে, কর্ণ শ্রবণ করে। সম্যক অনুধাবন করলে আমরা দেখব প্রকৃতপক্ষে চক্ষু বা
কর্ণ দর্শন বা শ্রবণ করে না, এ সমুদয় কর্ম করে দেহের কেন্দ্রগত কোন শক্তি যা সাধারণত আমরা brain work বলে ধরে নিই, আসলে আমাদের মধ্যে প্রবাহিত এক
চেতন শক্তি, যা কিনা বিশ্বময় প্রবাহিত চেতন জগতের এক অংশস্বরূপ। অচেতন বা মনোবিকারগ্রস্থ অবস্থায় চক্ষু দেখলেও আমরা
দেখি না, কর্ণ শ্রবণ করলেও আমরা শুনি না।
জীবের মধ্যে প্রবাহিত এই চেতন শক্তিকে আমরা আত্মা বলে ধরে নিতে পারি। আত্মার সহিত সংযোগ না থাকলে চক্ষু দেখে না, কর্ণও শ্রবণ করে না। চক্ষুর দৃষ্টিশক্তি বা কর্ণের শ্রবণশক্তি জীবের চক্ষু বা কর্ণে নেই, তা জীবের আত্ম চৈতন্যে অধিষ্টিত।
চক্ষু -কর্ণাদি কর্ম জীবের আত্ম চৈতন্য দ্বারা উপলব্ধ হলেও মানুষ তার স্ব-ইচ্ছায় নিজস্ব বিচার বুদ্ধি দ্বারা এদের নিয়ন্ত্রিত করতে পারে। চাইলে কোন ব্যাক্তি কয়েক ঘন্টা চোখ বন্ধ করে রাখতে পারে। শ্বাস প্রশ্বাস রূপ কর্ম জীবের বুদ্ধি দ্বারা নিয়ন্ত্রিত নয়। চাইলে কেউ দশ মিনিট শ্বাস না নিয়ে থাকতে পারে না। ইচ্ছা দ্বারা পঞ্চ ইন্দ্রিয়াদি কর্ম করতে পারলেও বাহ্যিক বস্তুগত উপকরণ ভিন্ন ইচ্ছামাত্র শ্বাস -প্রশ্বাস বন্ধ করতে পারে না। শিশু জন্ম নেওয়া ইস্তক এই কর্ম চলতে থাকে। একটু মনন করলেই আমরা বুঝতে পারব যে এজাতীয় কর্ম বিশ্ব-চেতন শক্তি দ্বারা নিয়ন্ত্রিত । এই শক্তিকে আমরা পরমাত্মা বলে মেনে নিতে পার।
কেনোপনিষদ এই পরমাত্মাকে 'চক্ষুষচক্ষুঃ' বলে অভিহিত করেছে। পরমাত্মা হল চক্ষুর চক্ষু। আত্মার আত্মা। সমগ্র জীবের প্রাণশক্তি তিনিই।
অশ্বিনীকুমার চক্রবর্তী মহাশয়ের 'শ্রী শ্রী চন্ডীতত্ত্ব' পাঠে জানতে পারি যে শুভকর্মের ফল পরমাত্মা সকলকে ভাগ করে দেয় এবং তারই জ্যোতিতে সমস্ত বস্তু জ্যোতির্ময় হয়ে দীপ্ত । তাই পরমাত্মার দুই নাম হল 'বামনী ' ও 'ভামনী' । উপাসকরা পরমাত্মার উপাসনা করতে করতে এই দুই গুণে গুণবান হয়ে যান ।
বুদ্ধ বা সাংখ্য প্রণেতা কপিল ঈশ্বর নিয়ে নীরব থাকলেও আত্মদর্শনের মাধ্যমে পরমাত্মারই উপাসনার পথ দেখিয়েছেন ।
বুদ্ধের অষ্টাঙ্গ মার্গের শেষটিতে যে সমাধির কথা আছে তার মাধ্যমেই আমরা মন থেকে আত্মা হয়ে পরমাত্মা অবধি পৌছে যেতে পারি ।
জীবের মধ্যে প্রবাহিত এই চেতন শক্তিকে আমরা আত্মা বলে ধরে নিতে পারি। আত্মার সহিত সংযোগ না থাকলে চক্ষু দেখে না, কর্ণও শ্রবণ করে না। চক্ষুর দৃষ্টিশক্তি বা কর্ণের শ্রবণশক্তি জীবের চক্ষু বা কর্ণে নেই, তা জীবের আত্ম চৈতন্যে অধিষ্টিত।
চক্ষু -কর্ণাদি কর্ম জীবের আত্ম চৈতন্য দ্বারা উপলব্ধ হলেও মানুষ তার স্ব-ইচ্ছায় নিজস্ব বিচার বুদ্ধি দ্বারা এদের নিয়ন্ত্রিত করতে পারে। চাইলে কোন ব্যাক্তি কয়েক ঘন্টা চোখ বন্ধ করে রাখতে পারে। শ্বাস প্রশ্বাস রূপ কর্ম জীবের বুদ্ধি দ্বারা নিয়ন্ত্রিত নয়। চাইলে কেউ দশ মিনিট শ্বাস না নিয়ে থাকতে পারে না। ইচ্ছা দ্বারা পঞ্চ ইন্দ্রিয়াদি কর্ম করতে পারলেও বাহ্যিক বস্তুগত উপকরণ ভিন্ন ইচ্ছামাত্র শ্বাস -প্রশ্বাস বন্ধ করতে পারে না। শিশু জন্ম নেওয়া ইস্তক এই কর্ম চলতে থাকে। একটু মনন করলেই আমরা বুঝতে পারব যে এজাতীয় কর্ম বিশ্ব-চেতন শক্তি দ্বারা নিয়ন্ত্রিত । এই শক্তিকে আমরা পরমাত্মা বলে মেনে নিতে পার।
কেনোপনিষদ এই পরমাত্মাকে 'চক্ষুষচক্ষুঃ' বলে অভিহিত করেছে। পরমাত্মা হল চক্ষুর চক্ষু। আত্মার আত্মা। সমগ্র জীবের প্রাণশক্তি তিনিই।
অশ্বিনীকুমার চক্রবর্তী মহাশয়ের 'শ্রী শ্রী চন্ডীতত্ত্ব' পাঠে জানতে পারি যে শুভকর্মের ফল পরমাত্মা সকলকে ভাগ করে দেয় এবং তারই জ্যোতিতে সমস্ত বস্তু জ্যোতির্ময় হয়ে দীপ্ত । তাই পরমাত্মার দুই নাম হল 'বামনী ' ও 'ভামনী' । উপাসকরা পরমাত্মার উপাসনা করতে করতে এই দুই গুণে গুণবান হয়ে যান ।
বুদ্ধ বা সাংখ্য প্রণেতা কপিল ঈশ্বর নিয়ে নীরব থাকলেও আত্মদর্শনের মাধ্যমে পরমাত্মারই উপাসনার পথ দেখিয়েছেন ।
বুদ্ধের অষ্টাঙ্গ মার্গের শেষটিতে যে সমাধির কথা আছে তার মাধ্যমেই আমরা মন থেকে আত্মা হয়ে পরমাত্মা অবধি পৌছে যেতে পারি ।
'সর্বং
অনিত্যম্ সর্বং অনাত্মম্ সর্বং ক্ষণিকম্'
সকলেই অনাত্মীয়, সকলই অনিত্য, আর সব কিছুই ক্ষণিকের ।
অরূণকান্তি সাহা মহাশয় তার 'অমিতাভ বুদ্ধ ' নামক গ্রন্থে বুদ্ধের অষ্টাঙ্গ মার্গ নিয়ে সংক্ষিপ্ত আলোচনা করেছেন । বুদ্ধ কাশী থেকে মগধের রাজা বিম্বিসারের আমন্ত্রণে রাজগৃহ তথা বর্তমান রাজগীরে এলেন । বুদ্ধত্ব লাভের পূর্বে এক বিশেষ সাধনার কাল তিনি এখানে অতিবাহিত করেছেন । এখানেই বুদ্ধ তার ধর্ম প্রচারের দ্বিতীয় সভাটি করলেন । তিনি বললেন দুই অন্ত বর্জনীয় । অনর্থক ভোগ ও অনর্থক দেহ নির্যাতন । তিনি 'মজঝিম পন্থা ' বা মধ্যবর্তী পথের কথা জানালেন । তিনি বললেন যে -
' এই পথে দৃষ্টিলাভ হয়, জ্ঞান লাভ হয়, প্রাণ প্রশান্ত হয়, অভিজ্ঞ, সম্বোধ ও নির্বাণ লাভ করা যায় '।
এরপর তিনি মধ্যম পথের অষ্টাঙ্গ মার্গের কথা খানিক বিশদে জানালেন ।
1। সম্যক দৃষ্টি - দুঃখ কি, দুঃখের উৎপত্তি কি প্রকারে হয়, দুঃখের নিরোধ কি ও তা কি প্রকারে হয়, এই সমুদয় জ্ঞানের নাম সম্যক দৃষ্টি ।
2। সম্যক সংকল্প - নৈষ্কাম্য, অবিশ্বাস ও অহিংসা; এই সমুদয় বিষয়ে সংকল্পের নাম সম্যক সংকল্প ।
3। সম্যক বাক - অসত্য বাক্য, পরুষ ও অসার প্রলাপ বাক্য হতে বিরত হওয়া ।
4। সম্যক কর্মান্ত - প্রাণবিনাশ না করা, অদেয় বস্তু গ্রহণ না করা এবং ভোগ থেকে বিরত থাকা।
5। সম্যক আজীব - অন্যায় উপায় ত্যাগ করে ন্যায় উপায়ে জীবিকার্জন।
6। সম্যক ব্যায়াম - - ব্যায়াম মানে চেষ্টা বা শ্রম। এমন কর্ম করা যাতে প্রাণে
ক। অকুশল ভাবের উদয় না হয়
খ। পূর্বে উদিত অকুশল ভাবের বিণাশ হয়
গ। কুশল ভাবের উদয় হয় ও
ঘ। উদিত কুশল ভাব স্থায়ী হয়।
7। সম্যক স্মৃতি - সর্ব বিষয়ে স্মৃতি কে জাগ্রত রাখা । যথা -
ক। দেহমূলক সমুদয় ঘটনা।
খ। সুখদুঃখ মূলক সমুদয় অবস্থা।
গ। চিত্ত বিষয়ক সমুদয় রাগ, দ্বেষ ও মোহ অবস্থা। ইত্যাদি
8। সম্যক সমাধি - এখানেই বুদ্ধ চার প্রকার ধ্যানের কথা বললেন।
ক। 1ম। কামনা বাসনা, অকুশল ভাবনা ত্যাগ করে প্রীতিমুখপূর্ণ 1ম ধ্যান।
খ। 2য়। বিতর্ক বিচার অতিক্রম করে প্রীতিমুখপূর্ণ 2য় ধ্যান।
গ। 3য়। প্রীতির অতীত হয়ে উপেক্ষা ভাব লাভ করে স্মৃতিমান সম্প্রজ্ঞ হয়ে 3য় ধ্যান। এবং
ঘ। 4র্থ। - সুখের অতীত হয়ে ও দুঃখের অতীত হয়ে (সৌমনস্য ও দৌর্মনস্য ) পরিশুদ্ধ চতুর্থ ধ্যান ।
এই চার প্রকার ধ্যানের নাম সম্যক সমাধি ।
যারা বিপাসনা সাধন পদ্ধতি জানেন তারা আন্দাজ করতে পারবেন।
সকলেই অনাত্মীয়, সকলই অনিত্য, আর সব কিছুই ক্ষণিকের ।
অরূণকান্তি সাহা মহাশয় তার 'অমিতাভ বুদ্ধ ' নামক গ্রন্থে বুদ্ধের অষ্টাঙ্গ মার্গ নিয়ে সংক্ষিপ্ত আলোচনা করেছেন । বুদ্ধ কাশী থেকে মগধের রাজা বিম্বিসারের আমন্ত্রণে রাজগৃহ তথা বর্তমান রাজগীরে এলেন । বুদ্ধত্ব লাভের পূর্বে এক বিশেষ সাধনার কাল তিনি এখানে অতিবাহিত করেছেন । এখানেই বুদ্ধ তার ধর্ম প্রচারের দ্বিতীয় সভাটি করলেন । তিনি বললেন দুই অন্ত বর্জনীয় । অনর্থক ভোগ ও অনর্থক দেহ নির্যাতন । তিনি 'মজঝিম পন্থা ' বা মধ্যবর্তী পথের কথা জানালেন । তিনি বললেন যে -
' এই পথে দৃষ্টিলাভ হয়, জ্ঞান লাভ হয়, প্রাণ প্রশান্ত হয়, অভিজ্ঞ, সম্বোধ ও নির্বাণ লাভ করা যায় '।
এরপর তিনি মধ্যম পথের অষ্টাঙ্গ মার্গের কথা খানিক বিশদে জানালেন ।
1। সম্যক দৃষ্টি - দুঃখ কি, দুঃখের উৎপত্তি কি প্রকারে হয়, দুঃখের নিরোধ কি ও তা কি প্রকারে হয়, এই সমুদয় জ্ঞানের নাম সম্যক দৃষ্টি ।
2। সম্যক সংকল্প - নৈষ্কাম্য, অবিশ্বাস ও অহিংসা; এই সমুদয় বিষয়ে সংকল্পের নাম সম্যক সংকল্প ।
3। সম্যক বাক - অসত্য বাক্য, পরুষ ও অসার প্রলাপ বাক্য হতে বিরত হওয়া ।
4। সম্যক কর্মান্ত - প্রাণবিনাশ না করা, অদেয় বস্তু গ্রহণ না করা এবং ভোগ থেকে বিরত থাকা।
5। সম্যক আজীব - অন্যায় উপায় ত্যাগ করে ন্যায় উপায়ে জীবিকার্জন।
6। সম্যক ব্যায়াম - - ব্যায়াম মানে চেষ্টা বা শ্রম। এমন কর্ম করা যাতে প্রাণে
ক। অকুশল ভাবের উদয় না হয়
খ। পূর্বে উদিত অকুশল ভাবের বিণাশ হয়
গ। কুশল ভাবের উদয় হয় ও
ঘ। উদিত কুশল ভাব স্থায়ী হয়।
7। সম্যক স্মৃতি - সর্ব বিষয়ে স্মৃতি কে জাগ্রত রাখা । যথা -
ক। দেহমূলক সমুদয় ঘটনা।
খ। সুখদুঃখ মূলক সমুদয় অবস্থা।
গ। চিত্ত বিষয়ক সমুদয় রাগ, দ্বেষ ও মোহ অবস্থা। ইত্যাদি
8। সম্যক সমাধি - এখানেই বুদ্ধ চার প্রকার ধ্যানের কথা বললেন।
ক। 1ম। কামনা বাসনা, অকুশল ভাবনা ত্যাগ করে প্রীতিমুখপূর্ণ 1ম ধ্যান।
খ। 2য়। বিতর্ক বিচার অতিক্রম করে প্রীতিমুখপূর্ণ 2য় ধ্যান।
গ। 3য়। প্রীতির অতীত হয়ে উপেক্ষা ভাব লাভ করে স্মৃতিমান সম্প্রজ্ঞ হয়ে 3য় ধ্যান। এবং
ঘ। 4র্থ। - সুখের অতীত হয়ে ও দুঃখের অতীত হয়ে (সৌমনস্য ও দৌর্মনস্য ) পরিশুদ্ধ চতুর্থ ধ্যান ।
এই চার প্রকার ধ্যানের নাম সম্যক সমাধি ।
যারা বিপাসনা সাধন পদ্ধতি জানেন তারা আন্দাজ করতে পারবেন।
বুদ্ধ বললেন -
সব্ব দানং ধম্ম দানং জিনাতি
সব্বং রসং ধম্মরসো জিনাতি
সব্বং রতিং ধম্মরতি জিনাতি
তণহক খয়ো সব্বদুকখং জিনাতি।
সকল দানের মধ্যে ধর্ম দান বিজয়ী। কারন ধর্ম দান হল সর্ব শ্রেষ্ঠ। সেরূপ সকল রসের মধ্যে ধর্ম রস, সকল রতির মধ্যে ধর্মরতি শ্রেষ্ঠ। আর যার তৃষ্ণা ক্ষয় হয়েছে সে সর্ব দুঃখকে পরাভূত করেছে।
বুদ্ধ আরো জানালেন -
আক্কোধেন জিনে কোধং আসাধুং সাধু না জিনে
জিনে কদারিয়ং দানেন সচ্চে নালিক বাদিনং।
অর্থাত্ ক্রোধকে অক্রোধ দ্বারা, অসাধুকে সাধুতার দ্বারা এবং মিথ্যাবাদীকে সত্য দ্বারা জয় করতে হবে।
যে সব হঠযোগী জাতীয় সাধুরা নিদারূণ শারীরিক নির্যাতনের মাধ্যমে সাধন-ভজন করেন তাদের বুদ্ধ জানালেন, সংসারে দুঃখের অভাব নেই। অকারণ কষ্ট বাড়িয়ে লাভ কি ?
বললেন -
---অসোকং বিরজং খেমং এতং মঙ্গল মুত্তমম --
লাভ, ক্ষতি, নিন্দা, প্রশংসা - এসবে যার চিত্ত কম্পিত হয় না, যার মনে মলিনতা নেই, কোন ভয় নেই, সে মঙ্গলের সন্ধান পেয়েছে ।
আরও বললেন, যে আসক্ত মানুষদের মধ্যে আমরা অনাসক্ত হয়ে জীবন-যাপন করব ও বিচরণ করব।
উপাসক বা তপস্বীরা কেমন হবেন সে বিষয়ে তিনি জানালেন -
' তপস্বীরা সাধারণভাবে সন্তুষ্ট-চিত্ত হবেন। অল্পেই তার ভরণ হবে। নিরুদবেগ, অল্পভোজী, শান্ত-ইন্দ্রিয় হবেন। সদবিবেচক, অপ্রগল্ভ এবং সংসারে অনাসক্ত হবেন।
যারা তার শিষ্যত্ব গ্রহণ কলেন তাদের মধ্যে যারা তপস্বী হলেন তাদের তিনি 'ভিক্ষুক' সম্বোধন করলেন। তাদের বললেন -
' চরথ ভিক্ষবে চাবিকং বহুজনহিতায় বহুজনসুখায় লোকানুকম্পায় ----
ভিক্ষুকদের বহুজনের হিতার্থে, বহুজনের সুখের ও কল্যানের জন্য দিকেদিকে যেতে বললেন।
জানালেন, ' মা একেন দ্বে অগমিত্থ' অর্থাত্ দুজন একপথে যেও না।
এবং ঘোষণা করলেন যে,
' আপনারা কুটিল কুপথ ছেড়ে সরল সত্পথে চলতে অভ্যাস করুন। আপনাদের নিজেদের মুক্তি নিজেদের হাতে। অন্যকে হিংসা করা দুর্বলতা। আমি বলছি মুক্তি বা নির্বাণ আপনাদের করতলগত।'
মগধে ধর্ম জোয়ার এসে গেল।
সব্ব দানং ধম্ম দানং জিনাতি
সব্বং রসং ধম্মরসো জিনাতি
সব্বং রতিং ধম্মরতি জিনাতি
তণহক খয়ো সব্বদুকখং জিনাতি।
সকল দানের মধ্যে ধর্ম দান বিজয়ী। কারন ধর্ম দান হল সর্ব শ্রেষ্ঠ। সেরূপ সকল রসের মধ্যে ধর্ম রস, সকল রতির মধ্যে ধর্মরতি শ্রেষ্ঠ। আর যার তৃষ্ণা ক্ষয় হয়েছে সে সর্ব দুঃখকে পরাভূত করেছে।
বুদ্ধ আরো জানালেন -
আক্কোধেন জিনে কোধং আসাধুং সাধু না জিনে
জিনে কদারিয়ং দানেন সচ্চে নালিক বাদিনং।
অর্থাত্ ক্রোধকে অক্রোধ দ্বারা, অসাধুকে সাধুতার দ্বারা এবং মিথ্যাবাদীকে সত্য দ্বারা জয় করতে হবে।
যে সব হঠযোগী জাতীয় সাধুরা নিদারূণ শারীরিক নির্যাতনের মাধ্যমে সাধন-ভজন করেন তাদের বুদ্ধ জানালেন, সংসারে দুঃখের অভাব নেই। অকারণ কষ্ট বাড়িয়ে লাভ কি ?
বললেন -
---অসোকং বিরজং খেমং এতং মঙ্গল মুত্তমম --
লাভ, ক্ষতি, নিন্দা, প্রশংসা - এসবে যার চিত্ত কম্পিত হয় না, যার মনে মলিনতা নেই, কোন ভয় নেই, সে মঙ্গলের সন্ধান পেয়েছে ।
আরও বললেন, যে আসক্ত মানুষদের মধ্যে আমরা অনাসক্ত হয়ে জীবন-যাপন করব ও বিচরণ করব।
উপাসক বা তপস্বীরা কেমন হবেন সে বিষয়ে তিনি জানালেন -
' তপস্বীরা সাধারণভাবে সন্তুষ্ট-চিত্ত হবেন। অল্পেই তার ভরণ হবে। নিরুদবেগ, অল্পভোজী, শান্ত-ইন্দ্রিয় হবেন। সদবিবেচক, অপ্রগল্ভ এবং সংসারে অনাসক্ত হবেন।
যারা তার শিষ্যত্ব গ্রহণ কলেন তাদের মধ্যে যারা তপস্বী হলেন তাদের তিনি 'ভিক্ষুক' সম্বোধন করলেন। তাদের বললেন -
' চরথ ভিক্ষবে চাবিকং বহুজনহিতায় বহুজনসুখায় লোকানুকম্পায় ----
ভিক্ষুকদের বহুজনের হিতার্থে, বহুজনের সুখের ও কল্যানের জন্য দিকেদিকে যেতে বললেন।
জানালেন, ' মা একেন দ্বে অগমিত্থ' অর্থাত্ দুজন একপথে যেও না।
এবং ঘোষণা করলেন যে,
' আপনারা কুটিল কুপথ ছেড়ে সরল সত্পথে চলতে অভ্যাস করুন। আপনাদের নিজেদের মুক্তি নিজেদের হাতে। অন্যকে হিংসা করা দুর্বলতা। আমি বলছি মুক্তি বা নির্বাণ আপনাদের করতলগত।'
মগধে ধর্ম জোয়ার এসে গেল।
' বিসংখার গতং চিত্তং তণহানং খরস
অজঝগা '
- সংস্কারমুক্ত চিত্তে আজ তৃষ্ণা ক্ষয় হয়ে গেছে ।
এবার বুদ্ধ এলেন কপিলাবস্তূ, তার জন্মভূমি। সেখানে ধর্মসভায় বললেন, এ বিশ্ব সৃষ্টি নিয়ে প্রশ্ন করা নিরর্থক। কারণ এ প্রশ্নের উত্তর আজ পর্যন্ত কোন মানুষ দিতে পারেনি। যা জানার প্রয়োজন তা হল কামনাবাসনা থেকেই মানুষের জন্ম, আর এখানেই বন্ধনের উত্পত্তি।
মানুষের জন্ম হলে জরা-ব্যাধি এসব আসবেই। মানুষ ক্রমশই এসবের দাস হয়ে পড়ে। তারপর দীর্ঘ জীবন চলে বন্ধন, আকর্ষণ আর আধিব্যাধির সঙ্গে প্রতিনিয়ত সংগ্রাম। এই সংগ্রামের অপর নাম জীবন। এরপর আসে মৃত্যু। তবে মৃত্যুই শেষ নয়। মৃত্যুর পরে আবার জন্ম। এভাবেই জন্মচক্র বা জন্ম-প্রবাহ প্রবাহিত হতে থাকে।
মানুষ তার নিজের বন্ধন প্রতিনিয়ত সৃষ্টি করছে। এই বন্ধন ছেদের অস্ত্রও আছে তার নিজের কাছে। এটাই বিচিত্র। এটাই কর্মচক্র। মানুষ তার কর্মের ফলভোগ নিজেই করে। যদি সে তার জন্মচক্রে বা জন্মপ্রবাহে আবদ্ধ থাকে তবে তার মুক্তি হতে পারে না।
বুদ্ধ বলে চললেন, এই মুক্তি পেতে গেলে মানুষকে আজীবন কিছু সাধারণ শর্ত মেনে চলতে হবে। যেমন, সত্য কথা বলা, সত্যপথে চলা, মানুষকে সেবা করা, কুসংস্কার নষ্ট করা, কামনা-বাসনা নির্মূল করা, হৃদয় নির্মল করা। তাহলে হৃদয়ে জ্ঞানের আলো জ্বলবে। এরপর দরকার সাধনা ও ধ্যান। তবে এই জন্মপ্রবাহ রুদ্ধ হবে। মানুষ মুক্তি পাবে, নির্বাণ লাভ ঘটবে।
বিম্বিসারের মৃত্যুর পরে তার পুত্র অজাতশত্রু রাজা হয়েছেন। তিনি প্রাথমিক বিদ্বেষ কাটিয়ে বুদ্ধের শরণাগত হয়েছেন। মগধে বুদ্ধ আবার ধর্মসভা করলেন। বললেন,
১। মিত্রের প্রতি যে ভাব সেই ভাবের নাম 'মৈত্রী'।
২। প্রাণের যে অবস্থায় অপরের দুঃখে দুঃখ উপস্থিত হয়, অপরের দুঃখ দূর করার ইচ্ছা হয় সেই অবস্থার নাম 'করুনা'।
৩। প্রাণের যে অবস্থায় অপরের সুখে সুখ উপস্থিত হয় সেই অবস্থাকে 'মদিতা' বলে।,
৪। এই তিন তিন অবস্থা অতিক্রম করে যখন মানুষ দুঃখে অনুদবিগ্নমনা এবং সুখে বিগতস্পৃহ হয়, সেই শান্ত অবস্থাকে বলে 'উপেক্ষা'।
বুদ্ধের প্রবর্তিত ধর্মে মৈত্রী ভাবনা, করুনা ভাবনা, মুদিত ভাবনা ও উপেক্ষা ভাবনা এক বিশেষ সাধনার ক্রম।
এরপর বুদ্ধ সম্যক সমাধি ও ব্রহ্মবিহার সম্পর্কে আলোচণা করবেন।
- সংস্কারমুক্ত চিত্তে আজ তৃষ্ণা ক্ষয় হয়ে গেছে ।
এবার বুদ্ধ এলেন কপিলাবস্তূ, তার জন্মভূমি। সেখানে ধর্মসভায় বললেন, এ বিশ্ব সৃষ্টি নিয়ে প্রশ্ন করা নিরর্থক। কারণ এ প্রশ্নের উত্তর আজ পর্যন্ত কোন মানুষ দিতে পারেনি। যা জানার প্রয়োজন তা হল কামনাবাসনা থেকেই মানুষের জন্ম, আর এখানেই বন্ধনের উত্পত্তি।
মানুষের জন্ম হলে জরা-ব্যাধি এসব আসবেই। মানুষ ক্রমশই এসবের দাস হয়ে পড়ে। তারপর দীর্ঘ জীবন চলে বন্ধন, আকর্ষণ আর আধিব্যাধির সঙ্গে প্রতিনিয়ত সংগ্রাম। এই সংগ্রামের অপর নাম জীবন। এরপর আসে মৃত্যু। তবে মৃত্যুই শেষ নয়। মৃত্যুর পরে আবার জন্ম। এভাবেই জন্মচক্র বা জন্ম-প্রবাহ প্রবাহিত হতে থাকে।
মানুষ তার নিজের বন্ধন প্রতিনিয়ত সৃষ্টি করছে। এই বন্ধন ছেদের অস্ত্রও আছে তার নিজের কাছে। এটাই বিচিত্র। এটাই কর্মচক্র। মানুষ তার কর্মের ফলভোগ নিজেই করে। যদি সে তার জন্মচক্রে বা জন্মপ্রবাহে আবদ্ধ থাকে তবে তার মুক্তি হতে পারে না।
বুদ্ধ বলে চললেন, এই মুক্তি পেতে গেলে মানুষকে আজীবন কিছু সাধারণ শর্ত মেনে চলতে হবে। যেমন, সত্য কথা বলা, সত্যপথে চলা, মানুষকে সেবা করা, কুসংস্কার নষ্ট করা, কামনা-বাসনা নির্মূল করা, হৃদয় নির্মল করা। তাহলে হৃদয়ে জ্ঞানের আলো জ্বলবে। এরপর দরকার সাধনা ও ধ্যান। তবে এই জন্মপ্রবাহ রুদ্ধ হবে। মানুষ মুক্তি পাবে, নির্বাণ লাভ ঘটবে।
বিম্বিসারের মৃত্যুর পরে তার পুত্র অজাতশত্রু রাজা হয়েছেন। তিনি প্রাথমিক বিদ্বেষ কাটিয়ে বুদ্ধের শরণাগত হয়েছেন। মগধে বুদ্ধ আবার ধর্মসভা করলেন। বললেন,
১। মিত্রের প্রতি যে ভাব সেই ভাবের নাম 'মৈত্রী'।
২। প্রাণের যে অবস্থায় অপরের দুঃখে দুঃখ উপস্থিত হয়, অপরের দুঃখ দূর করার ইচ্ছা হয় সেই অবস্থার নাম 'করুনা'।
৩। প্রাণের যে অবস্থায় অপরের সুখে সুখ উপস্থিত হয় সেই অবস্থাকে 'মদিতা' বলে।,
৪। এই তিন তিন অবস্থা অতিক্রম করে যখন মানুষ দুঃখে অনুদবিগ্নমনা এবং সুখে বিগতস্পৃহ হয়, সেই শান্ত অবস্থাকে বলে 'উপেক্ষা'।
বুদ্ধের প্রবর্তিত ধর্মে মৈত্রী ভাবনা, করুনা ভাবনা, মুদিত ভাবনা ও উপেক্ষা ভাবনা এক বিশেষ সাধনার ক্রম।
এরপর বুদ্ধ সম্যক সমাধি ও ব্রহ্মবিহার সম্পর্কে আলোচণা করবেন।
নহি বেরেন বেরাণি সম্মনতীধ কুদাচনম
বুদ্ধ জানালেন পৃথিবীতে শত্রুতার দ্বারা শত্রুতাকে জয় করা যায় না । যায় মিত্রতা দ্বারা ।
তিনি বললেন, মিথ্যা ভক্তি শিকল স্বরূপ । অন্যের প্রতি রাগ প্রদর্শন করবে না । অহিংসা হল মূল মন্ত্র । মনুষ্য জীবনে শ্রেষ্ঠ সম্পদ হল বৈরাগ্য । সকলের সাথে সুর মিলিয়ে ধর্ম চাইলেই হবে না । তার জন্য চাই চেষ্টা ও ত্যাগ স্বীকার ।
বুদ্ধ এও বললেন, পরকে পরাজিত করা অপেক্ষা নিজেকে জয় করাই শ্রেয়।
বললেন, 'অন্ত দীপা বিহরথ অন্তকরণ ....'
- তোমরা নিজেরাই নিজেদের দীপ বা আশ্রয় স্থল। নিজেরাই নিজেদের শরণ হয়ে বিহার করো ।
' বয়ধম্মা সঙ্ঘরা অপ্পমদেন সম্পাদেথ '
- সকল বস্তুই বিনাশশীল । প্রমাঘদহীন হয়ে বিহার করো ।
বুদ্ধ গৃহী দের জন্য 5 টি নিয়ম পালন করার কথা জানালেন -
1। অহিংসা
2। সত্য
3। অস্তেয় - না বলে অন্যের জিনিস গ্রহণ করা ।
4। পবিত্রতা ও
5। সংযম ।
সম্যক সমাধি ও ব্রহ্ম বিহার দুই ই সাধন পদ্ধতি । প্রথমটিতে চিত্ত বিমুক্তি হয়ে শূন্যতা লাভ হয় । ব্রহ্ম বিহারে চিত্ত প্রসারিত হয়ে অসীমে স্থিত হয় । দুই পথেই নির্বাণ লাভ হয় ।
বুদ্ধ জানালেন পৃথিবীতে শত্রুতার দ্বারা শত্রুতাকে জয় করা যায় না । যায় মিত্রতা দ্বারা ।
তিনি বললেন, মিথ্যা ভক্তি শিকল স্বরূপ । অন্যের প্রতি রাগ প্রদর্শন করবে না । অহিংসা হল মূল মন্ত্র । মনুষ্য জীবনে শ্রেষ্ঠ সম্পদ হল বৈরাগ্য । সকলের সাথে সুর মিলিয়ে ধর্ম চাইলেই হবে না । তার জন্য চাই চেষ্টা ও ত্যাগ স্বীকার ।
বুদ্ধ এও বললেন, পরকে পরাজিত করা অপেক্ষা নিজেকে জয় করাই শ্রেয়।
বললেন, 'অন্ত দীপা বিহরথ অন্তকরণ ....'
- তোমরা নিজেরাই নিজেদের দীপ বা আশ্রয় স্থল। নিজেরাই নিজেদের শরণ হয়ে বিহার করো ।
' বয়ধম্মা সঙ্ঘরা অপ্পমদেন সম্পাদেথ '
- সকল বস্তুই বিনাশশীল । প্রমাঘদহীন হয়ে বিহার করো ।
বুদ্ধ গৃহী দের জন্য 5 টি নিয়ম পালন করার কথা জানালেন -
1। অহিংসা
2। সত্য
3। অস্তেয় - না বলে অন্যের জিনিস গ্রহণ করা ।
4। পবিত্রতা ও
5। সংযম ।
সম্যক সমাধি ও ব্রহ্ম বিহার দুই ই সাধন পদ্ধতি । প্রথমটিতে চিত্ত বিমুক্তি হয়ে শূন্যতা লাভ হয় । ব্রহ্ম বিহারে চিত্ত প্রসারিত হয়ে অসীমে স্থিত হয় । দুই পথেই নির্বাণ লাভ হয় ।
হিন্দু পুরাণ ও নানা বৌদ্ধ
শাস্ত্রে বুদ্ধ বিষয়ক নানা তথ্য আছে । বর্তমানে গৌতম বুদ্ধের জন্ম 480 BC ধরা হলেও শক-জিছু-রোকু নামক জাপানি গ্রন্থ মতে উনি 1027 BC তে এবং এক চীনা গ্রন্থ মতে উনি 850 BC তে জন্ম গ্রহণ করেন ।
'বোধ' অর্থ জ্ঞান । যার বাহ্যিক বোধ জন্মায় তিনি হন বুদ্ধিমান । বোধ যদি আভ্যন্তরীন জ্ঞানের জন্ম দেয় তিনি হন বোধিসত্ত্ব । ইনিই চুড়ান্ত বোধ লাভ করলে হন বুদ্ধ ।
বৌদ্ধ শাস্ত্র মতে অনেক বুদ্ধ জন্মেছেন । ক্রুকছন্দ বুদ্ধ 3901 BC, কনকমুনি বুদ্ধ 2099 BC, কশ্যপ বুদ্ধ 1014 BC তে জন্মেছিলেন। গৌতম বুদ্ধের পরেও বুদ্ধ জন্মাবেন ।
( ব্রহ্ম বিহার ও সমাধি প্রসঙ্গে বলা যেতে পারে, যোগ শাস্ত্রে ধরা হয় আত্মা বা ব্রহ্ম প্রাণ ও অপান বায়ু দ্বারা জীবদেহে প্রাণের সঞ্চার করেন । যদিও প্রাণ, অপান,উদান,ব্যান ইত্যাদি 5 প্রকার এবং আরো সূক্ষ্ম ভাবে মোট 49 প্রকার বায়ুর ভাগ আছে, তবুও এককথায় বলা যায় সবগুলোই মূল প্রাণ বায়ুরই অংশ। এর দ্বারাই জীবের শ্বাস প্রশ্বাস চলছে । যে শ্বাস প্রশ্বাস বাইরে গতিশীল তাকে বহিঃপ্রাণায়াম এবং যা শরীরের ভেতরে চলে তাকে অন্তঃপ্রাণায়াম বলে । বেদে দু প্রকার প্রাণের কথা আছে । গৌণপ্রাণ ও মুখ্যপ্রাণ । শ্বাস প্রশ্বাস কে গৌণপ্রাণ এবং আত্মা বা চৈতন্যকে মুখ্যপ্রাণ বলে ।
ছান্দোগ্য উপনিষদে প্রাণকে ব্রহ্ম বলে উপাসনার কথা আছে । এক্ষেত্রে মুখ্য ও গৌণ দুই প্রাণই ব্রহ্ম ।
আবার কেনোপনিষদ বলছে 'স উ প্রাণস্য প্রাণ', অর্থাৎ ব্রহ্ম প্রাণের প্রাণ। শ্বাস প্রশ্বাস ক্রিয়াকে প্রাণন ক্রিয়া বলে । এই ক্রিয়া আত্মা কর্তৃক নিয়ন্ত্রিত । আত্মা আবার মূল শক্তি পরমাত্মা দ্বারা নিয়ন্ত্রিত । এই আত্মা তথা পরমাত্মা তথা ব্রহ্ম তথা বিশ্ব-চেতন শক্তিকে অনুভব করাই ব্রহ্ম বিহার সাধনার অন্তর্গত বিষয় ।
'বোধ' অর্থ জ্ঞান । যার বাহ্যিক বোধ জন্মায় তিনি হন বুদ্ধিমান । বোধ যদি আভ্যন্তরীন জ্ঞানের জন্ম দেয় তিনি হন বোধিসত্ত্ব । ইনিই চুড়ান্ত বোধ লাভ করলে হন বুদ্ধ ।
বৌদ্ধ শাস্ত্র মতে অনেক বুদ্ধ জন্মেছেন । ক্রুকছন্দ বুদ্ধ 3901 BC, কনকমুনি বুদ্ধ 2099 BC, কশ্যপ বুদ্ধ 1014 BC তে জন্মেছিলেন। গৌতম বুদ্ধের পরেও বুদ্ধ জন্মাবেন ।
( ব্রহ্ম বিহার ও সমাধি প্রসঙ্গে বলা যেতে পারে, যোগ শাস্ত্রে ধরা হয় আত্মা বা ব্রহ্ম প্রাণ ও অপান বায়ু দ্বারা জীবদেহে প্রাণের সঞ্চার করেন । যদিও প্রাণ, অপান,উদান,ব্যান ইত্যাদি 5 প্রকার এবং আরো সূক্ষ্ম ভাবে মোট 49 প্রকার বায়ুর ভাগ আছে, তবুও এককথায় বলা যায় সবগুলোই মূল প্রাণ বায়ুরই অংশ। এর দ্বারাই জীবের শ্বাস প্রশ্বাস চলছে । যে শ্বাস প্রশ্বাস বাইরে গতিশীল তাকে বহিঃপ্রাণায়াম এবং যা শরীরের ভেতরে চলে তাকে অন্তঃপ্রাণায়াম বলে । বেদে দু প্রকার প্রাণের কথা আছে । গৌণপ্রাণ ও মুখ্যপ্রাণ । শ্বাস প্রশ্বাস কে গৌণপ্রাণ এবং আত্মা বা চৈতন্যকে মুখ্যপ্রাণ বলে ।
ছান্দোগ্য উপনিষদে প্রাণকে ব্রহ্ম বলে উপাসনার কথা আছে । এক্ষেত্রে মুখ্য ও গৌণ দুই প্রাণই ব্রহ্ম ।
আবার কেনোপনিষদ বলছে 'স উ প্রাণস্য প্রাণ', অর্থাৎ ব্রহ্ম প্রাণের প্রাণ। শ্বাস প্রশ্বাস ক্রিয়াকে প্রাণন ক্রিয়া বলে । এই ক্রিয়া আত্মা কর্তৃক নিয়ন্ত্রিত । আত্মা আবার মূল শক্তি পরমাত্মা দ্বারা নিয়ন্ত্রিত । এই আত্মা তথা পরমাত্মা তথা ব্রহ্ম তথা বিশ্ব-চেতন শক্তিকে অনুভব করাই ব্রহ্ম বিহার সাধনার অন্তর্গত বিষয় ।
Comments
Post a Comment