ধীরা , যোগ, মুক্তি

   ' বিকারহেতৌ সতি বিকৃয়ন্তে
   যেষাং ন চেতাংসি ত্ত এব ধীরাঃ " ।।
-- বিকারের হেতু বর্তমান থাকলেও যাদের চিত্তবৃত্তিগুলি বিকারপ্রাপ্ত হয় না , তাদেরকে ধীর বলে।

' চেতঃ খলস্য বন্ধায় মুক্তয়ে চাত্মনো মতম্‌
গুনেষু সক্তং বন্ধায় রতং বা পুংসি মুক্তয়ে '
-- চিত্তই জীবের বন্ধন বা মুক্তির কারণ। চিত্ত বিষয়ে আসক্ত হলেই বন্ধন । অন্যথা তার মোচন বা মুক্তি।

'যোগ আধ্যাত্মিকঃ পুংসাং মতো নিঃ শ্রেয়সায় মে
অত্যন্তোপরতির্যত্র দুখস্য চ সুখস্য চ। '
-- কপিল মুনি তার মাতা দেবারতিকে ব্রহ্মজ্ঞান প্রদান করার সময় বললেন যে, যোগই হল সকলের শ্রেয়। কারন এতেই সুখ-দুখঃ উভয়েরই উপরতি হয়।

ব্রহ্ম হলেন মহান অব্যক্ত চৈতন্যসত্ত্বা।  ব্রহ্মজ্ঞান লাভ করতে হলে জড়জগত্‌ ছেড়ে চেতন জগতের সন্ধান করতে হবে।  ব্রহ্ম হলেন সত্‌, চিত্‌ এবং আনন্দ । তিনি সত্য , তাই সত্‌। তিনি চৈতন্যময়, তাই চিত্‌। তিনি আনন্দময়।  সাংখ্য এবং পাতঞ্জল দর্শন মতে যোগ অভ্যাস দ্বারা চেতন জগত্‌কে অনুধাবন করা সম্ভব।

যোগ অর্থ যুক্ত হওয়া। আসলে আমরা সকলেই ব্রহ্মের অংশ। বহির্মুখী মন আমাদের চেতনজগতকে ভুলিয়ে দিয়ে জড়জগতে লিপ্ত রেখেছে।  যোগ আমাদেরকে পুনরায় চেতন জগতের সাথে যুক্ত করে।

যোগের অংগ আটটি।
১। যম 
'অহিংসাসত্যাস্তেয় ব্রহ্মচর্যাপরিগ্রহাঃ যমাঃ '
 - অহিংসা - হিংসা না করা
- সত্য -
- অস্তেয় - চুরি না করা
- ব্রহ্মচর্য - ব্রহ্মে বিচরণ করা
- অপরিগ্রহ - গ্রহণ না করা

২। নিয়ম
 'শৌচ সন্তোষ তপ স্বাধ্যায় ঈশ্বরপ্রণিধানানি নিয়মাঃ'
- শৌচ - শুদ্ধাচার
- সন্তোষ - পরিতৃপ্তি
- তপঃ - তপস্যা
- স্বাধ্যায় - শাস্ত্রপাঠ
- ঈশ্বরপ্রণিধান - ঈষ্ট দেবতার ধ্যান

৩। আসন -
' স্থিরসুখমাসনম্‌'
সুখকর আসন ।

৪। প্রাণায়াম

৫। প্রত্যাহার 
 বহির্মুখী মনকে বহির্বিষয় ত্যাগ করানো।

৬। ধারণা - ' দেশবন্ধ চিত্তস্য ধারণা '
চিত্তকে বন্ধন করার নাম ধারণ করা। এই কাজকে বলে ধারণা।

৭। ধ্যান -
' তত্র প্রত্য্যৈকতানতা ধ্যানং '
ধারণাতে প্রত্যয় হলে তা হল ধ্যান।

৮। সমাধি -
'তদেবার্থমাত্রনির্ভাসা স্বরূপশূন্যমিব  সমাধিঃ '
  ধ্যান হতে হতে আত্ম বিস্মৃত হলে তা হল সমাধি।

  যোগ মানে শুধু রেচক-কুম্ভক বা meditation নয়। অনেকগুলি আচরণ । অতো সহজে বহির্মুখী মন অন্তর্মুখী হয় না।
  তবে একথা মনে রাখতে হবে যে 'যোগ' -ই একমাত্র পথ নয়। অনেক পথের একটি মাত্র। কালের নিয়মে কর্ম বন্ধন মুক্ত হলে জীব সত্যের সন্ধান পায়।  অজ্ঞান জীব সত্যের সন্ধান না পেয়ে সঞ্চিত - প্রারব্ধ কর্মের ঢেউয়ে জীবন সমুদ্রে ভেসে চলতে থাকে। কারোর যদি চেতন জগত্‌ (যা কিনা তার মধ্যেই আছে ) জাগ্রত হয়, সে তখন ব্রহ্মজ্ঞান লাভ করতে বা কর্ম বন্ধন থেকে মুক্ত হতে ছটফট করতে থাকে। যোগ সেই মুমুক্ষু ব্যাক্তিকে সত্যের সন্ধান পেতে ত্বরান্বিত করে। চিত্‌ জগতে রয়েছে সকল সত্যের জ্ঞান ।
( সহায়তা  - শ্রী জ্ঞানেন্দ্র নাথ মুখোপাধ্যায় 

Comments

Popular posts from this blog

কঠোপনিষদ ২০

উপনিষদ পর্ব 1

মহাভারত শ্লোক